ঘরে অসুস্থ স্বামী। সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হচ্ছে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার হতদরিদ্র হালিমা খাতুনের। সচ্ছলতার আশায় বর্গা নেওয়া জমিতে এক লাখ টাকা ঋণ নিয়ে শীতকালীন সবজি চাষ করেছিলেন। কিন্তু শত্রুরা হালিমার সেই চেষ্টাটুকু শেষ করে দিয়েছে।
শুক্র ও শনিবার গভীর রাতে দুই দফায় হালিমার ক্ষেতের সব সবজি গাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার পর থেকে কান্না থামছে ওই নারীর।
উপজেলার পরিহলপাড়া এলাকায় সবজি ক্ষেতে ওই নারীর কান্নার ছবি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। হালিমা ওই এলাকার হতদরিদ্র ইউনুস মিয়ার স্ত্রী।
রোববার সকালে পরিহলপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নিজের জমির কাটা গাছ বুকে নিয়ে চিৎকার করে কাঁদছেন হালিমা। মাটিতে গড়িয়ে গড়িয়ে তিনি কাঁদছিলেন। হালিমার ভাষ্য, পরিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে তার জমির ফসল কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
হালিমা খাতুন বলেন, “আমার স্বামী অসুস্থ, কাজ করতে পারেন না। ছেলে-মেয়ে খাওয়াতে হলে কিছু একটাতো করতে হবে। এই চিন্তা থেকে ২৮ শতক জমি বর্গা এবং এক লাখ টাকা ঋণ নিয়ে তীব্র রোদের মধ্যে সবজি চাষ শুরু করি। প্রায় দেড় মাস আগে প্রতিবেশীর সঙ্গে ঝগড়া হয় আমাদের। সেদিন রাতে লাউ গাছগুলো কেটে দেওয়া হয়। তখন গ্রামের লোকদের কাছে বিচার দিলে প্রমাণ না থাকায় কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।”
সব গাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা, কান্না থামছে না হালিমার
“গত শুক্রবার গাছের পাতা কুড়ানো নিয়ে তাদের সঙ্গে আবারও ঝগড়া হয়। সেদিন রাতে আমার জমির বেগুন গাছগুলো কেটে দেওয়া হয়। শনিবার ফসল কাটা নিয়ে আমি ঘরে কান্নাকাটি করি। এরপর মানুষকে বিষয়টি জানাবো বলায়, শনিবার রাতে সবজি ক্ষেতের শিম গাছগুলো কেটে দিয়েছে।“
হালিমা বলেন, এই পর্যন্ত পাঁচবার তার ফসলের জমি নষ্ট করেছে প্রতিপক্ষ। গরিব ও অসহায় হওয়াতে কেউ বিচার করতে আসে না। জমির ফসল মাত্র একবার বিক্রি করেছেন তিনি। বর্তমানে ক্ষেতে থাকা বেগুনগুলো সম্পূর্ণ বিক্রির উপযোগী হয়নি।
“আমার এত টাকার ক্ষতি কীভাবে পূরণ করবো জানি না। আমার মরা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। প্রতিবার ফসল তোলার সময় হলেই এমনটা করে তারা।”
সকালে খবর পেয়ে হালিমার জমিতে ছুটে যান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বানিন রায়।
তিনি বলেন, “হালিমা বেগম খুবই দরিদ্র কৃষাণী। হিসাব করে দেখেছি, তার প্রায় ৬০ হাজার টাকার অধিক ফসল নষ্ট হয়েছে। তিনি লিজ নিয়ে জমিটা চাষ করেছেন। এভাবে তার ক্ষতি যে করেছে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। আমরা দেখছি, কোনো প্রকল্পের আওতায় তাকে সহযোগিতা করা যায় কিনা।”
সব গাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা, কান্না থামছে না হালিমার
বুড়িচং থানার ওসি মারুফ রহমান বলেন, খবর পেয়ে ওই নারীর জমিটি পুলিশ সদস্যরা দেখে এসেছেন। এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হালিমা খাতুন বলেন, “ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কৃষি কর্মকর্তা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে আমাকে একটা প্রতিবেদন দিয়েছেন। আর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য থানার ওসি সাহেবের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা দেখছি, কীভাবে ওই নারীকে সহযোগিতা করা যায়।”
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com