কুমিল্লার সেই ইকবাল এখন ৩১ মামলার আসামি

কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রেখে অবমাননার ঘটনায় আলোচিত ইকবাল হোসেন এখন ৩১টি মামলার আসামি। এরই মধ্যে সাইবার ক্রাইম আইনের একটি মামলায় তাঁর এক বছরের সাজাও হয়েছে। বর্তমানে তিনি নোয়াখালী কারাগারে রয়েছেন। কুমিল্লায় হাফ ডজনের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলায় বেশ কিছু মামলায়ও তাঁকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় হাজিরার প্রয়োজনে প্রায়ই এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে নেওয়া হয় তাঁকে।

পুলিশ জানায়, গত বছরের ১৩ অক্টোবর নগরীর নানুয়াদীঘির উত্তর পাড়ের একটি অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রেখে আসেন ইকবাল। তিনি নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের দ্বিতীয় মুরাদপুর লস্করপুকুর এলাকার নূর আহম্মদ আলমের ছেলে। রোববার কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রেখে অবমাননার পর কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি ও মন্দিরে। এসব ঘটনায় সব মিলিয়ে ৫৪টি মামলা হয়। এর মধ্যে নোয়াখালীর ৩২টি মামলার ২৪টিতে, কুমিল্লায় ১২টির মধ্যে ৬টি ও চাঁদপুরে ১০টি মামলার মধ্যে ৬টিসহ মোট ৩৬টি মামলায় অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হয়েছে। বাকি ১৮টি মামলা এখনও তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে।

ঘটনার পর ইকবাল কক্সবাজার চলে যান। সেখানে সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা বিচ এলাকা থেকে গত বছরের ২১ অক্টোবর তাঁকে গ্রেপ্তারের পর কুমিল্লায় আনা হয়।
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আসাদুর রহমান বলেন, এ কারাগারে থাকা অবস্থায় ইকবাল অধিকাংশ সময়ই চুপচাপ থাকতেন। পরিবারের সদস্যরাও তাঁর তেমন খোঁজ-খবর নিতেন না।

তিনি আরও বলেন, কারাগারে থাকা ইকবালের ব্যক্তিগত নথি অনুসারে তাঁর বিরুদ্ধে কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় ৩১টি মামলা রয়েছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, সন্ত্রাস-নাশকতা, বিশেষ ক্ষমতা ও সাইবার অপরাধ আইনসহ বিভিন্ন অভিযোগে এসব মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে চলতি বছরের ৭ জুন তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকার সাইবার আদালতের মামলায় তাঁকে এক বছর ৪ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করা অত্যন্ত দরিদ্র ও ভবঘুরে ইকবালের রাজনৈতিক কোনো সংশ্নিতা না থাকলেও কুমিল্লার ওয়ার্ড কমিশনার সৈয়দ মো. সোহেলের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল। মণ্ডপকাণ্ডের পর গত বছরের ২২ নভেম্বর কাউন্সিলর সোহেল সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন।

নানুয়াদীঘির উত্তর পাড়ের যে অস্থায়ী পূজামণ্ডপে ইকবাল কোরআন শরিফ রেখে সহিংসতা উস্কে দিয়েছিলেন, সেই মণ্ডপে এবারও পূজার আয়োজন করা হয়েছে। সেই মণ্ডপের সভাপতি অচিন্ত্য দাস টিটু বলেন, মামলায় অভিযুক্ত ইকবাল ছাড়া সবাই এখন জামিনে মুক্ত আছেন। প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে এখনও বিচারের আওতায় আনা হয়নি।

আরো পড়ুন