কুমিল্লায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ভয়াবহ ছোবলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় বিদ্যুৎবিহীন পুরো জেলা। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৈদ্যুতিক খুঁটি ভাঙ্গা, তার ছেঁড়া, ট্রান্সফরমার বিকলসহ নানা কারণে বিপর্যস্ত বৈদ্যুতিক সংযোগ। ১২ ঘণ্টা পর এক এক করে বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক সংযোগ চালু হতে শুরু করলেও ২৪ ঘণ্টায়ও শতভাগ গ্রাহককে সংযোগ দিতে পারেনি বিদ্যুৎ বিভাগ।
গত সোমবার রাতে বিপর্যস্ত হওয়া বিদ্যুৎ সংযোগ কুমিল্লা শহরের কিছু কিছু স্থানে সে রাতেই চালু হয়। কিন্তু গ্রামগুলোতে পরদিন মঙ্গলবার সন্ধ্যা গড়িয়ে রাতের আঁধারেও আলোর মুখ দেখেনি মানুষ।
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। নিভে গেছে মানুষের ঘরের আলো। মোবাইল ফোন সময় মত চার্জ দিতে না পারায় এবং টাওয়ারগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে এ অঞ্চলের মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের প্রায় সহস্রাধিক কর্মীর নিরলস প্রচেষ্টায় মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হতে শুরু করে। এ সময় মোবাইল ফোন চার্জ দিতে গ্রামাঞ্চলের অনেক মানুষকে মরিয়া হয়ে উপজেলা সদরে ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে।
কুমিল্লা মহানগরীসহ জেলা জুড়ে ওয়াপদা এবং কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করেছে। কুমিল্লা আদর্শ সদর ও সদর দক্ষিণ উপজেলার বেশির ভাগ অংশে ওয়াপদা বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করেছে। অন্যদিকে কুমিল্লার বাকি ১৫টি উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী দুটি জেলার আরো দুটি উপজেলায় সংযোগ দিয়েছে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১, ২ ও ৩।
সোমবার রাতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে জেলা জুড়ে প্রায় ১২০টি বৈদ্যুতিক খুঁটি পড়ে গেছে। এর মধ্যে ভেঙ্গে গেছে ৯২টি খুঁটি। সহস্রাধিক স্থানে ছিঁড়ে গেছে বৈদ্যুতিক তার, বিকল হয়ে গেছে শতাধিক ট্রান্সফরমার।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর অধীনে চান্দিনা, বরুড়া, দেবীদ্বার ও মুরাদনগর উপজেলায় ভেঙ্গে গেছে ২৪টি বৈদ্যুতিক খুঁটি। দুই শতাধিক স্থানে ছিঁড়ে গেছে বৈদ্যুতিক তার এবং বিকল হয়ে গেছে ২০টির বেশি ট্রান্সফরমার।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর অধীনে বি-পাড়া, বুড়িচং (আংশিক), সদর দক্ষিণ (আংশিক), চৌদ্দগ্রাম, লাইমাই উপজেলায় ভেঙ্গে গেছে ৩০টি বৈদ্যুতিক খুঁটি এবং পড়ে গেছে ১০টি। এ ছাড়া ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে গেছে অন্তত ৩৫টি এবং প্রায় ৪৫০টি স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে গেছে।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর অধীনে রয়েছে দাউদকান্দি, মেঘনা, তিতাস, হোমনাসহ মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা। এসব এলাকার ৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে গেছে এবং পড়ে গেছে ১০টি খুঁটি। ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে গেছে অন্তত ১৫টি ও অর্ধশতাধিক স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে গেছে।
চান্দিনার মাইজখার ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল বাতেন জানান, 'সোমবার বিকেল থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টায়ও আমার এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারেনি কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১। প্রায় ৩০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় শেষ হয়ে গেছে আইপিএস ও মোবাইল ফোনের চার্জ। নষ্ট হয়ে গেছে ফ্রিজের সকল খাবার। মোমবাতি জ্বালিয়ে রাত কাটাচ্ছি আমরা। '
এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুতের তিনটি সমিতির মহাব্যবস্থাপকদের সঙ্গে কথা বলার পর তারা সবগুলো লাইন চালু করার নিশ্চয়তা দেয়। কিন্তু রাত ১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অর্ধেক এলাকায়ও বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
রাত ৮টায় কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর মহাব্যবস্থাপক মকবুল হোসেন জানান, আমার ৮১টি ফিডারের মধ্যে ৭৮টি ফিডারই চালু করেছি। দুই থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে বাকি তিনটি চালু হবে। এ পর্যন্ত প্রায় ৯৫ শতাংশ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে সক্ষম হয়েছি আমরা। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পৌর এলাকার ছায়কোট, তুলাতলী, হারং, কচুয়ারপাড়, মাইজখার ইউনিয়নের মাইজখার, করতলাসহ বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হয়নি।
ওই সমিতির সহকারি মহাব্যবস্থাপক ফয়সাল আলম চৌধুরী জানান, এ পর্যন্ত আমরা ২৫ শতাংশ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে সক্ষম হয়েছি। সবগুলো ফিডার চালু করা হলেও সকল এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। সংযোগ প্রদানে আমাদের লোকজন কাজ করছে। বুধবার দুপুরের মধ্যে সম্পূর্ণ লাইন চালু করা সম্ভব হবে।
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com