কুমিল্লার নবগঠিত লালমাই উপজেলার একটি মাদরাসায় ৪ শিশু বলাৎকারের ঘটনায় এলাকা জুড়ে তোলপাড় চলছে। সম্প্রতি পেরুল উত্তর ইউনিয়নের জামমুড়া ছালেহিয়া হাফেজিয়া মাদরাসায় এ ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে গত ১২ আগস্ট লালমাই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত মাদরাসার শিক্ষক হাফেজ সোলাইমান একই উপজেলার শাকেরা গ্রামের পান দোকানদার আব্দুর রবের ছেলে।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পহেলা আগস্ট জামমুড়া ছালেহিয়া হাফেজিয়া মাদরাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষক সোলাইমানের বিরুদ্ধে ৪ শিশু শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। প্রতিকূল পরিস্থিতি দেখে সাময়িক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে শিক্ষক সোলাইমানকে অব্যাহতি দেন মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা এসএম লিয়াকত হোসেন। এ ঘটনার পর অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দেয়। পরবর্তীতে সামাজিক সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করতে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি অভিযুক্ত শিক্ষক সোলাইমানকে তলব করলে গত ১২ আগস্ট সন্ধ্যায় অজ্ঞাত কয়েকজন যুবককে সাথে নিয়ে তিনি মাদরাসায় প্রবেশ করেন। অজ্ঞাত যুবকদেরকে সঙ্গে আনার কারণ জানতে চাইলে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতির উপর ক্ষিপ্ত হয় শিক্ষক সোলাইমান।
এসময় স্থানীয় যুবকরা প্রতিবাদ করলে সোলাইমান ও তার সঙ্গে আসা যুবকরা আনোয়ার হোসেন ও সাইফুল ইসলাম মোহন নামের দুই যুবককে বেধড়ক মারধর করে এবং আরিফুল হোসেন সৈকতের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। অবস্থা বেগতিক দেখে ওইদিন রাতেই লালমাই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা এসএম লিয়াকত হোসেন।
এ বিষয়ে জামমুড়া ছালেহিয়া হাফেজিয়া মাদরাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা এসএম লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘প্রাথমিক ভাবে নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের মুখে ঘটনাটি শুনে এলাকায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি দেখে আমি অভিযুক্ত শিক্ষক সোলাইমানকে অব্যাহতি দিয়েছি। পরবর্তীতে সামাজিক ভাবে বিষয়টি মীমাংসা করার লক্ষ্যে তাকে ডাকা হলে তিনি তার সঙ্গে কয়েকজন যুবককে নিয়ে এসে আমাদের স্থানীয় যুবকদেরকে মারধর করে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত করে ফেলেছেন। তার সমর্থকরা আমাকেও বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দিয়েছেন। আমি লালমাই থানায় অভিযোগ করেছি। আশা করছি, তাকে বিচারের আওতায় আনা হবে।’
এদিকে জামমুড়া ছালেহিয়া হাফেজিয়া মাদরাসায় শিশু বলাৎকারের ঘটনা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে। শিক্ষক সোলাইমানের সমর্থকরা দাবি করছেন এটি পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। এ বিষয়ে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওহিদুর রহমান বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ দিন ধরে সোলাইমান হুজুরকে দিয়ে খুব সুন্দর ভাবে মাদরাসাটি পরিচালনা করে আসছি। হুজুর এরকম কাজ কখনোই করতে পারেনা। এটা হুজুরকে বিদায় করার ষড়যন্ত্র।’
এ ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত মাদরাসার শিক্ষক সোলাইমান আত্মগোপনে রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার তাকে মোবাইল ফোনে কল করেও বক্তব্য নেয়া যায়নি। মাদরাসা পরিচালনা কমিটি ও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে হাফেজ সোলাইমানের অপকর্মের বর্ণনা দিয়েছেন নির্যাতিত ৪ শিক্ষার্থী। নিজের অপকর্ম ঢাকতে হাফেজ সোলাইমান আত্মগোপনে থেকে জামমুড়া গ্রামের নিজের সমর্থকদেরকে দিয়ে শিশু বলাৎকারের ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এদিকে হাফেজ সোলাইমানের নিজ এলাকা শাকেরার একাধিক সূত্র জানায়, এর আগেও সোলাইমানের চরিত্রগত ত্রুটি প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে এলাকায় উশৃঙ্খল আচরণের জন্য বেশ কয়েকবার সামাজিক ভাবেও হেনস্থা হয়েছেন।
এ বিষয়ে লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আইয়ুব বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে এলাকায় পুলিশ পাঠিয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com