করোনাকালীন সময়ে কুমিল্লার প্রায় ১১হাজার মসজিদের প্রতিটিতে সরকার পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছে। এ টাকা নিয়ে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় জটিলতা তৈরি হয়েছে। সরকারি টাকা মসজিদ ফান্ডে যাবে নাকি ইমাম, মুয়াজ্জিন পাবেন। তা নিয়ে ইমাম ও মসজিদ কমিটির মধ্যে তর্ক, বিতর্কের খবর পাওয়া গেছে। একাধিক মসজিদে ইমামকে বাদ দেওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে উপ-পরিচালক বলছেন এ টাকা ইমাম, মুয়াজ্জিনদের জন্য দেওয়া হয়েছে।
সূত্রমতে, গত ২০ মে ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা) মহাপরিচালক অনিস মাহমুদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মসজিদ সমূহের আর্থিক অস্বচ্ছলতা দূরীকরণে প্রতি মসজিদে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। করোনাকালীন সময়ে মসজিদের আয় হ্রাস পেয়েছে। যা দ্বারা মসজিদের দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
বরুড়ার ওড্ডা গ্রামের সর্দার বাড়ি মসজিদের ইমাম মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, এ মসজিদে জুমার নামাজ হয় না। এ জন্য মসজিদ তালিকায় নেই। আমি টাকা পাইনি।
কুমিল্লা শহরতলী দিশাবন্দ পুরাতন মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. রুহুল আমিন জানান, পাঁচ হাজার টাকা ইমাম হিসাবে আমাকে দেওয়া হয়েছে।
হাফেজ মো. নজরুল ইসলাম জানান, এ টাকা নিয়ে বহু ঝামেলা হয়েছে। এক পর্যায়ে আমি বলেছি, এ টাকা আমার লাগবে না। গত শুক্রবার নামাজ শেষে মসজিদে দরবার হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আড়াই হাজার টাকা মসজিদ ফান্ডে জমা হয়েছে। ১৫শ’ টাকা ইমাম সাহেবকে দেওয়া হয়েছে। মুয়াজ্জিন হিসাবে আমাকে এক হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।
সদর দক্ষিণের একজন ইমাম জানান, এ টাকা নিয়ে বহু কথা হয়েছে। মসজিদ কমিটির সাথে তর্ক বিতর্কও হয়েছে। কয়েক হাজার টাকার জন্য চাকরি হারাতে চাই না। এ টাকা দিয়ে মসজিদের বিদুৎ বিল দেওয়া হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে, বরুড়ার একাধিক মসজিদের ইমাম, সদর দক্ষিণের বারপাড়া ইউনিয়নের তিনজন ইমাম, নাঙ্গলকোট মৌকারা, পেরিয়া ইউনিয়নের ইমাম, বরুড়ার আড্ডা ইউনিয়ন, দেবিদ্বারের রাজামেহের ইউনিয়নে একই অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নাঙ্গলকোট পেরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মিজানুর রহমান জানান, পেরিয়ার ৮নং ওয়ার্ডে মোট সাতটা জামে মসজিদ। তিনটা মসজিদ টাকা পেয়েছে, বাকী চারটা এখনো পায়নি। টাকা বন্টনের বিষয়ে শুক্রবার আমরা বসবো।
ইফা নাঙ্গলকোট উপজেলা সুপারভাইজার জুলফিকার হাসান মুরাদ জানান, জুমার মসজিদ, ওয়াক্তিয়া মসজিদ উভয়ে এ টাকা পাবে। নাঙ্গলকোটে প্রথম ধাপে ৯০৮ টি মসজিদে টাকা দেওয়া হয়েছে। এ টাকা মসজিদের জন্য নয়, প্রধানমন্ত্রী এ টাকা ইমামদের জন্য দিয়েছেন। তবে নাঙ্গলকোটে টাকা নিয়ে ইমামদের থেকে কোন অভিযোগ পাইনি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন কুমিল্লার জেলা উপ-পরিচালক সরকার সরোয়ার আলম বলেন, কুমিল্লার ১০ হাজার ৯শ ৯২টি মসজিদে এ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। যে সকল মসজিদ বাদ পড়েছে, তারাও এ টাকা পাবে। জুমার মসজিদ, ওয়াক্তিয়া মসজিদ উভয়ে এ সরকারি অনুদান পাবে। কুমিল্লায় পাঁচ কোটি ৪৯ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা পেয়েছি, যার মধ্যে পাঁচ কোটি ৩৪ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা বিতরণ হয়েছে। এ টাকা ইমাম মুয়াজ্জিন দুইজনে পাবেন। যে সকল মসজিদ বাদ পড়েছে, নতুন তালিকায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আর এ টাকা মসজিদ ফান্ডে নয়। ইমাম, মুয়াজ্জিন সাহেবদের জন্য দেওয়া হয়েছে। ইফা মহাপরিচালকের বিজ্ঞপ্তি বিষয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, কথাটি উল্লেখ আছে ঠিক। এ বিষয়ে আমাদের মাঝেও কথা হয়েছে। অন্য সকল জেলায়ও একই অবস্থা। আজও (মঙ্গলবার) ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মহাপরিচালক মহোদয়ের সাথে কথা হয়েছে। স্যার বলেছেন, এ টাকা ইমাম সাহেব, মুয়াজ্জিন সাহেবদের জন্য। কারণ রমজানে তাদের ইনকাম বেশী হয়। করোনার কারণে এ বছরের চিত্র ভিন্ন। সরকার এ জন্য ইমাম মুয়াজ্জিন সাহেবদের জন্য এ বরাদ্দ দিয়েছেন।
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com