রাজধানীর ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জব্দ হওয়া ৯ হাজার পিস ইয়াবা কম মূল্যে কুমিল্লার বিভিন্ন মাদককারবারিদের কাছ থেকে সংগ্রহের পর একত্রিত করেছিলেন গ্রেপ্তারকৃত সাদ্দাম হোসেন। মাদকের বিভিন্ন কারবারিদের কাছ থেকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে কিনে তা সৌদি আরবে পাচারের পর অধিক মূল্যে বিক্রির উদ্দেশ্য ছিল তার।
বুধবার (২৮ জুলাই) ভোর ৬টার দিকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পাচারকারী শনাক্ত করে বিমানবন্দরের ডিপারচার গ্লাস গেইট থেকে ইয়াবাসহ সৌদি আরবগামী যাত্রী সাদ্দামকে গ্রেপ্তার করে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। এদিন সকাল ১১টার দিকে বিমানবন্দরের কেনপি-১ এ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জিয়াউল হক।
গ্রেপ্তারকৃত সাদ্দাম বিমানবন্দর থেকে সালাম এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে প্রথমে ওমানের মাস্কাট এবং কানেন্টিং ফ্লাইটে করে সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে যাওয়ার কথা ছিলো। সকাল ৯টা ২০মিনিটে তার ফ্লাইট ছিল। তবে, তিনি ভোর ৬টার দিকে বিমানবন্দরে আসেন।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জিয়াউল হক বলেন, সন্দেহভাজন হিসেবে সাদ্দামকে প্রথমে জিজ্ঞাসা করা হয়। এসময় তিনি ইয়াবা থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে, তার দেহ ও ব্যাগ তল্লাশি করে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে রাখা অবস্থায় ৮ হাজার ৯৫০ পিস ইয়াবার বড়ি উদ্ধার করা হয়। তার ব্যাগ খুলে ওপরে অনেক কাপড় দেখা যায়। তার নিচে সেলাই করা ব্যাগের একটি কাভার ছিল। ওই কাভারের ভেতরে কার্বন পেপার ও স্কস্টেপ মোড়ানো অবস্থায় এসব ইয়ারা পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, সাদ্দামকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পারি, তিনি এই ইয়াবাগুলো ২০০-৩০০ টাকা করে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিলেন। এগুলো যদি তিনি সৌদি আরবে নিয়ে যেতে পারতেন, তবে প্রতি পিস এক থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি করতেন।
জিজ্ঞাসাবাদে আসামি আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃত সাদ্দামের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার কোটবাড়ি এলাকায়। এসব ইয়াবা কুমিল্লার এক ব্যক্তির কাছ থেকে নিয়েছিলেন। সেখানে ওই চক্রটি তাকে সৌদি আরবে যাওয়ার টিকিট বা ভিসা করে দিয়েছে।
জানা গেছে, এই ইয়াবাগুলো বিক্রির পর তিনিও একটি লভ্যাংশ পেতেন। ইয়াবাগুলো নিয়ে সৌদি আরবের দাম্মামের এক প্রবাসীর কাছে হস্তান্তর করার কথা ছিল।
সাদ্দামকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা ইয়াবা পাচারচক্রের সঙ্গে জড়িত বেশকিছু সদস্যের নাম পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান জিয়াউল হক।
ইয়াবাপাচার তার এটাই প্রথম নয় উল্লেখ করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউল হক বলেন, আমরা প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি। ২০২০ সালে সাদ্দাম ইয়াবা পাচারের সময় পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলেন। সেই মামলায় তিনি এখন জামিনে রয়েছেন। এরই মধ্যে ইয়াবার বড় এই চালানটা তিনি সৌদি আরবে পাচার করতে যাচ্ছিলেন। তিনি এ পথে নতুন নয়। বিমানবন্দরে অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত স্ক্যানাররা আছেন। আমাদের চেকিংয়ে যদিও তিনি পার হতে পারতেন তবে, স্ক্যানিংয়ে গিয়ে ধরা পড়ে যেতো। তবে আমরা আগেই তাকে ধরে ফেলেছি।
সৌদি আরবে এসব ইয়াবার গ্রাহক কারা বলে জানতে পেরেছেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সৌদি আরবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা ইয়াবাসেবী রয়েছেন তারা এবং কিছু সৌদি আরবের নাগরিকরাও এখন ইয়াবা সেবন করছেন।
বিমানবন্দর দিয়ে মাদককারবারি চক্রগুলো প্রতিনিয়ত কী ইয়াবা পাচারের চেষ্টা করছে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাদককারবারিরা একটি নতুন ট্রেইন শুরু করেছে। অতিরিক্ত লোভের আশায় ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইটগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে তারা ইয়াবা পাচারের চেষ্টা করছেন। তবে, আমাদের এখান দিয়ে গেলে বিমানবন্দরের স্ক্যানিংয়ে অবশ্যই ধরা পড়বে।
সূত্রঃ আরটিভি
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com