প্রতিবন্ধকতার কাছে হেরে যাচ্ছে যোগ্যতা। স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণি, সান্ধ্যকালীন এমবিএ কোর্স করা সত্ত্বেও চাকরি পাচ্ছেন না কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান। একাধিক যোগ্যতা থাকলেও বিভিন্ন চাকরির মৌখিক পরীক্ষা পর্যন্ত গিয়ে শারীরিক সমস্যার কারণে প্রতিবারই খালি হাতে ফিরতে হয় তাকে।
সাইদুরের বয়স এখন ৩০। জন্মের ছয় মাস বয়সে টাইফয়েডে আক্রান্ত হন তিন। এরপর থেকেই অচল হয়ে পড়ে তার দু'পা ও হাত। এছাড়া সেলিবারি পালস ডিসঅর্ডারের কারণে হাতও অচল তার। দু'পা ও হাত অচলের কারণে সমাজের নানা বিরুপ প্রতিবন্ধকতা ও বৈষম্য মোবাবিলা করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মানবসম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে এমবিএ পরীক্ষা দিয়েছেন ২০২২ সালে। তবে রাইটিং অ্যাসিস্ট্যান্ট ছাড়া পরীক্ষা দিতে অক্ষম সাইদুর। চাকরি দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো রাইটিং অ্যাসিস্ট্যান্ট না দেওয়ায় চাকরিতে আবেদন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ সাইদুরের স্বপ্ন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালীন বাবাকে হারান সাইদুর। বাবা মো. জিল্লুর রহমান মোল্লা ছিলেন শিক্ষক। বাবার পেনশনের টাকায় চলে সাইদুরের পড়ালেখার খরচ এবং ভরণপোষণ। কিন্তু সীমিত পেনশনের টাকায় তিন ভাই ও দুই বোনের ভরণপোষণ মেটানো সম্ভব হচ্ছে না পরিবারের। উচ্চ শিক্ষার পর এখন আর পরিবারের বোঝা হয়ে থাকতে পারছে না সাইদুর।
সাইদুরের বাড়ি কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার পৌরসভা নিউমার্কেট এলাকায়। বতর্মানে থাকনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরুল হলে। রিয়াজ উদ্দিন পাইলট হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং সুজাত আলী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করা সাইদুর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগে স্নাতকে ৩.১৪ এবং স্নাতকোত্তরে ৩.২১ সিজিপিএ নিয়ে সফলতার সঙ্গে শেষ করেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবন।
পড়ালেখার পাশাপাশি আরও অনেক এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিসেও নিজেকে সমৃদ্ধ করেছেন সাইদুর। ডেইলি এশিয়ান এইজ এবং বাংলাদেশ অবজারভারে প্রকাশিত হয়েছে তার লেখা ৪টি আর্টিকেল। এছাড়াও কুমিল্লা পলিটেকনিক থেকে কম্পিউটার কোর্স এবং আইইএলটিএস করেও নিজেকে করেছেন সমৃদ্ধ।
রাইজিংবিডির সংবাদদাতার কাছে কান্না জড়িত কণ্ঠে সাইদুর রহমান বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে নানা বাধা ও প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছি। শুধুমাত্র মনের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। বাবা মারা যাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে একটা চাকরির জন্য অনেক জায়গায় গেছি কিন্তু কেউ চাকুরি দেয়নি। তাই এবার এমবিএ শেষ করলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার চাকরি না হওয়ার অন্যতম কারণ শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় রাইটিং অ্যাসিস্ট্যান্ট দেওয়ার কথা বললে ওরা বলে এভাবে পরীক্ষা দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। তবে যদি এ ব্যাপারে পরীক্ষার জন্য কোনো নীতিমালা হয় তাহলে আপনাকে জানানো হবে। আমার চাকরি প্রয়োজন। আমি পরিবারের বোঝা হয়ে আর থাকতে পারছি না।’
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আহছান উল্ল্যহ বলেন, ‘সাইদুর মেধাবী একজন শিক্ষার্থী। অদ্যম ইচ্ছা ও আগ্রহের কারণে সে আজ এ পর্যন্ত পৌঁছেছে। তার মাঝে অনেক সম্ভবনা রয়েছে। রাষ্ট্রীয় কোটা থাকলেও অহবেলার শিকার হচ্ছে অনেকেই। আমি মনে করি সাইদুরের মনোবল অন্য স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে যতো সুযোগ -সুবিধা রয়েছে তা সাইদুরকে দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু দুঃজনক হলেও সত্য, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শারীরিক সমস্যার করণে তাকে নিতে চাই না। কোনো সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যদি এগিয়ে আসে সাহিদুর তার মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে স্বাভাবিকদের মতো কর্মক্ষেত্রে ভালো কিছু করতে পারবে এটাই আমার বিশ্বাস।
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com