কুমিল্লায় একেবারে শেষে ঘোষণা করা যে চার কেন্দ্রের ভোট যোগ হওয়ার পর নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত অল্প ভোটে জিতেছেন, তার প্রতিটি কেন্দ্রের ফল নিউজবাংলার হাতে এসেছে।
প্রতিটি কেন্দ্রেই প্রার্থীদের এজেন্টদের কাছে আগেই ফল তুলে দেয়া হয়েছিল এবং পরে সেগুলো প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা পাঠান রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে। কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সইসহ ফলাফলের সঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তার ঘোষণা করা ফলে কোনো পার্থক্য নেই।
পরাজিত প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর প্রধান নির্বাচন সমন্বয়ক নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, তারা কেন্দ্র থেকেই সেই ফল পেয়েছেন।
গত বুধবার কুমিল্লায় ভোট হয় ১০৫টি কেন্দ্রে। এর মধ্যে ৫৪টিতে জয় পায় নৌকা। ৫০টিতে জয় পায় মনিরুল হক সাক্কুর টেবিল ঘড়ি আর একটিতে জয় হয় নিজামউদ্দিন কায়সারের ঘোড়া মার্কা।
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ১০১টি কেন্দ্রে সাক্কু যখন পাঁচ শতাধিক ভোটে এগিয়ে ছিলেন, তখনও যে চারটি কেন্দ্রের ফলাফল আসতে বাকি, তার মধ্যে একটি নৌকার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। একটিতে কোনো একক দলের প্রভাব নেই। বাকি দুটিতে সাধারণত বিএনপির প্রার্থীরাই জিতে থাকেন, তবে এবারের সমীকরণে ছিলেন নিজামউদ্দিন কায়সার।
শেষ যে চারটি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা করা হয়েছে, তার মধ্যে ভিক্টোরিয়া কলেজ কেন্দ্রে বরাবর ভালো ব্যবধানে জয় পায় আওয়ামী লীগ।
শালবন বিহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আলাদা করে কোনো দলের প্রভাব নেই। একেকবার একেক প্রার্থী জেতেন।
দিশাবন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি কেন্দ্র। বিএনপি নেতা মনিরুল হক চৌধুরীর প্রভাবিত এলাকা। বেশির ভাগ সময় বিএনপির প্রার্থীরাই জিতেছেন।
এটি সদর দক্ষিণের একটি কেন্দ্র। এবার সদর দক্ষিণের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভোট পেয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে পদত্যাগ করে ভোটে দাঁড়ানো নিজামউদ্দিন কায়সার। মূলত তিনি ভোট কাটার কারণেই সাক্কু এই দুটি কেন্দ্রে হেরে গেছেন।
দুই প্রধান প্রার্থীর যে কেউ জিততে পারেন, এই পরিস্থিতিতে ফলাফল ঘোষণার একেবারে শেষ দিকে কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কক্ষে শুরু হয় হট্টগোল। নৌকা ও ঘড়ি প্রতীকের সমর্থকদের মধ্যে হাঙ্গামার কারণে মিনিট বিশেক ফল ঘোষণা স্থগিত থাকে। এরপর চারটি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা হওয়ার পর ৩৪৩ ভোটে জয় পায় নৌকা।
তাৎক্ষণিকভাবে সাক্কু অভিযোগ করেন, ফল ঘোষণা স্থগিত করে রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী ফোনে ওপর মহলের সঙ্গে কথা বলে তার জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন। তিনি আইনি পদক্ষেপ নেবেন।
তবে ভোটের পর দুই দিন সাক্কু বা তার এজেন্টের পক্ষ থেকে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তুতির খবর মেলেনি, বরং সাক্কু এখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়াইয়ের প্রস্তুতির কথা বলছেন।
সেই চার কেন্দ্রে কোন প্রার্থী কত ভোট পেলেন
আওয়ামী লীগ প্রভাবিত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ হাজার ৮৭ জন। সেখানে নৌকা নিয়ে আরফানুল হক রিফাত পেয়েছেন ৮৫৩ ভোট, ঘড়ি নিয়ে সাক্কুর পক্ষে পড়েছে ৪০৮ ভোট এবং নিজামউদ্দিন কায়সার ১৫৭ ভোট পেয়েছেন।
এই কেন্দ্রে রিফাত ব্যবধান কমিয়ে ফেলেন ৪৪৫ ভোট।
গোটা নির্বাচনে ৫৮ শতাংশ ভোট পড়লেও এই কেন্দ্রে এর চেয়ে কম ভোটাররা ভোট দিতে আসেন। সেখানে ভোট পড়ে ৪৬ দশমিক ৮১ শতাংশ।
২৪ নম্বর ওয়ার্ডের শালবন বিহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার ছিলেন ২ হাজার ১৫৩ জন। ভোট পড়ে ১ হাজার ৪০৫টি। এর মধ্যে দুটি ভোটকে বাতিল করা হয়। ভোটের হার ৬৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
এখানে নৌকা নিয়ে রিফাত পেয়েছেন ৬৫৬ ভোট, সাক্কুর ঘড়িতে পড়েছে ৩২৬ ভোট এবং কায়সারের ঘোড়ায় পড়েছে ৩০৮ ভোট।
অর্থাৎ এই কেন্দ্রে নৌকা বেশি পেয়েছে ৩৩০ ভোট, যা ভোটের ব্যবধান ঘুচিয়ে রিফাতকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করেছে।
এই কেন্দ্রে কায়সারের কারণেই মূলত সাক্কু বড় ব্যবধানে হেরেছেন। বিএনপিপন্থিদের ভোটের বেশির ভাগ অংশই পেয়েছেন তিনি।
বাকি দুই কেন্দ্রের মধ্যে ২০ নম্বর ওয়ার্ডের দিশাবন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের একটিতে ভোটার ছিলেন ১ হাজার ৫৯৪ জন। এদের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১ হাজার ১০২ জন। বাতিল হয়েছে দুটি ভোট। ওই কেন্দ্রে শতকরা ভোট পড়ে ৬৯ দশমিক ২৬ শতাংশ।
এই ভোটের মধ্যে নৌকা পেয়েছে ৪১৩টি, সাক্কু পেয়েছেন ৩৭৮টি আর কায়সার পেয়েছেন ২৫৬টি।
স্পষ্টতই বিএনপিপন্থিদের ভোট দুই ভাগ হয়ে যাওয়ায় নৌকার জয় দেখেছে এই কেন্দ্রটি। সাক্কুর চেয়ে রিফাত বেশি পেয়েছেন ৩৫ ভোট। অন্যদিকে কায়সার আড়াই শরও বেশি ভোট নষ্ট করেছেন সাক্কুর।
দিশাবন্দেই আরেক কেন্দ্রে মোট ভোটার ১ হাজার ৬৩৯ জন। এর মধ্যে ভোট পড়েছে ১ হাাজর ২১২টি। ভোটের হার ৬৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
এই ভোটের মধ্যে নৌকা পেয়েছে ৫২৫টি, সাক্কুর ঘড়িতে পড়েছে ৩৬৭টি আর কায়সারের ঘোড়ায় পড়েছে ২৩৬ ভোট।
ঘড়ির তুলনায় নৌকা বেশি পেয়েছে ১৫৮ ভোট। এখানেও বিএনপিপন্থিদের ভোট এক বাক্সে পড়লে অতীতে জয়ের ধারাবাহিকতা দেখা যেত।
কী বলছেন সাক্কুর সমন্বয়ক
শেষে ঘোষণা করা চার কেন্দ্রের ফলের বিষয়ে সাক্কুর নির্বাচনি সমন্বয়ক কবির মজুমদার বলেন, ‘সব কেন্দ্রেই আমাদের এজেন্ট ছিল। আমরা ফলাফল বুঝে পেয়েছি। সেখানে কোনো সমস্যা ছিল না।’
সেই কেন্দ্রগুলোতে সাক্কুর এজেন্টদের নাম দিতে পারেননি জনাব মজুমদার। ফলে তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার আপনাদের বিস্তারিত জানাব।’
তবে শুক্রবার যোগাযোগ করা হলে আরও এক দিন সময় নেন তিনি।
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com