কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার দুর্গাপুর উত্তর ইউনিয়নের আলেখাচরে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হককে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। স্থানীয় কাজী জহিরুল ইসলাম জহিরকে প্রধান আসামি করে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ ৫-৬ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। গতকাল শুক্রবার গভীররাতে নিহতে বাবা আবদুল ওয়াদুদ বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় এই মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর পুলিশ ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে তাদের নাম জানা যায়নি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লার পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক হত্যাকান্ডের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। এ মামলার এজহার নামীয় দুজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, কাজী জহিরের মাদক সেবন ও জুয়া খেলার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার কারণে সে ক্ষুব্ধ হয় ও আলেখাচর দক্ষিণ পাড়া জমিরিয়া তালিমুল কোরআন মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির দখল নিয়ে বিরোধের জের ধরে এনামুলকে হত্যা করা হয়।
মামলার ১০ আসামি হলেন আলেখাচর গ্রামের কাজী জহিরুল ইসলাম জহির (৪০), কাজী এনামুল হক (৩৮), কাজী নাজমুল হক (৪২), কাজী আমান উল্লাহ (২৭), আবু সাঈদ (২৩), আতিকুর রহমান পাভেল (৪৫), কাজী নিজাম উদ্দিন, বিল্লাল হোসেন (৩৫), ইয়ার আহম্মেদ (৪৮) ও জাকির হোসেন (৪৫)। এছাড়া ৫-৬ জন ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, গতকাল শুক্রবার দুপুরে আলেখাচর দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদে জুম্মার নামাজ শেষে শিশু পুত্র মিজবা ও ভাতিজা ইমতিয়াজকে সঙ্গে নিয়ে মসজিদ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন এনামুল হক। মসজিদ থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরে হাজী সিরাজুল ইসলাম ভিলার সামনে পৌঁছলে কাজী জহিরুল ইসলামের নেতৃত্ব তার চাচাতো ভাই কাজী আমানুল ইসলাম ও আবু সাইদসহ আরও কয়েকজন মিলে এনামুলকে ঝাপটে ধরে ওই বাড়ির বাউন্ডারি ওয়ালের সঙ্গে ঠেকিয়ে গলায় বুকেও চুরিকাঘাত করে। তখন সে রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড়ে ওই বাড়ির ভেতরে ঢুকে উঠানে লুটিয়ে পড়ে। আসামিরা তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে প্রথমে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে ও পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ নিয়ে যায়। বিকেল ৩টার দিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনামুল মারা যায়।
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহমেদ নিয়াজ পাবেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, আওয়ামী লীগ কর্মী এনামুলের সঙ্গে জামায়াত নেতা কাজী জহির গংদের রাজনৈতিক বিরোধের পাশাপাশি এলাকাবাসীর সহযোগিতায় এনামুলের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত আলেখাচর দক্ষিণ পাড়া জমিরিয়া তালিমুল হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার কমিটি দখল নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এ মাদ্রাসার সেক্রেটারি ছিল এনামুল। তাকে সরিয়ে কাজী জহির গং দীর্ঘ দিন ধরে এই মাদ্রাসার কমিটি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে।
এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার কাজী জহিরের মাদক সেবন ও জুয়া খেলার একটা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। কাজী জহির আলেখাচর দক্ষিণ পাড়া জামে মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি হওয়ায় এনামুল মসজিদের মুসল্লিদের মাদক সেবনের ভিডিও দেখিয়ে জহিরের সমালোচনা করে। এতে এনামুলের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে কাজী জহির জামায়াত-বিএনপির ক্যাডারদের নিয়ে তাকে খুন করে। মামলার বেশির ভাগ আসামিই বিএনপি-জামায়াত অনুসারী। এদের মধ্যে মামলার ৬ নম্বর আসামি আতিকুর রহমান পাভেল কুমিল্লা (দ:) জেলা যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক এবং ৯ নম্বর আসামি এয়ার আহমেদ কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক।
এ বিষয়ে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রেজাউল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আওয়ামী দলীয় কোন্দলে তাদের নেতা খুন হয়। এ হত্যাকে কেন্দ্র করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিএনপি ও যুবদল নেতা-কর্মীদের জড়ানো হচ্ছে। মামলায় আসামি করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ বিষয়ে আমরা সংবাদ সম্মেলন করে প্রকৃত সত্য তুলে ধরব।
নিহত এনামুলের ছোট বোন নুরুন্নেছা আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় থেকে কাজী জহির ও আবুল মেম্বার এনামুলের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন। এনামুল তাদের পক্ষে আসলে ২০ লাখ টাকা দিবে বলেছিল তারা। তবুও এনামুল তাদের পক্ষে আসেনি। ওই সময় থেকেই তারা আমার ভাইকে হুমকি দিয়ে আসছিল। এভাবে তারা খুন করে ফেলবে কল্পনাও করতে পারিনি। আমরা ভাই হত্যার বিচার চাই।
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com