কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) নতুন ক্যাম্পাসের জন্য অধিগ্রহণ করা জমির বিপরীতে ক্ষতিপূরণের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন শাখা ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ। তবে অধিগ্রহণ হওয়া জমির মূল মালিকদের দাবি ইলিয়াসের সেখানে কোনও জমি নেই। কিন্তু প্রায় সাত কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছেন তিনি। আবেদনে ইলিয়াসের সঙ্গে স্বাক্ষর রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এইচ এম আল আমিনেরও।
নথি ঘেঁটে দেখা যায়, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার লালমাই মৌজায় অধিগ্রহণকৃত এলাকার ১০৯ নম্বর খতিয়ানে ৫৭৯১, ৫৭৯২ ও ৫৭৯৩ দাগে ৩.৮১ একর জায়গার বিপরীতে ছয় কোটি ৯৮ লাখ ৭২ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছেন ইলয়াস ও আল আমিন।
জমির প্রকৃত মালিকানা দাবি করা কবির হোসেন বলেন, ‘এখানে ইলিয়াসের দখলে কখনও জমি ছিল না। আমাদের পূর্বপুরুষ থেকে আমরা প্রায় ৭০ বছর ধরে এই জমি ভোগ-দখল করছি। আমাদের নামে আরএস-সিএস সব আছে।’
কবির হোসেন আরও বলেন, ‘যখন সার্ভেয়ার এসেছিল তখন তারাসহ (ইলিয়াস) অনেক নেতাকর্মীরা ছিল। তাই তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী তাদের নাম আগে তুলে পরে আমাদের নাম তুলেছে। কাগজপত্র থাকার পরেও আমাদের নাম আগে লিখে নাই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘এখানে জমির মালিকানা হাতিয়ে নেওয়ার আমরা কেউ না। বর্তমান শাখা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি রেজাউল ইসলাম মাজেদ এবং সাবেক সেক্রেটারি রেজা-ই-এলাহী, উপজেলার বিভিন্ন নেতা, স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ ১৮ জনের নাম আছে। সবার সম্মতিতে আবেদনটি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আজ হোক বা কাল হোক জমির টাকা প্রকৃত মালিকরাই পাবে। এখানে আমার ব্যক্তি স্বার্থ নেই।’
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও বাহ্মণবাড়িয়ার বাসিন্দা হয়ে কীভাবে ওই এলাকার জমির মালিক হলেন, জানতে চাইলে এইচ আম আল আমিন বলেন, ‘ইলিয়াস আমাকে বিষয়টা জানিয়েছিল। তাই আমি ইলিয়াসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শুধু আবেদন করেছি। আবেদন করলেই তো আমি মালিক না।’
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাধিক নেতার অভিযোগ, আল আমিনের সঙ্গে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় এক প্রভাবশালী নেতার সখ্যতা রয়েছে। এই ভূমি বাণিজ্য থেকে যে সাত কোটি টাকা আসার কথা রয়েছে তা থেকে নির্দিষ্ট অংশ ওই কেন্দ্রীয় নেতাসহ বেশ কয়েকজনের পকেটে যাবে। তাই নানা ঘটনায় বিতর্কিত হওয়ার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কমিটি হতে দেরি হচ্ছে।
জমি দখলের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের জড়িত থাকার অভিযোগ বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। এরপর ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও কোনও উত্তর মেলেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ কাবিরুল ইসলাম খান বলেন, ‘দখল দেখিয়ে আবেদন করলে যদি কোনও আপত্তি না থাকে তাহলে টাকা দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আবেদন করার পর কোনও জমির মালিক আপত্তি জানালে তা নিষ্পত্তি করার পরই টাকা দেওয়া হয়। উপযুক্ত কাগজপত্র থাকলে তা যাচাই-বাছাই করে টাকা দেওয়া হবে।’
সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউনক
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com