কুমিল্লা সদর উপজেলার গোমতি নদীর তীরে জিরো পয়েন্টে গাজীপুর গ্রাম। এখানে বাপ দাদার ঐতিহ্যকে ধরে রেখে গুড় তৈরি করেন ইউনুস মিয়া। গোমতীর চরে সুনামের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে এই গুড়ের ব্যবসা করছেন তিনি। নিজ বাড়িতে আখের রস থেকে তৈরি করা এই গুড় কুমিল্লার বাজার ছাড়িয়ে খ্যাতি অর্জন করেছে এখন দেশজুড়ে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জমি থেকে পরিপুষ্ট আখ পরিষ্কার করে নিয়ে আসছেন কৃষকরা। আখ লোহার মেশিন দিয়ে বের করা হচ্ছে রস। পরে সেই রস মাটির চুলোয় বড় ড্রামে ভালোভাবে জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে গুড়। আর ভেজালমুক্ত এই গুড় কিনতে প্রতিদিন গাজীপুর গ্রামে আসছেন দূর-দূরান্তের অনেক মানুষ। অনেকে রুটি নিয়ে আসেন গুড় দিয়ে খাওয়ার জন্য। আবার অনেকে বাটি আনেন গুড় সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
ইউনুস মিয়া বলেন, এই পেশাটা আমার বাপ দাদার ঐতিহ্য। ৪ একর জমিতে আখ চাষ করে এই ব্যবসাটাকে টিকিয়ে রাখছি। আমার এই আখের গুড় একদম খাঁটি। শুধু কুমিল্লা না, ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকেও অনেক লোক আসেন আমার কাছে গুড় নেওয়ার জন্য। যখন গুড় তৈরি শেষে কড়াই তুলি তখন অনেক লোক আসেন গুড়ের স্বাদ নেওয়ার জন্য। আমি সবাইকে দেই। সবাইকে দিয়ে আমি আনন্দ পাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার এখানে ৬ জন কর্মচারী কাজ করেন। তাদেরকে দৈনিক ৭০০ টাকা করে মজুরি দিতে হয়। আমি সব কিছু পরিষ্কার পরিছন্ন রাখার চেষ্টা করি। আমার তৈরি এই গুড় ১০০ শতাংশ ভেজালমুক্ত।’
ইউনিস মিয়া বলেন, ‘আমার এই ব্যবসা মাত্র ২/৩মাসের। কিন্ত এর জন্য আমাকে সারা বছর কাজ করা লাগে। প্রতি বছর ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার কেজি গুড় উৎপাদন করি। প্রতি পাতিল গুড় বিক্রি করি ১৭০ টাকা দরে। এই টাকা আয় করে শ্রমিকের বেতন দিয়ে আমি আমার পরিবার নিয়ে সুন্দর চলতে পারি। তবে ভারত থেকে আসা গরুর কারণে আমার আখের জমির অনেক ক্ষতি হয়। কাউকে বলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না।’
সরকারের থেকে কোনো অনুদান পাইনি উল্লেখ করে গুড়ের এই কারিগর বলেন, ‘যদি সরকারের পক্ষ থেকে সামন্য অনুদানও পাইতাম তাহলে প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরো বেশি আখের গুড় উৎপাদন করতে পারতাম। নিজেও লাভবান হতে পারতাম একই সঙ্গে আমার শ্রমিকদেরও উপকার হইতো।’
আজাদ নামের একজন শ্রমিক বলেন, ‘ইউনুস ভাইয়ের এই ব্যবসার কারণে এখানে আমরা ৬জন লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। আমি আজকে ৬ বছর ধরে কাজ করছি। কখনো বেতন বা অন্য কিছু নিয়ে দুই কথা হয় নাই। আমরা সব সময় ভালো গুড় উৎপাদন করার জন্য চেষ্টা করি। এখানে কাজ করে যে টাকা বেতন পাই তা দিয়ে পরিবার নিয়ে সুন্দর চলতে পারি। সরকার যদি এদিকে একুটু নজর দিতো তাহলে এই ব্যবসা আরো বড় করা যেতো। প্রযুক্তি ব্যবহার করে সময় বাঁচানো যেত, আরো অনেক লোকের কর্মসংস্থানের হতো।’
গুড় কিনতে আসা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সারা বছর অপেক্ষা করি কখন ইউনুসের আখের গুড় হবে। আমার মতো সবাই অপেক্ষায় থাকে। তাই স্ত্রী নিয়ে চলে আসলাম গুড় খাওয়ার জন্য এবং নিয়ে যাওয়ার জন্য। তার এই আখের গুড়টা খাঁটি তাই আমি মিস করি না। এখানে অনেক দূর থেকে অনেক লোক আসে গুড় নেওয়ার জন্য।’
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আহমেদ বলেন, ‘কুমিল্লা ঐতিহ্যগতভাবে গুড় তৈরি হয় বিষয়টি আমরা শুনেছি। এ বিষয় আমরা খোঁজ খবর নেবো।’
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com