যত্রতত্র রেলপথে অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের কারণে কুমিল্লায় বাড়ছে প্রাণহানি। শুধু সরকারি হিসেবেই কুমিল্লার ১২০ কিলোমিটার এলাকায় শতাধিক অবৈধ লেভেল ক্রসিং রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এ সংখ্যা আরো কয়েক গুণ বেশি বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এসব অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের কারণে প্রাণহানিও বাড়ছে। গত সাড়ে পাঁচ বছরে রেল পথের কুমিল্লা অঞ্চলে প্রাণহানি ঘটেছে ৩৩৪ জন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে কুমিল্লা জেলায় রেলপথ রয়েছে প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে লাকসাম থেকে আখাউড়া-ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলরুটের ডাবল লাইন নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। লাকসাম থেকে আখাউড়া ৭২ কিলোমিটার রেলপথে বৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা ১৪টি, সেখানে অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা ৬৫টি। তবে এরই মধ্যে ২০টি লেভেল ক্রসিং নতুন করে বৈধ করা হচ্ছে। এছাড়াও লাকসাম-চাঁদপুর রেলপথে ২৬টি অবৈধ লেভেল ক্রসিং রয়েছে, বৈধ আছে মাত্র ২০টি। কিছু বৈধ করার কাজ চলছে। জেলার লাকসাম থেকে নোয়াখালী রেলপথে বৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা ২০টি এবং অবৈধ ২৭টি। সেখানে বৈধ করার কাজ চলছে ১৬টি।
সরেজমিনে রেল সড়কের বেশ কয়েকটি বৈধ ও অবৈধ লেভেল ক্রসিং এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে ঝুঁকিপূর্ণ ক্রসিংগুলোর দুই পাশের সড়কে কোথাও স্পিড ব্রেকার নেই। ট্রেন আসার আগে রেলওয়ে কর্মীরা অনেক স্থানে লোহার গেটবারের পরিবর্তে বাঁশ ফেলে গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করলেও এসব বাঁশ অতিক্রম করেই চালকরা লাইন পার হতে চান। এতে অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের পাশাপাশি বৈধ লেভেল ক্রসিং এলাকায়ও দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব কারণে বৈধ ও অবৈধ লেভেল ক্রসিং এবং রেল সড়কে নানা কারণে গত সাড়ে পাঁচ বছরে পৃথক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেছে গাড়ির চালক-যাত্রী ও পথচারীসহ ৩৩৪ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের গত ছয় মাসে জেলায় ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৪৭ জন। চলতি বছরের গত ৯ মার্চ ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর এলাকায় একটি লেভেল ক্রসিংয়ের অদূরে অবৈধভাবে রেল সড়ক অতিক্রম করতে গিয়ে মীম আক্তার, রীমা আক্তার, তাসফিয়া আক্তার নামের তিন শিশু স্কুলছাত্রী নিহত হয়।
লাকসাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন খন্দকার বলেন, এ রেলওয়ে থানার অধিভুক্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার গঙ্গাসাগর রেল স্টেশন থেকে ফেনীর ফাজিলপুর রেলওয়ে স্টেশন এবং কুমিল্লার লাকসাম থেকে চাঁদপুর ও লাকসাম থেকে নোয়াখালী রুট। তাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরে এই এলাকায় দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪৭ জন। এর আগে এসব রেল সড়কে অবৈধ লেভেল ক্রসিং অতিক্রমসহ নানা কারণে ২০১৭ সালে ৭৪ জন, ২০১৮ সালে ৬৮ জন, ২০১৯ সালে ৬৬ জন, ২০২০ সালে ৩৭ জন, ২০২১ সালে ৪২ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তিনি আরো বলেন, সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাবে ট্রেনে কাটা পড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটছে।
কুমিল্লা রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) লিয়াকত আলী মজুমদার বলেন, স্থানীয়রা নিজেদের প্রয়োজনে রেলওয়ের অনুমোদন ছাড়াই ইচ্ছেমতো রেললাইনের ওপর দিয়ে লেভেল ক্রসিং তৈরি করে নেয়। এতে দুর্ঘটনা বাড়ছে।
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com