জাকির হোসেনঃ কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পাশে বুড়িচংয়ের ময়নামতি এলাকায় বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড এর ময়নামতি রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয়টির অবস্থান। বাংলাদেশ বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের অধীন এই প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা ১৯৬২ সালে। ৫০ বিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত রেশম বীজাগার থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার রেশম গুটি পোকা, সামান্য কিছু রেশম সূতা উৎপাদনের পাশাপাশি উন্নত জাতের তুত গাছের চারা দেশের বিভিন্নস্থানে চাষের জন্য বিতরণ করলেও সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বর্তমানে খুড়িয়ে চলছে। এছাড়াও এখানে রয়েছে শতাধিক বিভিন্ন ধরণের ফলদ গাছ। প্রতিবছর কয়েক লক্ষাধিক টাকার ফল উৎপাদন হলেও অজ্ঞাত কারণে দরপত্রের মাধ্যমে নিজেরা ৮/১০ হাজার টাকায় সেগুলো ক্রয় কওে নিচ্ছে পছন্দেও লোকদেও নিয়ে। এছাড়াও এখানে রয়েছে ৩ টি পুকুর। অভিযোগ রয়েছে সে পুকুরগুলোও নিজেদেও লোকজনের মাধ্যমে স্বল্প টাকায় ইজারা নিচ্ছে। এতে প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতির সম্মুখিন হলেও ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হচ্ছে এখানকার কর্মরতরা হচ্ছেন লাভবান। এখানে রয়েছে সরকারী অপর্যাপ্ত অনুদান,তার উপর রয়েছে লোকবলের অভাব। একজন উপ-পরিচালকসহ ৩ জন রয়েছে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। এর বাইরে প্রতিদিন শুধুমাত্র তুত গাছের চারা পরিচর্যায় ৪/৫ জন শ্রমিক নিয়ে পুরো প্রতিষ্ঠানটির একাই দেখ ভালো করছেন অর্থসংকটে জর্জড়িত প্রতিষ্ঠানটির লোকজন।
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের এক পাশে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের কোলঘেষা ঝুমুর অন্য পাশে সমেষপুর গ্রামের মাঝামাঝি এই ময়নামতি রেশম প্রকল্পটির অবস্থান। ৫০ বিঘা ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত এতে রয়েছে ২০ বিঘা আয়তনের তুত গাছের চারা রোপনের জমি। এখানে উৎপাদিত রেশম বা তুত গাছের মধ্যে রয়েছে বিএম-৩, বিএম-৪, বিএম-৬, বিএম-১০, বিএম-১১ ছাড়াও উন্নতমানের স্থানীয় ও থাই প্রজাতির চারা। এই গাছের পাতা দিয়েই রেশম বা গুটি পোকার খাদ্য সরবরাহ করা হয়। বাকী ভূমিতে রয়েছে রাস্তা, ৩ টি মাঝারি মানের পুকুর, ফার্ম ম্যানেজারের কার্যালয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৫ টি আবাসিক ভবন, রেশম বা গুটি পোকা পালনের ৩’টি ঘর, রেশম সূতা তৈরীর একটি কারখানা, ল্যাবরেটরী, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি রাখার ঘর, ডরমেটরী, প্রশিক্ষনার্থীদের থাকার জন্য ৪০ বেডের আবাসিক বাসস্থান, হলরুম, ডাইনিং রুম ও ৪টি ভিআইপি আবাসিক রুমের একটি ঘর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দায়িত্বশীল সুত্র জানায়,বিগত সময়ে ময়নামতি রেশম প্রকল্পটিতে সারাদেশ থেকে প্রতি মাসে শত শত প্রশিক্ষনার্থী রেশম পালনের উপর প্রশিক্ষণ নিতে আসতো। পরবর্তীতে প্রশিক্ষনার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে রেশম গাছের চাষাবাদের সাথে গুটি পোকাও লালন পালন করতো। আর তাদেরকে তুত গাছ ও রেশমের ডিম সরবরাহ করতো ময়নামতি রেশম উন্নয়ন বোর্ড। এখানে বছরে সামান্য কিছু রেশম সূতাও উৎপাদন হয় । সূত্র জানায়, বিগত ২০০১ সালে এই প্রতিষ্ঠানটিকে বাংলাদেশ সিল্ক ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ১৫ বছরের জন্য লীজ দেওয়া হয়েছিল। তখনও প্রায় প্রতিদিন এখানে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে লোকজন এসে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতো। সুত্র জানায়, ২০১৬ সালে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে এটি আবারো বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে যায়। এরপর থেকে বিগত প্রায় ৭/৮ মাস এটার কার্যক্রম প্রায় ছিলনা। প্রতিষ্ঠানটির লোকবল ৮ জন থাকার কথা রয়েছে। তবে বর্তমানে একজন উপ-পরিচালক ছাড়া একজন ফার্ম ম্যানেজার ও একজন এমএলএস রয়েছেন। তাছাড়া বিশাল আয়তনের এই প্রতিষ্ঠানটিতে তুত গাছের চাড়া রোপন, পরিচর্যা, রেশম বা গুটি পোকা লালন-পালনে আরো কমপক্ষে অর্ধ শতাধিক শ্রমিকের প্রয়োজন হলেও সরকারী কোন বরাদ্দ না থাকায় দৈনিক ২’শ টাকা মুজুরীতে প্রতিদিন ৪/৫ জন নারী শ্রমিক দিয়ে তুত গাছের চারা ও গুটি পোকা পরিচর্যার কাজ চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সুত্র আরো জানায়, বিগত সময়ে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতিমাসে শত শত প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণ নিতে আসলেও বর্তমানে পূর্বের বাংলাদেশ সিল্ক ফাউন্ডেশনের এখানে কর্মরত এক কর্মকর্তার অসহযোগীতার কারণে এখন আর কেউ এখানে প্রশিক্ষণ নিতে আসছে না। সূত্রটি আরো জানায়, এখানকার ৪০ শয্যার ডরমেটরীতে প্রশিক্ষণার্থীদের থাকা বাবদ প্রতিষ্ঠানটির একটা উল্লেখ যোগ্য আয় হতো। সেটাও বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও এখানকার ৩ টি পুকুর, আম, জাম, কাঠাঁল, লিচু, নারিকেলসহ বিভিন্ন ফলের গাছ থেকেও একটা রাজস্ব আদায় হতো। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কর্তৃপক্ষ কোন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে নিজস্ব অফিসের সামনে দরপত্র ঝুলিয়ে সবার লোকচক্ষর আড়ালে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছেন। এতে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিবছর।
বর্তমানে এখানকার ৩টি পুকুর দু’বছর মেয়াদে মাত্র ৫০ হাজার টাকায় লীজ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে লোকবল না থাকায় প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৪ কোটি টাকা মূল্যমানের সরঞ্জামও অব্যবহৃত থাকার কারণে নস্ট হওয়ার উপক্রম। এর মাঝে রয়েছে ১৮টি ফ্রিজ। সুত্র আরো জানায়,এখানে রয়েছে ৬টি লিচু,৩০টি নারকেল,৩০ টি আম,১২ টি জাম,২৫ টি কাঠাঁল ছাড়াও অন্যান্য ফল গাছ রয়েছে। এসব গাছ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে নিজস্ব অফিস ছাড়া স্থানীয় ইউনিয়ন, পোষ্ট অফিস, সাহেবের বাজার কমিটি ও ভূমি অফিসে দরপত্র ঝুলিয়ে নিজেদের লোক দিয়ে দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন্ করছে। বিষয়গুলো জানতে প্রতিষ্ঠানটির উপ-পরিচালক কাঞ্চন বরণ দাসের সাথে কথা বললে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,এখানে সরকারী বরাদ্দ কমের পাশাপাশি লোকবলও কম। সবকিছুই নিয়মের মাঝে হচ্ছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এক’শ টাকার সুপারী বিক্রিরও সুযোগ নেই। এছাড়াও তিনি বলেন,এবছর ২৪ হাজার উৎপাদন হয়েছে।
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com