চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি সুফিয়া খাতুন নামের শত বছর বয়সী এক বৃদ্ধাকে অভাবের তাড়নায় তার মেয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ফেলে যান। বৃদ্ধার চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসে। কিন্তু তাকে কেউ সহায়তা না করলেও পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল ইসলাম খান ঘটনাস্থলে এসে সুফিয়া খাতুনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির পর উপজেলা প্রশাসন তার চিকিৎসার দেখভালের পাশাপাশি বয়স্ক ভাতা ও হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করেন তিনি। এখন শারীরিকভাবে কিছুটা সুস্থ সুফিয়া খাতুন। কিন্তু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির প্রায় চার মাস পরও সুফিয়াকে তার ছেলেমেয়ে কেউ নিতে আসেননি। করোনাভাইরাসের এই সংকটে তাকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগও পড়েছে বিপাকে।
সুফিয়ার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দাউদকান্দি ইউনিয়নের নছরুদ্দি গ্রামে তার বাড়ি। সুফিয়া খাতুনের স্বামী কালাই মিয়া প্রায় ২০ বছর আগে মারা গেছেন। পরিবারটির এক শতক জমির ওপরে একটা বসতঘর ছাড়া কিছুই ছিল না। সেটিও এখন আর নেই। একমাত্র ছেলে মোখলেছুর রহমান বর্তমানে বয়োবৃদ্ধ। তিনি বসতভিটার নিজের অংশটি পাঁচ বছর আগে বিক্রি করে দেন একমাত্র বোন মিনা আক্তারের কাছে। এরপর থেকে মোখলেছুর রহমান থাকেন তার মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে।
মোখলেছুর রহমান বলেন, অভাব-অনটন দেখে ৯ বছর আগে তার স্ত্রী সৌদি আরবে চলে গেছেন। এখন আর তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না। তিনি বাসে চানাচুর বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। থাকেন মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে। এমন পরিস্থিতিতে মাকে নিজের কাছে রাখতে পারেননি। সুফিয়ার একমাত্র মেয়ে মিনাও এখন বয়োবৃদ্ধা। তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন উপজেলার গঙ্গাপ্রসাদ গ্রামে। বাপের ভিটা বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। তার কাছেই এতদিন ছিলেন সুফিয়া। অভাবের কারণে তিনি তার মাকে মহাসড়কের পাশে ফেলে যান।
মিনা বলেন, বয়স হয়ে যাওয়ায় তিনি নিজে কোনো কাজ করতে পারেন না। তার স্বামী আবদুল মান্নানও বৃদ্ধ। কোনো উপার্জন করতে পারেন না। এক ছেলের আয়ে কোনোমতে সংসার চলে। মাকে কীভাবে রাখবেন?
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহীনুর আলম বলেন, গত ১৭ ফেব্রয়ারি মহাসড়কের পাশে ওই বৃদ্ধাকে ফেলে যাওয়ার পর দিন থেকে সুফিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। তিনি শারীরিকভাবে এখন সুস্থ হলেও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। করোনা সংক্রমণকালে বৃদ্ধা সুফিয়া খাতুনের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘ সময় ভর্তি থাকাটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া তিনি চোখে দেখেন না। কানেও কম শোনেন। তাকে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মেয়ে ফেলে যাওয়ায় প্রথমে তিনি কিছু বুঝে উঠতে পারেননি। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও আপন কাউকে কাছে না পেয়ে চিৎকার শুরু করেন। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল ইসলাম খান ঘটনাস্থলে যান। তিনি সুফিয়াকে পর দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির পর উপজেলা প্রশাসন চিকিৎসার পাশাপাশি অন্য বন্দোবস্তও করে দিয়েছেন।
রোববার (১৪ জুন) ইউএনও কামরুল ইসলাম খান বলেন, সুফিয়া খাতুনের ছেলে মোখলেছুর রহমানকে খুঁজে বের করা হয়। পরে তিনি মায়ের দায়িত্ব নেয়ার কথা বললেও নিতে পারবে না বলে জানান। এছাড়া সুফিয়া খাতুনের কাছের অন্য কোনো আত্মীয়-স্বজনও নেই। বৃদ্ধার দায়িত্ব নেয়ার মতো বিশ্বস্ত লোকও পাওয়া যাচ্ছে না।
ইউএনও আরও বলেন, এই মুহূর্তে ওই বৃদ্ধাকে চট্টগ্রাম বা কুমিল্লা বৃদ্ধাশ্রমে দেয়া যাচ্ছে না। ঢাকার আগারগাঁও সরকারি বৃদ্ধাশ্রমে তাকে নেয়ার বিষয়ে কথা বলা হয়েছে। তবে এর আগে স্বেচ্ছায় কেউ তার দায়িত্ব নিতে চাইলে দেয়া হবে। সুফিয়া বেগমকে বয়স্ক ভাতার কার্ড ও হুইল চেয়ার দেয়া হয়েছে। স্বেচ্ছায় কেউ দায়িত্ব নিতে চাইলে এক লাখ টাকায় একটি ঘর নির্মাণ করে দেয়াসহ অন্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে।
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com