কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (কুমেক) প্রতিষ্ঠার পর ২৮ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে আইসিইউ ইউনিট স্থাপনের জন্য। গত ৩ জুন হাসপাতালটিতে ১০ শয্যার আইসিইউসহ ১৫৪ শয্যার করোনা ইউনিটের চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
কুমিল্লা সদর আসনের এমপি মুক্তিযোদ্ধা ও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহারের প্রচেষ্টা ও কুমেক হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক ডা. মজিবুর রহমানের সহযোগিতায় হাসপাতালটিতে আইসিইউ ও করোনা ইউনিট চালু করা হয়।
যে আইসিইউ ইউনিটের জন্য কুমিল্লাবাসীকে দীর্ঘ ২৮ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে, সেই আইসিইউ ইউনিটের সেবা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। করোনা আক্রান্ত মরণাপন্ন রোগীরা সেখানে একদিকে যেমন ভালো সেবা পান না। অপরদিকে সিসি ক্যামেরা না থাকায় এ ইউনিটে দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন কি-না তাও তদারকি করতে পারছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে শুধুমাত্র কুমেক হাসপাতালের এ ইউনিটেই মারা গেছেন ভর্তি হওয়া ৭২ জন রোগীর মধ্যে ৩৯ জন রোগী। আর সব মিলিয়ে গত ১৫ দিনে করোনা ও করোনার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা করতে আসা মোট ৯২ জন রোগী এখানে মারা যায়। আর এ সময় চিকিৎসা না নিয়ে পালিয়ে যায় ৬ জন।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. সাজেদা বেগম জানান, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকভাবে করোনা রোগীদের জন্য চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয় গত ৩ জুন। গত ১৫ দিনে করোনার পৃথক ৩টি ইউনিটে মোট ৪০২ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন।
এর মধ্যে করোনা পজিটিভ ওয়ার্ডে মোট ভর্তি হয় ১০৪ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ৫৪ জন। সুস্থ হয়ে বাাড়ি ফিরেছেন ৩৫ জন। আর মারা গেছেন ১১ জন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে পালিয়েছেন ৩ জন, রোগীর স্বজনেরা দায়িত্ব নিয়ে বাড়ি নিয়ে যান ১ জনকে।
করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে গত ১৫ দিনে রোগী ভর্তি হন ২২৬ জন। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন ৪৬ জন, সুস্থ হয়ে বাাড়ি ফিরেছেন ১২৭ জন, আর মারা গেছেন ৪২ জন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে পালিয়ে গেছেন ৩ জন, রোগীর স্বজনেরা দায়িত্ব নিয়ে বাড়ি নিয়ে গেছেন ৫ জনকে, রেফার করা হয় ১ জনকে আর ট্রান্সফার করা হয় ২ জনকে ।
আইসিইউ ইউনিটে গত ১৫ দিনে মোট রোগী ভর্তি হয়েছেন ৭২ জন। এর মধ্যে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৮ জন, বাড়ি ফিরেছেন ২০ জন আর মারা গেছেন ৩৯ জন। রোগীর স্বজনেরা নিজেরা চিকিৎসা দিবে বলে নিয়ে গেছেন ৪ জনকে আর রেফার করা হয়েছে ১ জনকে।
কুমেক হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ও আইসোলেশন ওয়ার্ডে রোগীরা চিকিৎসা পেলেও সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে না আইসিইউতে থাকা রোগীরা।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিশা ইউপির বসন্তপুর গ্রামের শফিকুর রহমানের ছেলে শাহাদাৎ হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, কুমেকের আইসিইউ ওয়ার্ডের ডাক্তার, নার্সরা রোগীকে সঠিক চিকিৎসা দিচ্ছে না। রোগী দেখে তারা দৌড়ে পালায়। রোগীর স্বজনদের নিজে অক্সিজেন-মাস্ক লাগাতে হচ্ছে। অনেক অনুরোধ করেও তাদেরকে দিয়ে কোনো কাজ করানো যাচ্ছে না।
তিনি আরো জানান, গত ১৪ জুন তার বাবা শফিকুর রহমান করোনা নিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হন। ভর্তি হওয়ার একদিন পর তার বাবার অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে আইসিইউতে নেয়া হয়। সেখানে নেয়ার পর সেখানকার ডাক্তার, নার্সরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। তাদেরকে অনেকে বলেও কোন কাজ করানো যাচ্ছে না। তিনি নিজে তার বাবাকে মাস্ক পরিয়েছেন। তাকে সেখানে থাকতে দেয়া হয়নি। তাকে আইসিইউ থেকে বের করে দেয়া হয়। সেখানে তার বাবার অক্সিজেন মাস্ক খুলে ফেললে তার বাবার মৃত্যু হয়। তার দাবি, ডাক্তার নার্স উপস্থিত না থাকার কারণে এবং আইসিইউতে সঠিকভাবে যত্ম না নেয়ার কারণে তার বাবার মৃত্যু হয়েছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুজিবুর রহমান জানান, আইসিইউতে যারা দায়িত্ব পালন করছে তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে কিনা তা বোঝা যাচ্ছে না। আমরা সিসি ক্যামেরা লাগানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু কেউ ভয়ে কাজ করতে চায় না। সিসি ক্যামেরা থাকলে বিষয়টি ভালোভাবে মনিটরিং করা যেত। আইসিইউতে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
সূত্রঃ ডেইলি বাংলাদেশ
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com