নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে আলোচনায় রয়েছে কুমিল্লা উত্তর ও দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ। গত এক মাসে বেশ কয়েকটি অপরাধমূলক কর্মকান্ড ঘটিয়েছে জেলা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। খোদ আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নেতৃবৃন্দ এসব কর্মকান্ড নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। এদিকে প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।
গত ১০ আগস্ট কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও তিতাস উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন ফকিরের ইয়াবা সেবনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ওইদিন দিবাগত রাত ১২টায় চান্দিনা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তার ফেসবুক আইডিতে কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন ফকিরের ইয়াবা সেবনের একটি ভিডিও ও ছবি আপলোড দেন। পরে কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা ছবিসহ ভিডিও নিজ আইডি থেকে শেয়ার করে প্রতিবাদ ও তার পদত্যাগ দাবি করেন। যদিও এ ঘটনায় কোনো ধরনের সাংগঠনিক ব্যবস্থা কিংবা বিচারের মুখোমুখি হননি এ নেতা।
এদিকে লালামাইয়ের চেঙ্গাহাটা চৌমুহনীতে ওষুধ ফার্মেসির ভিতরে নয় বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জয়নাল আবেদিন জয়কে জুতাপেটা করা হয়। জুতাপেটার ৪১ সেকেন্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়ে। এই ভিডিও ব্যক্তিগত ওয়ালে আপলোড দিয়ে জেলার ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ওই ছাত্রলীগ নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের দাবি জানায়। ২৫ আগস্ট মঙ্গলবার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। জয়ের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কিনা, তার খবর পাওয়া যায়নি।
গত ১৯জুলাই রবিবার রাতে মাদক পাচারের সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনা বাস স্টেশন এলাকা থেকে কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক এমরান হোসেন সরকারকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। এর পরদিন ২০জুলাই আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। আটকের সময় সময় তার কাছ থেকে ৫০ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। অভিযানের সময় তার আরও এক সহযোগী পালিয়ে যায়।
এর পূর্বে সাধারণ ছুটি চলাকালীন সময়ে চাল চুরির অভিযোগে জেলার একাধিক ছাত্রলীগ নেতাকে অর্থদন্ড প্রদান করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসব ঘটনায় কয়জন ছাত্রলীগ নেতা সংগঠন থেকে বহিষ্কার হয়েছে।
নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ায় জেলা ছাত্রলীগের দুটি অংশের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে দুর্বল সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা নিয়েও।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন রুবেল জানান, কোনো ব্যক্তির লালসার দায় ছাত্রলীগ নিতে পারে না। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শিশুর পরিবার যদি আইনের আশ্রয় নেয়, আমরা সহায়তা করব। কিন্তু আমরা প্রশ্নটা অন্য জায়গায়, সে শুধুমাত্র ছাত্রলীগ করে না। রোটারী ক্লাব, একটি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা, মানবাধিকার কর্মী এবং সাংবাদিক পরিচয় বহন ছাড়াও আরও অন্তত ডজনখানেক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে সে সম্পৃক্ত। তাহলে সব দায় ছাত্রলীগের হবে কেন?
কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু কায়সার অনিক জানান, আমরা সরাসরি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অধীনস্ত। আমাদের আদর, শাসন, সোহাগ সবগুলো করার এখতিয়ার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের। উত্তরের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন ফকিরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অপর ছাত্রলীগ নেতা এমরান হোসেন সরকারের বিষয়ে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তাকে বহিষ্কার করেছে।
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com