কুমিল্লায় ঘরে বসে স্বাবলম্বী এক গ্রামের কয়েকশ নারী

কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার ৩ নম্বর দূর্গাপুর ইউনিয়নের বড়আলমপুর গ্রামে ভার্মি কমপোস্ট সার তৈরি করে ২৫০টি পরিবারের ২৭০ জন নারী স্বাবলম্বী হয়েছেন। স্বামীর পাশাপাশি এসব নারীদের বাড়তি আয় যোগ হওয়ায় সচ্ছলতা এসেছে পরিবারে।

জানা গেছে, বাড়ির আঙিনায় বা ঘরের পেছনের পরিত্যক্ত জমিতে রিং বসিয়ে সহজেই তৈরি করছেন ভার্মি কমপোস্ট বা কেঁচো সার। এ জন্য নারীদের হাটবাজার-কারখানায় যেতে হচ্ছে না। সার বিক্রির টাকায় নিজের খরচ চালানোর পাশাপাশি সংসারের সমৃদ্ধি আনছেন। এটিই এখন তাদের ভাগ্য বদলের হাতিয়ার।

বড় আলমপুর গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, নারীরা ব্যস্ত ভার্মি কমপোস্ট সার তৈরিতে। দূর-দূরান্ত থেকে কৃষকরা আসছেন। তারা প্রতি কেজি কমপোস্ট ১৫-২০ টাকা দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। রাসায়সিক সারের চেয়ে ভার্মি কমপোস্ট পরিবেশবান্ধব এবং বেশি ফসল উৎপাদন হয় বলে কৃষকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

বড় আলমপুর গ্রামের নারীরা জানান, এক মাসের স্তূপ করে রাখা গোবর খেয়ে কেঁচো মল ত্যাগ করে এবং এর সঙ্গে কেঁচোর দেহ থেকে রাসায়নিক পদার্থ বের হয়ে যে সার তৈরি হয় সেটাই মূলত ভার্মি কম্পোস্ট সার। এটি সহজ একটি পদ্ধতি। এ সার সব ধরনের ফসলের ক্ষেতে ব্যবহার করা যায়। এ সার মাটির পানি ধারণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বায়ু চলাচল বৃদ্ধি পায়। ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়।

রানু আক্তার, সালেহা বেগম ও সেলিনা আক্তার জানান, তারা ছয় বছর আগে বাংলাদেশ একাডেমিক ফররুরাল ডেভেলপমেন্ট (বার্ড) থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তৈরি করছেন ভার্মি কমপোস্ট সার। সাংসারিক কাজের অবসরে তারা এই সার তৈরি ও বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। কেঁচো থেকে তৈরি হয় বলে প্রথমে অনেকেই নাক সিটকাতো। এখন সবাই এই সার তৈরি ও বিক্রি করছেন। পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে কৃষকরা এসে ভার্মি কমপোস্ট সার কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ভার্মি সার তৈরিতে যে কোঁচো ব্যবহার করা হয় সেই কেঁচো তারা বিক্রি করেন হাজার টাকা কেজি দরে।

কৃষক হারুন মিয়া বলেন, ভার্মি কমপোস্ট সার ব্যবহারে গাছের পাতাকাণ্ড বৃদ্ধিসহ ফলন বৃদ্ধি পায়। এই সারের উৎপাদিত ফসল বেশি সবুজ হয়।

বড় আলমপুরসহ আশপাশের গ্রামে নারীদের ভার্মি কমপোস্ট সার তৈরি ও ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমেনা খাতুন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি ঘুরে নারীদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকেন তিনি।

এ ব্যাপারে আমেনা খাতুন বলেন, আমার কর্ম এলাকায় অন্তত ১০ হেক্টর জমিতে সবুজ শাকসবজি উৎপাদন হয়। এরমধ্যে ৭ হেক্টর জমিতেই ভার্মি কমপোস্ট ব্যবহার করেন কৃষকরা।

আরো পড়ুন