শাকে মাছে ভরা-কুমিল্লার ভোরের বাজার

পূর্বের আকাশ তখনও সূর্য ওঠেনি। পাখির কিচির মিচির শোনা যাচ্ছে। মুসল্লিরা ফজর শেষে বের হচ্ছেন। এমন সময় বিক্রেতারা মাথায় তাজা সবজির ঝুড়ি নিয়ে বাজারে ভিড় করেন। ভিড় করেন ক্রেতারাও। ভোরে বসা এ বাজার দুই ঘন্টা সময় ধরে চলে। মহানন্দ বাজারটি প্রায় চার দশক ধরে বসে। ক্রেতা বিক্রেতাদের অধিকাংশ ব্যবসায়ী নন। নিজেদের ক্ষেতের সবজি বাজারে নিয়ে আসেন। ক্রেতারাও তাজা সবজি নিয়ে খুশি মনে বাড়ি ফিরেন। বাজারটির অবস্থান কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে। এরকম দাউদকান্দির আরো দুইটি বাজার ভোর বেলায় বসে। সেগুলো হচ্ছে, বিটেশ^র ও কুশিয়ারা।

মহানন্দ বাজারে আনন্দ নিয়ে বাজার করেন, লক্ষীপুর, শায়েস্তানগর, ইটাখোলা, দোগর, মলয়, কল্যাণপুর, আমিরাবাদ, হরিপুর, তিনচিটাসহ আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ।

বাজোরে গিয়ে দেখা যায়, কেউ তার ঘরের চালের দুইটি লাউ নিয়ে এসেছেন। সেটি বিক্রি করে এক কেজি মাছ কিনেছেন। কেউ গাছ থেকে পড়া চারটি তাল নিয়ে এসেছেন। কেউ এনেছেন কয়েকটা জাম্বুরা। কেউ মাঠের পানিতে ডুব দিয়ে তুলে এনেছেন কিছু শালুক।

বাজারের ক্রেতা তিনচিটা গ্রামের বাসিন্দা আমির হোসেন, হরিপুর গ্রামের কোরবান আলী ,মলয় গ্রামের মমিনূল হক, লক্ষীপুর গ্রামের আতাউর রহমান বাসসকে বলেন, মহানন্দ নামে কোন গ্রাম নেই। বাজারটি দাউদকান্দির লক্ষীপুর গ্রামে অবস্থিত। ভোরের আলো ফোটার সময় এই বাজার বসে। বাজার শেষ হয়ে যায় দুই ঘন্টার মধ্যে। এখানে স্থানীয় তাজা সবজি, মাছ ও ফল পাওয়া যায়। এলাকার কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি মিলে এ বাজার গড়ে তোলেন। তাদের মধ্যে ইটাখোলা গ্রামের মোশাররফ হোসেন, আবদুল হাকিম ও লক্ষীপুর গ্রামের আনন্দ মিস্ত্রির নাম থেকে যথাক্রমে ‘ম’ ‘হা’ ও ‘নন্দ’ নিয়ে এই বাজারের নামকরণ করা হয়। তাদের মধ্যে শুধু মোশাররফ হোসেন বেঁচে আছেন।

বিক্রেতা দোগর গ্রামের আনোয়ার হোসেন ও আমিরাবাদ গ্রামের সালাউদ্দিন সুমন বলেন, এ বাজারে শতাধিক অস্থায়ী বিক্রেতা বসেন। এখানে তাজা সব পণ্য পাওয়া যায়। স্থানীয় পণ্য হওয়ায় দামও তুলনামূলক কম। বাজারে পণ্য বিক্রি শেষে মাঠের কাজে নামা যায়।

বাজার প্রতিষ্ঠাতাদের একজন মোশাররফ হোসেন বলেন, ১৯৮৩ সালে আমরা বাজারটি প্রতিষ্ঠা করি। কারণ পাশের গৌরীপুর ও মলয় বাজার অনেক দূরে। স্থানীয় হরিদাশ মিস্ত্রি, মনমোহন মিস্ত্রি থেকে পরিত্যক্ত ২০শতক জমি লিজ নিয়ে বাজারটি প্র্রতিষ্ঠা করা হয়। ওই সময়ে একতারা দোতরা বাজিয়ে প্রচার চালিয়ে এই বাজার জনপ্রিয় করা হয়। প্রথম দিকে সপ্তাহে শুক্রবার ও মঙ্গলবার বিকালে বাজার বসতো। পরে সেটি প্রতিদিন ভোরের বাজার হয়ে যায়। কারণ মানুষ বাজার শেষে তার জমিতে কাজ করতে যায়।

বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল বাশার মুজিব বলেন, প্রথমে কোন স্থায়ী দোকান ছিলো না। এখন অনেক স্থায়ী দোকান গড়ে উঠেছে। ভোরের বাজার থেকে কোন খাজনা নেয়া হয় না। পরিচ্ছন্নকারীরা মাঝে মধ্যে কিছু বখশিস নেন।

মলয় এলাকার সাবেক এক প্রবীন স্কুল শিক্ষক মোতাহের হোসেন বলেন, এ বাজারে প্রতিদিন সকালে পাশের ১০-১২টি গ্রামের মানুষ ভিড় করেন। তাদের খেতের সবজি, পুকুরের মাছ বিক্রি করেন। বেচাকেনার সাথে এখানে স্থানীয়দের একটি মিলন মেলাও বসে। তথ্য ও পণ্যের আদান প্রদান হয়। সৃষ্টি হয় সৌর্হাদের।

আরো পড়ুন