মুরাদনগর সংবাদদাতাঃ ‘আমি কি আর মা ডাক হুনতে পারতাম না গো’ আর কী গো কোন দিন আমারে মা বলে ডাকব না? আল্লাহ আমারে এ কোন পাপের শাস্তি দিলো মেয়ে ব্যাইচ্চা থাইক্কাও মা বলে ডাকতে পারছে না।’ এভাবেই দুহাত বুকচাপরিয়ে কাঁদাছেন এক হতবাগিনী মা। আর দৃশ্য দেখছেন কিছু লোক। লোকজনের জটলা দেখে কাছে গিয়ে দেখা গেল মায়ের আর্তনাথে শোকের আবহ বিরাজ করছে পুরো হাসপাতালের দ্বিতীয়তলা। মায়ের কান্নার দৃশ্যের এক ফাঁকে চোখ যায় হাসপাতালের বেডে। শুয়ে থাকা নির্বাক দুটি চোখ মেলে তাকিয়ে আছে ১৪ বছর বয়সী সোহেদা। যে কেউ এই দৃশ্য দেখলে আতকে উঠাই স্বাভাবিক।
এ ঘটনা কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার কোড়েরপাড় গ্রামে। এঘটনায় গতবুধবার রাতে বাঙ্গরা বাজার থানায় মামলা হয়েছে।
জানা যায়,গত ৮ ডিসেম্বর সকালে বাড়ীর সামনের রাস্তায় সোহেদার ভাই নাইম একই গ্রামের হান্নান মিয়ার ছেলে রুহুল আমিন(১৮)এর সাথে অটোরিক্সার ভাড়া নিয়ে বাগবিতনন্ডার এক পর্যায়ে রুহুল আমিন নাইমকে বেধরক মারধর করে। তা দেখে নাইমের বাবা মা এগিয়ে গেলে তাদেরকেও রুহুল আমিন ও তার পরিবারের লোকজন কিল ঘুষি মেরে আহত করে। কিন্তু এতেও রাগ কমেনি রুহুল আমিনের, বিকালে নাইমের বোন সোহেদা (১৪) বই আনতে বান্ধবী বাড়ী যাওয়ার সময় রুহুল আমিনসহ তার পরিবারের লোকজন সোহেদাকে লাঠি দিয়ে বেধরক পিটিয়ে আহত করে। খবর পেয়ে সোহেদার পরিবার তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বাঙ্গরা বাজারে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মুরাদনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করেন। ৪দিন থাকার পর সোহেদার কোন উন্নতি না দেখে গত মঙ্গলবার রাতে মুরাদনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে কুমিল্লা জেলার কুমেক হাসপাতালে রেফার করেন। বর্তমানে সে কুমেক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
কর্তব্যরত চিকিৎসক ড. জানে আলমের সাথে সোহেদার অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সোহেদার মাথায় আঘাতের কারণে সে কোন কথা বলতে পারছে না। তাই তার উন্নত চিকিৎার জন্য কুমেক হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
এদিকে সোহেদার বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমি অটোরিক্সা চালাই। রুহুল আমিনের কথামত না যাওয়ায় ভাড়া নিয়ে বাগবিতন্ডার একপর্যয়ে আমাকে মেরে আহত করে পরে আমার পরিবার পরিজন এর প্রতিবাদ করলে তাদেরকেও মেরে আহত করে। ঘটনার দিন বিকালে যষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ুয়া আমার বোনকে একা পেয়ে তাকেও পিটিয়ে মারাত্মক আহত করেছে। আমার বোন কথা বলতে পারছে না আদো কথা বলতে পারবে কি না ডাক্তার এ বিষয়ে কিছুই বলতে পাছেন না। এ ঘটনার পর এলাকার কিছু লোক বিষয়টির রফা দফা করবেন বলে আশ্বাস দিয়ে আমাদের কে হয়রানি করেছে। পরে নিরুপায় হয়ে দেরিতে হলেও গত বুধবার রাতে থানায় গিয়ে রুহুল আমিনসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছি। আমার পরিবার আমার বোনের স্বভাবিক জীবন ফিরে পেতে চায়।
অভিযুক্ত রুহুল আমিনের বাড়িতে গিয়ে কাউকে না পাওয়ায় ঘটনা সম্পর্কে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, সোহেদার বড় ভাই ৪জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্য অপরাধিদের বিরুদ্ধে আইনগত বব্যস্থা নেয়া হবে। সোহেদা কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন কুড়েরপাড় গ্রামের আবদুল মতিনের মেয়ে।
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com