কুমিল্লা নগরীর ফুটপাতে স্থাপিত রং-বেরঙের টাইলসগুলো ভেঙে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অনেক স্থানে ফুটপাতে টাইলসের চিহ্নও দেখা যায় না। টাইলসগুলো ভেঙে দেবে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ গর্তের সৃষ্টি হয়েছে এবং বিনষ্ট হচ্ছে ফুটপাতের এসএস পাইপগুলোও। এছাড়া বেশির ভাগ স্থানে ফুটপাতের মধ্যখানে রয়েছে বিভিন্ন জাতের গাছ, বৈদ্যুতিক খুঁটি, বিলবোর্ড, ফ্যাস্টুন। এছাড়া দখলের কারণেও পথচারীদের ফুটপাতে চলাচল কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
কুসিক সূত্রে ও সরজমিন ঘুরে জানা যায়, বিশ্বব্যাংক ও জাইকার অর্থায়নে ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নগরীর চর্থা এলাকার নোয়াব বাড়ি চৌমুহনী হতে টমছম ব্রিজ পর্যন্ত ফুটপাত এবং সেখান (নোয়াব বাড়ি) থেকে নোয়াগাঁও হয়ে বেলতলী ব্রিজ পর্যন্ত রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের কাজ পায় দুটি প্রতিষ্ঠান। তারা ২০১৯ সালে এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করে ৮ কোটি ৩৪ লাখ ২১ হাজার ৯২১ টাকার বিল তুলে নেয়। কিন্তু নির্মাণের দুই মাসের মধ্যে ঐ সালের ১৮ এপ্রিল নোয়াগাঁও এলাকার ৪৭ মিটার রিটেইনিং ওয়াল ধসে খালে পড়ে যায়। পরে তা সংস্কার করা হয়।
এদিকে নির্মাণের কিছুদিন যেতে না যেতেই নোয়াব বাড়ি হতে টমছম ব্রিজ পর্যন্ত ফুটপাতের বিভিন্ন স্থানের রঙ-বেরঙের টাইলসগুলোও ভেঙে বিনষ্ট হতে থাকে। বর্তমানে এসব টাইলস দেবে গিয়ে ফুটপাতে ঝুঁকিপূর্ণ বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। নগরীর চর্থা এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল গাফ্ফার, শিক্ষক মোতালেব হোসেন, টমছম ব্রিজ এলাকার মাহবুব আলম, সাইয়েদ আহমেদসহ কয়েক জন অভিযোগ করেছেন, ‘ফুটপাতে নিম্নমানের কাজ হয়েছে। এ বিষয়ে এলাকাবাসী অভিযোগ করলেও কোনো কাজ হয়নি। সে কারণে কাজ শেষ না হতেই নগরীর অনেক স্থানে ফুটপাতের টাইলসগুলো পথচারীদের পায়ের চাপে ভাঙতে শুরু করে। এখন ফুটপাতের টাইলস ভেঙে বড় বড় গর্তের কারণে চলাচল করা যাচ্ছে না।’ নগরীর মনোহরপুর এলাকার বশিরুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেনসহ অন্তত ১২ জন বলেন, ‘সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে পথচারীদের চলাচলের জন্য রঙিন টাইলস দিয়ে ফুটপাত নির্মাণ করা হয়েছিল। সৌন্দর্যবর্ধনের কাজও হয়েছিল। এ কাজগুলো সবার নজর কেড়েছিল। কিন্তু ফুটপাতের মধ্যখানের বড় বড় গাছ, বৈদ্যুতিক খুঁটি, বিল বোর্ড অপসারণ করা হয়নি। অপরিকল্পিত ও যেনতেনভাবে কাজ হওয়ায় ফুটপাতের টাইলস্ ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে।’
কুমিল্লা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মো. সহিদ উল্লাহ বলেন, ‘প্রকৃত ঠিকাদার কাজ করেন না, হাত বদল হয়ে কাজ করেন অন্য ঠিকাদার। কাজের তদারকিও তেমন দেখা যায় না। বর্তমানে নগরীর টমছম ব্রিজ-কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ সড়কের ফুটপাতের টাইলসের কাজ চলছে। এখানেও নিম্নমানের কাজের অভিযোগ উঠেছে। কাজের গুণগত মান ঠিক না হলে কিছুদিন পরই মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হবে—এটাই স্বাভাবিক।’
কুসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শেখ মো. নুরুল্লাহ বলেন, ‘ফুটপাতের অনেক স্থানে বড় বড় গাছ, কালভার্ট, গ্যাস, বিদ্যুত্ ও পানির লাইন রয়েছে। এগুলো সরানো সম্ভব না।’
কুসিক মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘নগরীর সব স্থানে নয়, কিছু কিছু স্থানে ফুটপাতের টাইলস ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি সত্য। এসব স্থানের ফুটপাতের টাইলসের নিচের মাটি বড় বড় ইঁদুরে সরিয়ে ফেলেছে। মাটিগুলো রিটেইনিং ওয়ালের ছিদ্র দিয়ে ড্রেনে পড়ে যাওয়ায় কোথাও হয়তো পথচারীদের পায়ের চাপে টাইলস ভেঙে গেছে কিংবা মাটি ধসে টাইলস নিচে পড়েছে। তবে আমরা বসে নেই। ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে খোয়া ফেলে পথচারীদের চলাচলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়া নগরীর নোয়াব বাড়ি হতে টমছম ব্রিজ পর্যন্ত ফুটপাতের পাঁচটি স্থান নির্ধারণ করেছি, এসব স্থানের সংস্কারের জন্য ১৪ লক্ষাধিক টাকার টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। আগামী জুলাই মাসে কাজ শুরু হবে।’
সূত্রঃ ইত্তেফাক
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com