‘মেম্বাররে ভোট দেই নাই, তাই কম্বলও দেয় নাই’
‘মেম্বাররে ভোট দেই নাই তাই মোরে কম্বল দেয় নাই। শীতের রাইতে পুরান খাতা গাঁয় দিয়া থাহি। যারা মেম্বাররে ভোট দিছে তাগো কম্বল দেছে। এহন কেডা মোরে শীতের মোডা কাপড় দেবে।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার খেজুতলা বাজার এলাকায় আগুন পোহানোর সময় আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন ভ্যানচালক সেকান্দার আলী। ৭৫ বছর বয়সেও জীবিকার তাগিদে তাকে ভ্যান নিয়ে বের হতে হয়। নেই শীতের পোশাক কেনার সামর্থ্য। সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া শীতবস্ত্রে হয়তো তার শীত নিবারণ হবে বলে আশায় ছিলেন সদর ইউনিয়নের উত্তর ভবানিপুর গ্রামের এই বৃদ্ধ। তাও মেলেনি। তাই আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তিনি।
সেকান্দার আলীর অভিযোগ, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শহিদুল ইসলামকে ভোট না দেওয়ায় তাকে কম্বল দেওয়া হয়নি। তবে ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম বলছেন, প্রয়োজনের চেয়ে বরাদ্দ কম থাকায় সবাইকে কম্বল দেওয়া সম্ভব হয়নি।
একই ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের দিনমজুর নুরুল ইসলামও (৬৫) সরকারি কম্বল পাননি। তিনি বলেন, মুই কোনো কম্বল পায় নাই। কম্বল কেনার টাহাও নাই। শীতের কষ্টে রাইতে ঘুমাইতে পারি না। পুরান খাতা গায় দিয়া কোনোরহম রাইত কাডাই।
এ বিষয়ে শহিদুল বলেন, সরকারিভাবে মাত্র ১৫টি কম্বল পেয়েছি। ১৫টি কম্বল থেকে কয়জনকে দেব। শীতকালে হতদরিদ্রদের অনেককেই সরকার কম্বল দেয়। এখন শীত অনেক বেশি। তাই কম্বলের চাহিদাও বেশি। সেই তুলনায় আমরা বরাদ্দ পাইনি। তাই চাইলেও সবাইকে কম্বল দেওয়া যায়নি।
ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, সরকারিভাবে প্রতি ইউনিয়নে ৩০০ কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যদের ৩০টি করে কম্বল দেওয়ার কথা থাকলেও তাদের দেওয়া হয়েছে মাত্র ১৫টি কম্বল। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেক ইউপি সদস্য এখনও কম্বল নেন নি।
সদর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহাদৎ হোসেন বলেন, চেয়ারম্যান আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে কম্বল কম দিয়েছেন। এজন্য আমি পরিষদ থেকে কোনো কম্বল গ্রহণ করিনি।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ করিম ইমন বলেন, প্রত্যেক মেম্বারকে ৩০টি করে কম্বল দিয়েছি। এরপরও অনেক অসহায় পরিবার কম্বল পায়নি। এখন শীতের প্রকোপ বেশি। তাই শীতের কাপড়ের বরাদ্দ বেশি দরকার।