ডেস্ক রিপোর্টঃ তিতাসের মজিদপুর জমিদার বাড়িতে গেলে খানিকটা সময়ের জন্য আপনি চলে যেতে পারেন অতীতে। হয়তো অনুভব হবে জমিদার বাড়ির আগের কোলাহল। কিছুক্ষণের জন্য হলেও মনটা ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু দুইশ’ বছরের প্রাচীন এই জমিদার বাড়িটি অবহেলায় পড়ে আছে। দিন দিন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হচ্ছে। ভবনের কোথাও জন্মেছে পরগাছা। কোনও অংশ ঢাকা পড়েছে লতা-পাতায়। সংরক্ষণ করা হলে জমিদার বাড়িটি দর্শনীয় পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে বলে অভিমত স্থানীয়দের।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে তিতাসের কড়িকান্দি বাজার। এই বাজার থেকে পশ্চিম দিকে ৫ কিলোমিটার পর কালের সাক্ষী মজিদপুর জমিদার বাড়িটির অবস্থান।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিতাসের মজিদপুর গ্রামের জমিদার বাড়িটির মোট ১৭টি ভবনের মধ্যে চারটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। বাড়ির পাশে একটি দিঘি এবং ছোট-বড় মিলে ২০টি পুকুর রয়েছে। জমিদারদের প্রাসাদসম অট্টালিকাগুলো বিভিন্নজনের দখলে রয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। বর্তমানে জমিদারদের কোনও উত্তরাধিকারীর সন্ধান পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় কামাল হোসেন নামের একজন জানান, এখানে অনেকে ভুয়া দলিল তৈরি করে দখল করেছে। প্রশাসন ঠিকভাবে খোঁজ নিলে সত্যটা বেরিয়ে আসবে।
স্থানীয় সংবাদকর্মী নাজমুল করিম ফারুক বলেন, ‘প্রতিদিন লোকজন জমিদার বাড়িটি দেখতে আসেন। এ এলাকায় কোনও দর্শনীয় স্থান নেই। সংরক্ষণ করা হলে এটি সোনারগাঁও থেকেও সুন্দর একটি পর্যটন কেন্দ্রে রুপ নেবে। এতে স্থানীয় আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।’
প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লা কার্যালয়ের আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন বলেন, ‘আমি মজিদপুর জমিদার বাড়িটি পরিদর্শন করেছি। কিছু সম্পত্তি দখল হয়ে গেছে, কিছু অংশ পরিত্যক্ত হয়ে আছে। স্থানীয়দের মতামতসহ এ বিষয়ে অধিদফতরে একটি প্রতিবেদন পাঠাবো।’
স্থানীয়রা জানিয়েছেন পাকিস্তান সৃষ্টির পরই হিন্দু জমিদাররা তাদের সবকিছু রেখে ভারতে চলে যান। জমিদারি শাসনের শুরুর দিকে মজিদপুর জমিদার বাড়ির প্রথম পুরুষ শ্রী রামলোচন রায় মজিদপুরে এসে বসতি স্থাপন করেন। মেঘনা, তিতাস, হোমনা ও মুরাদনগর পর্যন্ত তাদের জমিদারি ছিল। শ্রী রামলোচন রায়ের তিন ছেলে শ্রী কালীচরণ রায়, ব্রজেন্দ্র কুমার রায় এবং শিবচরণ রায়। জমিদারি আইন বিলুপ্ত হওয়া পর্যন্ত বংশ পরম্পরায় তাদের জমিদারি চলে। শ্রী কালীচরণের পাঁচ ছেলে যথাক্রমে পিয়ারী মোহন রায়, বিহারী মোহন রায়, শশী মোহন রায়, শরৎচন্দ্র রায় এবং মোহিনী মোহন রায়। ব্রজেন্দ্র কুমার রায়ের তিন ছেলে হলেন ক্ষিতিষ চন্দ্র রায়, যিনি মজিদপুর ইউনিয়নের প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন, গিরিশ চন্দ্র রায় ও শিরিশ চন্দ্র রায়। শিবচরণ রায়ের দুই ছেলে হররাল রায় এবং যোগেশ চন্দ্র রায়। শিরিশ চন্দ্র রায় গর্ভবতী স্ত্রীকে হত্যা করে উম্মাদ হয়ে যান। তাকে জমিদার বাড়ির একটি প্রকোষ্টে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এ অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ক্ষিতিশ চন্দ্র রায়ের দুই ছেলে শ্রী নারায়ণ চন্দ্র রায় এবং শ্রী দুর্গাচরণ রায়। শ্রী দুর্গাচরণ রায়ের তিন ছেলের মধ্যে ক্ষেত্র মোহন রায় তিতাস উপজেলার প্রথম গ্রাজুয়েট এবং প্রথম আইনজীবী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। অপর ছেলে কুঞ্জ মোহন রায় মজিদপুর ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। শরৎ চন্দ্র রায়ের ছেলে উপেন্দ্র চন্দ্র রায় তিতাস উপজেলার প্রথম গ্রাজুয়েট ডাক্তার। রামলোচন ছাড়াও তাদের বংশের আরও যারা জমিদারী করেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন রাম সুন্দর রায় এবং রামগতি রায়। এদের মধ্যে রামগতি রায়ের ছেলে নলিনী ভূষণ রায় মজিদপুর ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
সূত্রঃ বাংলাট্রিবিউন
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com