জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চলছে পরিবেশ দিবসের আলোচনা সভা। বক্তব্য দিচ্ছিলেন কর্মকর্তারা। এ সময় আচমকা হুড়মুড় করে ঢুকে পড়েন একদল স্থানীয় বাসিন্দা। তাদের কারও হাতে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, কারও হাতে ফেস্টুন ও খালি বোতল। তাদের দাবি, শত বছরের পুরনো পুকুরটি বাঁচাতে হবে।
সোমবার (৫ জুন) কুমিল্লার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় হতচকিত হয়ে পড়েন উপস্থিত কর্মকর্তারা। পরে তাদের আশ্বাসে সম্মেলন কক্ষ থেকে বের হয়ে যান স্থানীয় বাসিন্দারা। এ সময় ডিসি অফিসের সামনে মানববন্ধন ও বৈঠক কর্মসূচি করেন তারা। পরে পুকুরের ভরাট কাজ বন্ধ করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ২৫০ বছরের পুরনো রাজার পুকুর একটি চক্র ভরাট করছে। পুকুরটির নাম কুমিল্লা নগরীর হাতি পুকুর। রাজা বীর মানিক্য বাহাদুর এই পুকুরটি খনন করেন। পরবর্তীতে কালক্রমে পুকুরটি লিজ দেওয়া হয়। লিজের পরে একটি চক্র পুকুরটি নিজেদের বলে দাবী করে আসছে। প্রায় ২৫০ বছর আগের ঐতিহ্য ঘেরা ও পূর্বাচলের অর্ধলাখ মানুষের পানির চাহিদা মিটানোর একটি পুকুরই হচ্ছে হাতি পুকুর। যুগে যুগে এই হাতি পুকুরটি ভরাটের জন্য অনেকে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। প্রশাসন ও স্থানীয়দের প্রতিবাদে পুকুরটি ভরাট করতে পারেনি। বর্তমানে পুকুরের উত্তরপূর্ব কোনের অনেক অংশ রাতে ভরাট করে ফেলেছে। সেই স্থানে রাতারাতি ঘর উঠিয়ে ও বড় বড় গাছের চারা লাগিয়ে বুঝাচ্ছে এই অংশটি পুকুরের অংশ নয়। পুকুরের দক্ষিণ পূর্ব কোনের বেশ কিছু অংশও ভরাট করা শুরু করেছে স্থানীয় কয়েকজন।
তারা জানান, পুকুর ভরাট বন্ধ করে নগরীর ৫০ হাজার নগরবাসীর পানির অভাব পূরণে সহায়তা করুন ও হাতি পুকুরের ঐতিহ্য ফিরিয়ে দিন। এ সময় তারা পুকুরের উত্তরপূর্ব অংশটি ভরাট মুক্ত করে পুকুরের ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।
মানববন্ধনে পুকুরের পশ্চিম পাড়ের বাসিন্দা আঞ্জুমা বেগম বলেন, ‘আমার বয়স ৮০। স্বামীর বাড়ি বাবার বাড়ি এখানেই। আমার দাদা এই পুকুরে গোসল করতেন। তারপর আমার বাবা। এরপর আমার স্বামীও করতেন। এখন আমার ছেলেদের গোসল করার পরিস্থিতি নাই। ময়লা পানিতে আমাদের ছেলে মেয়েগুলো অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আর এখনতো পানি সরিয়ে পুকুর ভরাট করছে। আমাদের কান্না কেউ শুনে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমরা নিরুপায় হয়ে ডিসি অফিসে ঢুকে পড়ছি। এখানে সবাই ছিল৷ তাই সবাইকে অনুরোধ করছি যেন আমাদের দিকে একটু তাকায়।’
দক্ষিণ পাড়ের বাসিন্দা বেলা রাণী সাহা বলেন, ‘সেদিন তেলিকোনা এলাকায় আগুন লাগছে। পানি নাই পরে হাতি পুকুরের পানি নিয়ে আগুন নেভানো হয়। সেদিন পুরা গ্রাম পুড়ে যেতো।’
পশ্চিম পাড়ের বাসিন্দা রুমি বেগম বলেন, ‘আমরা বাঁচতে চাই। আমরা পুকুর চাই। পরিবেশ দিবসে আমরা পরিবেশের মানুষ হিসেবে আমাদের অধিকার চাই। পুকুর ভরাট চাই না। আমাদের ছেলে সন্তান সবাই এই পুকুরে গোসল করে। মানুষ এই পুকুরের পানি দিয়ে ভাত রান্না করে। দৈনন্দিন কাজ করে। এখন পানি নাই। কি যে ভোগান্তিতে আছি আমরাই জানি।’
পুকুর পাড়ের বাসিন্দা ইকবাল, রুবেল, গোলাম হোসেন ও রফিকসহ কয়েকজন জানান, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল এই পুকুর ভরাট করছে। কেউ প্রতিবাদ করে না। নিরুপায় হয়ে আজ তারা ডিসি অফিসে ঢুকে পড়ছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মৌসুমি আক্তার বলেন, ‘সিনিয়র কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া এ বিষয়ে আমি কোনও বক্তব্য দিতে পারি না। তবে যদি লিখিত অভিযোগ আসে তাহলে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, ‘তারা স্মারকলিপি দিয়েছে। আমরা বিষয়টি দেখবো।’
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com