সাংবাদিক মহিউদ্দিনকে গুলি করার এক মিনিট আগে পলাশের মোবাইলে কল করে রাজু

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার সীমান্ত এলাকার হায়দ্রাবাদে সাংবাদিক মহিউদ্দিন সরকার নাঈমকে গুলি করার এক মিনিট আগে পলাশের মোবাইলে কল দিয়ে কথা বলে রাজু। হত্যার কয়েকদিন আগে মহিউদ্দিন রাজুর ছবি দিয়ে ফেসবুকে মাদক ব্যবসায়ী লিখে একটি স্ট্যাটাস দেয়। এর জের ধরেই কৌশলে হত্যার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এ ঘটনায় মহিউদ্দিনের মা নাজমা বেগম বাদী হয়ে বিষ্ণুপুর এলাকার রাজুকে প্রধান আসামি করে তিনজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত পরিচয় আরও পাঁচ থেকে ছয়জনকে আসামি করে বুড়িচং থানায় মামলা করেন। ঘটনার একদিনের মাথায় বৃহস্পতিবার রাতে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয় ।তারা হলেন মো’ ফরহাদ মৃধা (৩৮), মোঃ পলাশ মিয়া (৩৪),নুরু মিয়া ও সুজন মিয়াকে গ্রেফতার করে বুড়িচং থানার পুলিশ। এ তথ্য নিশ্চিত করে ওসি আলমগীর হাসান।

তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে বুড়িচং থানার ওসি তদন্ত মাকসুদ আলম শুক্রবার দুপুরে বলেন, “সাংবাদিক মহিউদ্দিন, ফরহাদ ও পলাশ একই এলাকার বাসিন্দা ও পূর্বপরিচিত। পলাশ তার মোটরসাইকেলে করে মহিউদ্দিনকে সীমান্ত এলাকায় নিয়ে যায়। তাদের সঙ্গে ফরহাদও ছিলেন।” গুলি চলাকালীন মোটরসাইকেল রেখেই পালিয়ে যায় পলাশ ও ফরহাদ প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

তবে পলাশ গ্রেপ্তারের আগে একটি স্বাক্ষাৎকারে বলেছেন ,মহিউদ্দিনের সাথে দেখা হয় ওইদিন দেড়টার দিকে। তারপর ঘুরাঘুরি সীমান্ত হায়দ্রাবাদ এলাকায় যাওয়া হয় তখন সাথে ছিলো মনির। তারা একটি দোকানে বসে কয়েকজনকে কল দেয় মহিউদ্দিন। ঠিক তখনেই একটি ছেলে এসে বলে ‘সাংবাদিক কেডা সাংবাদিক?সাংবাদিকরে মারবে রাজু ভাই ৩০-৪০ পোলাপাইন আইতাছে। এর মধ্যেই তারা এসে এক মিনিটের মধ্যে মহিউদ্দিনকে দুইটি গুলি করেছে। পিস্তল যখন আমার দিকে ধরেছে তখন আমি কোনোমতে দৌড়ে পালিয়ে এসেছি।

হায়দ্রাবাদ এলাকার জসিম উদ্দিন দুলাল শুক্রবার বিকেলে প্রতিনিধিকে জানান,ওই দিনের রাতে সাড়ে নয়টার দিকে তারাবী নামাজ পড়ে বাসায় এসেছি। ঘটনারস্থল থেকে ২০ গজের মধ্যে আমার বাড়ি। বাড়িতে আসার সাথে সাথেই বিকট আওয়াজ। তখনেই বের হয়ে থেকে একটি ছেলে আমার পাশ দিয়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছে।

ছেলেটাকে আমি চিনি নাই। পিলারের কাছে এসে দেখি একটি ছেলে আহত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে। তখন আমিসহ বিজিবি’র সহযোগীতায় দুইজন যুবক দিয়ে হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে তিনি যতটুকু এলাকা থেকে জেনেছে, পূর্বপরিকল্পিত ভাবেই তাকে মারা হয়েছে। এ ঘটনার সাথে জড়িত রাজুর নাম শুনেছি। এই ছেলেটাকে এখানে আসতে আরো অনেকবার দেখেছি।

ওসি আরও দাবি করেন, হত্যাকাণ্ডে নুরু ও সুজন সহযোগিতা করে। তারা আসামিদের পালাতে সুযোগ করে দেয়। এর আগে ১৩ এপ্রিল বুধবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের হায়দ্রাবাদ (নগরে) সাংবাদিক মহিউদ্দিনকে এলোপাতাড়ি গুলি করে হত্যা করা হয়। এতে প্রধান আসামি করা হয় ব্রাহ্মণপাড়া ও বুড়িচংয়ের ভারত সীমান্তের শীর্ষ মাদক ও চোরাকারবারি রাজুকে। জেলার আদর্শ সদর উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রামের সাদেক মিয়ার ছেলে রাজুর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অস্ত্র, মাদক, চোরাচালানের মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

নিহত মহিউদ্দিন পাশের ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের অলুয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মোশারফ হোসেন সরকারের ছেলে ছিলেন। তিনি আগে আনন্দ টেলিভিশনের ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা প্রতিনিধি ছিলেন। এছাড়া দৈনিক কুমিল্লার ডাক নামে স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে স্টাফ রিপোর্টার পদেও কাজ করেছেন তিনি।

শুক্রবার দুপুরে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সোহান সরকার সাংবাদিকদের জানান, গ্রেপ্তার চারজনকে আদালতে পাঠানো হচ্ছে। শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের সামনে বুড়িচংয়ে মাদক কারবারীদের গুলিতে নিহত সাংবাদিক মহিউদ্দিন সরকার নাঈম হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্দমুলক শাস্তির দাবীতে বুড়িচং প্রেসক্লাব ও কুমিল্লা ফটো সাংবাদিক ফোরামের উদ্যোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আরো পড়ুন