কুমিল্লা মহানগরীর সড়কের অংশ ও ফুটপাতগুলো প্রতিনিয়তই দখলে থাকছে কারো না কারো ভবন নির্মাণসামগ্রী দিয়ে। এতে ব্যাহত হচ্ছে পথচারী ও যানবাহন চলাচল। দুর্ভোগ বাড়ছে নগরবাসীর। এসব ভবন নির্মাণসামগ্রী রাখা হচ্ছে দিনের পর দিন। কখনো কখনো নির্মাণ কাজও হচ্ছে সড়কের ওপরেই। এছাড়া সড়কে এবং ফুটপাতে কখনো ভাসমান দোকান, কখনো যানবাহন পার্ক করে রাখা হচ্ছে। এতে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। বাধ্য হয়ে পথচারীরা ফুটপাত ছেড়ে সড়কে হাঁটছেন। জনদুর্ভোগ বাড়ছে। সিটি করপোরেশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ নীরব থাকছেন বলে অভিযোগ আছে।
দেশের অন্যতম পুরোনো কুমিল্লা নগরী এক সময় ব্যাংক ও ট্যাঙ্কের (দীঘি) শহর নামে পরিচিত ছিল। পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবেও এর খ্যাতি ছিল। ২০১১ সালে এই পৌর শহরটি সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয়। বাড়তে থাকে জনসংখ্যা। ঘটতে থাকে উন্নয়ন। পাল্লা দিয়ে নির্মিত হচ্ছে উঁচু ভবন। কোনটা আবাসিক, কোনটা বাণিজ্যিক।
অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ ভবনে পার্কিং ব্যবস্থা নেই। কোনো কোনোটার থাকলেও তা সীমিত। ফলে সড়কজুড়েই থাকছে অবৈধ পার্কিং। যার ফলে বাড়ছে যানজট। অনেক যানবাহন চালক কখনো কখনো ফুটপাতেও গাড়ি রাখছেন। এছাড়াও রয়েছে ফুটপাতে দোকান বসানোর প্রতিযোগিতা। ফলে নগরবাসীর পায়ে চলা পথ বেদখলে চলে গেছে। ফুটপাতে আর চলাচল করতে পারছেন না পথচারীরা।
এই চিত্র নগরীর শাসনগাছা, রেসকোর্স, পুলিশ লাইন, ঝাউতলা, বাদুরতলা, স্টেশন রোড, নজরুল এভিনিউ, রানীর বাজার রোড, লাকসাম রোড, সদর হাসপটাতাল রোড, ছাতিপট্টিসহ ব্যস্ততম আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় বেশি। দিনের পর দিন ফুটপাতে ইট, বালু ও নির্মাণসামগ্রী রেখে চলছে বহুতল ভবন তৈরির কাজ। সড়কের পাশে ড্রেন নির্মাণের সামগ্রীও রাখা হয়। নগরবাসী আর শহরে আসা লোকজন ফুটপাতের বদলে রাস্তা দিয়ে হাঁটা-চলা করতে বাধ্য হচ্ছেন।
নগরীর সর্বত্রই পাল্লা দিয়ে নির্মাণ হচ্ছে উঁচু উঁচু আবাসিক-বাণিজ্যিক ভবন। এসব ভবনের নির্মাণসামগ্রী রাখা হচ্ছে লাগোয়া সড়ক ও ফুটপাতে। সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন বা পুলিশ প্রশাসন কখনোই জনদুর্ভোগ লাঘবে এগিয়ে আসছে না বলে নগরবাসীর অভিযোগ রয়েছে। একইভাবে ভবন নির্মাণ আইন মেনে বহুতল ভবনগুলো নির্মিত হচ্ছে কি না- সেটাও তদারকি করছে না সংশ্লিষ্টরা। সিটি করপোরেশনে দায়িত্বশীল একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, একটি ভবন নির্মাণের আগে অনুমতি নিতে হয় সিটি করপোরেশন থেকে। ভবন নির্মাণে ফায়ার সার্ভিস থেকেও প্রতিবেদন নিতে হয়। কিন্তু এখানে অধিকাংশ ভবন পুরোপুরি নির্মাণ কোড মেনে তৈরি হয় না। আর তদারকিতে অবহেলা থাকায় বিল্ডিং কোড না মেনে গড়ে তোলা হয় ভবন।
নগরীর ঝাউতলা এলাকার বাসিন্দা ফয়সাল আহমেদ জানান, ভবন নির্মাণের ইট, বালু, সিমেন্ট, রড এমনকি যন্ত্রপাতিও দিনের পর দিন ফুটপাতে রেখে দিচ্ছেন নির্মাণাধীন ভবন মালিকরা। আর এটা সিটি করপোরেশনের দেখার কথা। তাদের দায়িত্বে অবহেলার কারণেই মানুষ ফুটপাত ছেড়ে সড়ক দিয়ে চলাফেরা করছে। ফলে নগরীতে বাড়ছে মানুষের দুর্ভোগ।
একইভাবে পুলিশ লাইনস এলাকার বাসিন্দা রূপালী বেগম জানান, নগরীর সড়ক ও ফুটপাতের ওপর যে যেমন খুশি নির্মাণসামগ্রী রেখে তাদের কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণসামগ্রী পড়ে থাকে সড়কের ওপর, আবার কখনো দেখা যায় সড়কের পাশের ড্রেনের কাজ করে ঠিকাদাররা, তারাও এসব নির্মাণসামগ্রী সড়কের ওপর রেখে যায়, এতে সাধারণ মানুষের চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। যদি দায়িত্বশীলরা এসব ব্যাপারে নজর দিত, তবে এসব সমস্যা থেকে নগরবাসী স্বস্তি পেত।
এ বিষয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. সফিকুল ইসলাম জানান, ভবন নির্মাণসামগ্রী মানুষ চলাচলের রাস্তার ওপর রাখার কোনো নিয়ম নেই। ভবন নির্মাণসামগ্রী নিজ দায়িত্বে রাখার ব্যবস্থা করেই বিল্ডিং তৈরি করতে হবে। যেন সাধারণ মানুষের চলাচলে কোনো অসুবিধা না হয়। আমরা মাইকিং করে এ বিষয়ে নগরবাসীকে সতর্ক করেছি। এভাবে নির্মাণসামগ্রী যত্রতত্র ফেলে রাখলে বাজেয়াপ্ত করা হবে বলে জানিয়ে রেখেছি। এ ব্যাপারে অভিযান চলবে।
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com