ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লায় কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে বেপরোয়া দালাল সিন্ডিকেট। প্রতিদিনই সরকারি এ অফিসে দালালদের দৌরাত্ম্য এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ বাণিজ্যে পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বিদেশগামীরা। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে দালালচক্র কর্তৃক মারধরসহ লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন এখানে নিবন্ধন ও ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে আসা বিদেশগামীরা। সম্প্রতি দালাল চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়া হয়েছে। কিন্তু এ কার্যালয়ে কর্মরতদের সঙ্গে যোগসাজশ থাকার কারণে দালাল সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না বলে অভিযোগ ভোক্তভুগীদের। এদিকে দালালদের বেপরোয়া উৎপাতের কারণে অফিসটি নগরীর ঠাকুরপাড়া থেকে ঝাউতলা পুলিশ লাইন এলাকায় স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লা নগরীর ঠাকুরপাড়া এলাকায় অবস্থিত কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে নিবন্ধন এবং ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে আসা লোকজনের ভিড়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও দীর্ঘ সারির এ লাইন যেন ছোট হচ্ছে না। সকাল থেকেই ছোট প্রকৃতির দালাল সিন্ডিকেটের সদস্যরা লাইনের সামনের অংশের জায়গা তাদের দখলে নিয়ে যায়। পরে দূরদূরান্ত থেকে আসা প্রতিজনের কাছে ৩০০-৫০০ টাকায় লাইনের জায়গা বিক্রি করা হয়। তারপর ভিতরে থাকা সিন্ডিকেটের সদস্যরা ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকার বিনিময়ে কোনো ধরনের লাইন ছাড়াই সব কাজ সম্পাদন করে দেয়। এ ক্ষেত্রে সেবা গ্রহীতাকে নির্ধারিত ২২০ টাকার পরিবর্তে হাজারের ওপর বাড়তি টাকা খরচ করতে হয়।
ভুক্তভোগীরা জানায়, ব্যাংক ড্রাফট দেয়া থেকে শুরু করে ফরম জমা দেয়া পর্যন্ত দালালদের ফাঁদে পা দিতে বাধ্য হচ্ছে গ্রামের লোকজন। পুরো অফিসে আছে মাত্র ৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ বিদেশে মৃত ব্যক্তির স্বজন ও বিদেশ গমনেচ্ছুক ব্যক্তি নিবন্ধন এবং ফিঙ্গার প্রিন্ট করতে আসেন। জনবল সংকটের সুযোগ কাজে লাগিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বাড়তি চাপ দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে সম্মানির নামে ঘুষ। ২২০ টাকা ব্যাংক ড্রাফট জমা দিতে অতিরিক্ত ৫০০ টাকা আদায় করছে দালালরা। আর দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কাজ করালে সহজেই কাজ হয়ে যায়। কুমিল্লার মেঘনা উপজেলা থেকে আসা বিদেশগামী যুবক আলাউদ্দিন জানান, দীর্ঘ লাইনের কারণে দু’দিন অপেক্ষা করেন। অবশেষে এক হাজার টাকার বিনিময়ে দালালের মাধ্যমে তিনি তার নিবন্ধনের কাজ সম্পাদন করেছেন। মুরাদনগর উপজেলার যুবক মারুফ হোসেন জানান, এ অফিসের ভেতরে ব্যাংক ড্রাফট জমা থেকে শুরু করে প্রতিটি স্তরেই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা খারাপ আচরণ ও নানাভাবে হয়রানি করছে। যার ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে দালালের আশ্রয় নিচ্ছে।
কুমিল্লা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ইতিপূর্বে রবিন ও রায়হান নামে দালাল চক্রের দু’সদস্যকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এ অফিসের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকে তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। জনবল সংকটের কারণে সেবা গ্রহীতাদের সময় মতো সেবা দেয়া যাচ্ছে না।
সূত্রঃ যুগান্তর
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com