কুমিল্লায় ভয়াবহ হারে বাড়তে থাকা নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াচ্ছে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকেও। হাসপাতালে স্থাপিত করোনা ওয়ার্ডে ঢুকছেন রোগীর স্বজন ও বহিরাগতরা। পৌঁছে দিচ্ছেন ওষুধ-খাবার। এমনকি সেখানে করোনার সংক্রমণ-উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া রোগীর মরদেহও বয়ে নিতে হচ্ছে স্বজনদের। এগিয়ে আসছেন না হাসপাতালের কেউ। এতে করে কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা সংক্রমণ। যা দিন দিন বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
করোনা ওয়ার্ডে রোগীদের স্বজন ও সাধারণ মানুষের অবাধ যাতায়াতের ফলে কমিউনিটিতে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার সাথে একমত পোষণ করেছেন কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মজিবুর রহমান।
তিনি বলেন, জনবল না থাকার কারণে তারা যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারছি না। চল্লিশ জনের মতো চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মী করোনায় আক্রান্ত। তাই কোভিড ওয়ার্ডে সাধারণ মানুষ ঢুকে যাওয়া রোধ করা যাচ্ছে না।
‘তবে যেহেতু করোনা সংক্রমণের বিষয়টি ছোঁয়াচে। তাই কুমেকের করোনা ওয়ার্ডে সাধারণ মানুষের প্রবেশের কারণে কভিড সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।’ যোগ করেন তিনি।
গেলো কয়েকদিন সরেজমিনে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, জেলা ও জেলার বাইরে থেকে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ করোনার সংক্রমণ ও উপসর্গ নিয়ে কভিড ওয়ার্ডে চিকিৎসার জন্য আসেন। কিন্তু হাসপাতালে আসার পরও রোগীর যাবতীয় বিষয় দেখভাল করছেন স্বজনরা। হাসপাতালের কাউকেই তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে দেখা যায় না। এমনও চিত্র চোখে পড়েছে, হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্তরা দূরে দাঁড়িয়ে দেখছেন আর রোগীর স্বজনরা এ স্পর্শকাতর এলাকায় কাজ করছেন। এমনকি কভিড ওয়ার্ডে মারা যাওয়া ব্যক্তির মরদেহও সাধারণ মৃতের মতো একটি ট্রলিতে করে কোনো প্রকার স্বাস্থ্যসুরক্ষা ছাড়াই টেনে নিয়ে যাচ্ছেন স্বজনরা।
এ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে কভিড ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীর মেডিক্যালের সামনের দোকানে গিয়ে আড্ডা দেয়ার খবরও পাওয়া গেছে। সম্প্রতি কভিড ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে এসে আইসিইউ সেবা না পেয়ে সেখানে ভাঙচুরও চালিয়েছেন রোগীর স্বজনরা। পরে সেখানে বেঁধে যায় হুলুস্থুল কাণ্ড। গত সোমবার (১৫ জুন) সকালে ঘটে এ ঘটনা।
জানা যায়, তাৎক্ষণিক আইসিইউ সুবিধা না পাওয়ায় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একটি ভবনে স্থাপিত কভিড-১৯ হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে রোগীর স্বজনেরা হাসপাতালের দরজা-জানালা ভাঙচুর ও অক্সিজেনের লাইন ছিড়ে হুলুস্থুল কাণ্ড বাধায়। পরে হাসপাতালের অন্য রোগীর স্বজনেরা তিনজনকে পুলিশে সোপর্দ করলেও পরে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।
সেসময় হাসপাতালের পরিচালক চিকিৎসক মো. মুজিবুর রহমান বলেন, আইসিইউতে শয্যা আছে ১০টি। সেগুলোতে আগে থেকেই রোগী ভর্তি আছে। সেদিন চৌদ্দগ্রামের এক রোগী ও তার স্বজনেরা পিপিই পরে হাসপাতালের আইসিইউতে ঢুকে পড়েন। হাসপাতালের কর্মচারী ও চিকিৎসকেরা মনে করেছিলেন, কভিড-১৯ হাসপাতালের লোকজনই তাদের এখানে ঢুকতে দিয়েছেন। কিন্তু রোগী মারা যাওয়ার পর তারা ভাঙচুর শুরু করে। পরে ৩ জনকে আটক করা হলেও তাদের বাবা বাবা মারা যাওয়ায় মানবিক কারণে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৩ জুন কুমিল্লা মেডিক্যালে কভিড-১৯ হাসপাতালের উদ্বোধন হয়। ১৫৪ শয্যার এ হাসপাতালের মধ্যে ১৩৪ শয্যায় কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ করা আছে। ১০ শয্যার আইসিইউ এবং ১০ শয্যার রোগীকে সিলিন্ডারে অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা আছে।
সূত্রঃ কালের কণ্ঠ
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com