চট্টগ্রাম বিভাগের সর্ববৃহৎ শাক-সবজির বাজার কুমিল্লার নিমসার। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন কুমিল্লার বুড়িচং অংশে অবস্থিত এ বাজারে দৈনিক গড়ে ১৫ কোটি টাকার শাক-সবজি বিক্রি হয়। মাসে বিক্রি হয় ৪৫০ কোটি টাকার শাক-সবজি। কুমিল্লা ছাড়াও আরও আট জেলার খুচরা বিক্রেতারা শাক-সবজি সংগ্রহ করেন এ বাজার থেকে।
আড়তদারেরা জানান, প্রতিটি আড়তে দৈনিক গড়ে ছয়লাখ টাকার শাক-সবজি বিক্রি হয়। সে হিসেবে পাইকারি আড়তগুলোতে দৈনিক ৯কোটি টাকার শাক-সবজি বিক্রি হয়। বাকি ছয় কোটি টাকা বিক্রি হয় খুচরা ও মাছ বাজারে। কেউ ১০লাখ টাকার সবজি আবার কেউ একলাখ টাকার সবজিও বিক্রি করেন। যাদের অভিজ্ঞতা, পরিচিতি ও পুঁজি বেশি-তাদের বিক্রিও বেশি।
বাজারটিতে গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কের সোয়া এক কিলোমিটার জুড়ে ট্রাকের সারি। ট্রাক থেকে শাক-সবজি নামাচ্ছেন আড়তদারেরা। আবার খুচরা বিক্রেতারা মালামাল ক্রয় করে তুলছেন ট্রাকে। আড়তে জায়গা না পেয়ে কেউ কেউ মহাসড়কের ওপরে শাক-সবজি বিক্রি করছেন। আবার অনেকে ট্রাক থেকে পণ্য না নামিয়ে সরাসরি বিক্রি করছেন। খুচরা বিক্রেতারা স্বাভাবিক নিয়মে আড়ৎ থেকে সবজি ক্রয় করলেও শাক বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ট্রাক থেকে নামানোর আগেই। বৃষ্টির কারণে পর্যাপ্ত শাক সরবরাহ করতে না পারায় এবং আড়ৎ কর্দমাক্ত থাকার কারণে ট্রাকের মধ্যে রেখেই শাক বিক্রি করছেন পাইকাররা।
তিন অংশে বিভক্ত বাজারটির এক অংশে আড়ৎ, অপর অংশে খুচরা শাক-সবজি, ফলমূল এবং অন্য অংশে আলু, মসলার পাইকারি এবং মুরগি ও মাছের খুচরা বাজার বসে। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টায় বসে পাইকারি বাজার। চলে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত। রাত ১০টার পর জমজমাট হয়ে ওঠে পাইকারি বাজারের কেনাকাটা। সকাল ৭টার পর আড়ৎগুলো খালি হতে থাকে। তখন খুচরা বাজারে বিক্রি শুরু হয়। খুচরা বাজারে কেনাকাটা চলে বেলা ১১টা পর্যন্ত। বাজারে প্রতিদিন পাইকারি মালামাল বিক্রির দেড় শতাধিক আড়ৎ ও খুচরার চার শতাধিক শাক-সবজির দোকান বসে। বাজারের ইজারাদারদের অধীনে তিন শতাধিক লোকবল রয়েছে, যারা বাজার তদারকি ও খাজনা আদায় করে থাকেন।
ব্যবসায়ীদের সূত্রমতে, আড়তে যেসব শাক-সবজি বিক্রি হয় তার বেশিরভাগ আসে রাজশাহী, বগুড়া, মাগুরা, ঠাকুরগাঁও, শেরপুর, সিরাজগঞ্জ, যশোর, জামালপুর ও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে। কিছুসংখ্যক মালামাল আসে কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে। এ বাজার থেকে মালামাল ক্রয় করেন কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের খুচরা বিক্রেতারা। এছাড়া ঢাকার কিছু কিছু খুচরা বিক্রেতারাও পাইকারিতে পণ্য ক্রয় করেন নিমসার থেকে। আড়তদারদের বেশিরভাগ কুমিল্লার স্থানীয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, লাগাতার বৃষ্টির কারণে শাক-সবজির সরবরাহ কম। তবে চাহিদা ব্যাপক, দামও বেশি। দাম বেশি হওয়াতে মালামাল সরবরাহ কম হলেও বাজারের দৈনিক গড় বিক্রিতে তেমন কোনো তারতম্য হচ্ছে না। বাজারে পাইকারি বিক্রির শীর্ষে রয়েছে কচুর ছড়া, আলু, শসা ও করলা। সম্প্রতি দৈনিক গড়ে এক হাজার টন ছড়া, আটশ’ টন শসা, আড়াই হাজার টন আলু ও ছয়শ’ টন করলা বিক্রি হচ্ছে এ বাজারে। মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০টন।
আড়তদাররা জানান, শীত ঘনিয়ে আসলে বাজারে তরকারির সরবরাহ প্রচুর বাড়বে। টাকার অঙ্কে বেশি না হলেও পরিমাণে বর্তমান সময়ের চেয়ে প্রায় তিনগুণ শাক-সবজি বেশি বিক্রি হবে। ইতিমধ্যে কুমিল্লার গোমতী নদী তীরবর্তী অঞ্চলে চাষকৃত মুলা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি বাজারে আসতে শুরু করেছে। বেড়েছে স্থানীয় কৃষকদের আনাগোনাও।
কুমিল্লার আড়তদার আব্দুল মালেক কচুর ছড়াসহ অন্যান্য শাক-সবজি বিক্রি করেন। তিনি জানান, প্রতিদিন ১৫০টনের মতো ছড়া বিক্রি হয় তার। অন্যান্য সবজি বিক্রি করেন ২০টনের মতো। দৈনিক যে পরিমাণ লাভ হয়, তাতে বেশ সন্তুষ্ট তিনি।
সোহেল মিয়া নামে কুমিল্লার অপর এক আড়তদার জানান, দৈনিক ৭০-৮০ টন শসা বিক্রি করেন তিনি। এখন পাইকারিতে প্রতি কেজি শসা ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, চাহিদা অনুপাতে শসার সরবরাহ অনেক কম। শীতে প্রতিদিন ১২০টন শসা বিক্রির ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।
বগুড়ার আড়তদারর আবদুর রহিম। বিক্রি করেন মরিচ ও গাজর। তিনি জানান, দৈনিক ১৪০ মণ মরিচ ও ৫০মণ গাজর বিক্রি হয় তার।
রাজু এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শাহাবুদ্দিন জানান,‘১৫ বছর ধরে নিমসার বাজারে টমেটো ও অন্যান্য কাঁচা তরকারি বিক্রি করছেন তিনি। প্রতিদিন ৪৫০মণের মতো টমেটো বিক্রি করেন এ আড়তদার।
আলুর আড়তদার নিমসারের স্থানীয় আরিফ হোসেন বলেন,‘ প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার বস্তা আলু বিক্রি করি। প্রতি বস্তায় ৬০ কেজি আলু থাকে।’
খুচরা বিক্রেতা বাচ্চু মিয়া দীর্ঘদিন ধরে লালশাক ও ডাটাশাক বিক্রি করেন নিমসার কাঁচাবাজারে। এবার বৃষ্টিতে ভালো ফলন হয়নি তার। তবে দাম নিয়ে সন্তুষ্ট তিনি।
আবুল বাশার নামে অপর এক খুচরা বিক্রেতা জানান, নিমসার থেকে শাক-সবজি সংগ্রহ করে কুমিল্লার বাদশা মিয়া বাজারে বিক্রি করেন তিনি। মনমতো পণ্য পাচ্ছেন না, দামও চড়া।
নিমসার বাজারের ইজারাদার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন,‘বৃষ্টির কারণে বাজারে প্রবেশে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আমরা সমস্যা সমাধানে কাজ করবো।’
বুড়িচং উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাম্মৎ সাবিনা ইয়াছমিন জানান,‘নিমসার বাজার এই অঞ্চলের বড় বাজার। বাজারটিতে জলাবদ্ধতার কিছু সমস্যা রয়েছে। আমরা সমস্যা নিরসনের জন্য কাজ করবো।’
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com