জাগোনিউজ২৪ঃ শতবর্ষ পার হয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলার ১৬টি সরকারি কলেজ। উচ্চ শিক্ষায় এসব কলেজ ৭০ ভাগ অবদান রাখছে। তাই এসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে মডেল কলেজ হিসেবে তৈরিতে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে অবকাঠামো উন্নয়ন, আধুনিক ও ঐতিহ্যবাহী করে গড়ে তোলা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
শতবর্ষী ১৬ কলেজের উন্নয়নে হাজার কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) করা হচ্ছে। সরেজমিন এসব কলেজ পরিদর্শন করতে তিনটি টিম কাজ করছে। টিমগুলো কলেজের সমস্যা, সংস্কারসহ একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। এরপর তা ডিপিপি আকারে মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দেবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরে উন্নয়ন ও পরিকল্পনা শাখা।
শতবর্ষী কলেজের নানা সমস্যা নিয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ওইসব কলেজের অধ্যক্ষদের নিয়ে সভা করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। সভায় অধ্যক্ষরা নিজ নিজ কলেজের নানা সমস্যার পাশাপাশি এগুলো সমাধানে বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। অধ্যক্ষদের প্রস্তাবগুলো সমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন করা হবে না কি আলাদা আলাদাভাবে করা হবে তা সরেজমিন পরিদর্শনের পর কমিটি প্রতিবেদন আকারে উপস্থাপন করবে। ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করা হবে। তবে একই কলেজের অবকাঠামো একেক ধরনের হওয়ায় কলেজের প্রস্তাব ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মাউশির উন্নয়ন ও পরিকল্পনা শাখার পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, শতবর্ষী কলেজগুলোর শিক্ষার মান বাড়াতে অবকাঠামোসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব কলেজ সরেজমিন পরিদর্শন করতে কয়েকটি টিমকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রত্যেক কলেজের চাহিদার বিপরীতে সরেজমিন পরিদর্শন টিম সেগুলো যাচাই-বাছাই করে তা সংযোজন-বিয়োজন করবেন।
তিনি আরও বলেন, এসব কলেজে কিছু উন্নয়ন কাজ সমন্বিতভাবে করা হবে, কিছু কাজ ওই কলেজের চাহিদা ও অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা করা হবে। কমিটি ইতোমধ্যে এসব কলেজ পরিদর্শন শুরু করেছে। তাদের রিপোর্ট পাওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের কাছে ডিপিপি আকারে পাঠানো হবে।
সূত্রে জানা গেছে, ১৬টি কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গবেষণা, আঞ্চলিক সংস্কৃতি, ইতিহাস বিষয়ে প্রাধান্য, অঞ্চলভিত্তিক কলেজে বিশেষ বিষয় চালু, উপকূলীয় এলাকার জন্য স্নাতক পর্যায়ে (অনার্স) ডিজেস্টার ম্যানেজমেন্ট, নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজে চারুকলা ও ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে সংস্কৃতি বিষয় খোলা হবে। এসব বিষয়ে বিষয় ভিত্তিক গবেষক নিয়োগ, তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর জন্য বদলি না করার সুপারিশ করা হবে। শিক্ষার্থীদের জীবনমান, নৈতিকতার বিষয়ে কাউন্সিলিং করার জন্য প্রতিটি কলেজে মাস্টার ট্রেইনার তৈরি করা হবে।
প্রত্যেক কলেজে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার নির্মাণ করা হবে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি ঐতিহাসিক বিষয়ের প্রামাণ্য চিত্র, মুরাল সেখানে তুলে ধরা হবে। যাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহজেই দেশপ্রেম জাগ্রত হয়। প্রতিটি কলেজ আধুনিক ই-লাইব্র্রেরি ও তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্প্রসারণ করা হবে। এসব লাইব্রেরিতে বিরল বই সরবরাহ করা হবে। পরিবেশবান্ধব কলেজ ক্যাম্পাস গড়ে তোলা হবে।
প্রতিটি কলেজে ১০০ বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ লাগানো হবে। ওপেন গ্যালারি করা হবে। সেখানে বসে ক্লাস, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান করার সুযোগ থাকবে। ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটানোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। শিক্ষর্থীদের সচেতন করতে অভিভাবক ও রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে কাউন্সিলিং করা হবে।
বর্তমানে অনেক কলেজে শিক্ষকদের থাকার ব্যবস্থা নেই। যে কারণে অনেক শিক্ষককে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। এজন্য প্রতিটি কলেজে শিক্ষকদের জন্য ডরমেটরি কাম রেস্ট হাউজ নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি কলেজে বহুতল পরীক্ষার হল নির্মাণ করা হবে। অমুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা হোস্টেল নির্মাণ করা হবে। ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ডিন নিয়োগ করা হবে।
এছাড়া কলেজে অধ্যক্ষদের প্রস্তাব থেকে আরও কিছু বিষয় সংযোজন করার প্রস্তাব করা হবে। এগুলো হলো- আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত হাইরাইজ বিল্ডিং নির্মাণ, পুরাতন ভবনগুলো ভেঙে সংস্কার করা, মেডিকেল সেন্টার স্থাপন, শ্রেণিকক্ষ আধুনিক মানের হিসেবে তৈরি করা, সকল বিভাগের জন্য মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, ক্যাম্পাসে ওয়াইফাই সুবিধা নিশ্চিত, বিদ্যমান হোস্টেলগুলোর পরিচর্যা, সংস্কার ও মেরামত করা, হোস্টেলের খাবারের মান উন্নত করা, বহুতল একাডেমিক ভবন কাম পরীক্ষার হল, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ৩০০ আসনবিশিষ্ট দুটি হোস্টেল নির্মাণ, একটি উন্নতমানের গ্যারেজ, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য একটি ডরমেটরি, ক্যাম্পাসকে সিসিটিভির আওতাভুক্ত করা, অটোমেশন লাইব্রেরি, আঞ্চলিক ঐতিহ্য রক্ষায় ‘সঙ্গীত’ বিভাগ চালু, উন্মুক্ত গবেষণা ইনস্টিটিউট, মুজিবনগর কর্ণার স্থাপন, গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকা, জার্নাল সংরক্ষণ, অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ করা, জিমনেশিয়াম স্থাপন ইত্যাদি।
এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, একেক কলেজের অবকাঠামো ও চাহিদা একেক ধরনের। তাই সরেজমিন রিপোর্ট পাওয়ার পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
১৮৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা কলেজে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৫ হাজার, ১৮৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত কবি নজরুল সরকারি কলেজে শিক্ষার্থী ২৫ হাজার, ১৯১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে শিক্ষার্থী রয়েছে ২৯ হাজার ২১১ জন, ১৮৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে শিক্ষার্থী রয়েছে ২২ হাজার ১৪৫ জন, ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম কলেজে ১৩ হাজার ২৯২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে, ১৮৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে শিক্ষার্থী রয়েছে চার হাজার ৫৮২ জন, ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী কলেজে শিক্ষার্থী রয়েছে ২৫ হাজার ৪০২ জন, ১৮৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এডওয়ার্ড কলেজে শিক্ষার্থী রয়েছে ১৯ হাজার ৪৪১ জন, শিক্ষক রয়েছে ১৬৭ জন, ১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত নড়াইল সরকারি কলেজে শিক্ষার্থী রয়েছে ছয় হাজার ৫১ জন, ১৯০২ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্রজলাল (বিএল) কলেজে শিক্ষাথী রয়েছে ২৬ হাজার ৯২৪ জন, ১৯১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত সরকারি পিসি কলেজে শিক্ষার্থী রয়েছে ১০ হাজার ২৯ জন, ১৮৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্রজমোহন (বিএম) কলেজে শিক্ষার্থী রয়েছে ২৬ হাজার ৯২৪ জন, ১৮৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজে শিক্ষার্থী রয়েছে ১২ হাজার ৮৭ জন, ১৯১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত কারমাইকেল কলেজে শিক্ষার্থী রয়েছে ১৮ হাজার ৮৭৯ জন এবং ১৯০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত আনন্দমোহন কলেজে শিক্ষার্থী রয়েছে ২৬ হাজার ৫১৮ জন।
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com