কুমিল্লার সাবেক এমপি বাহার-সূচিসহ ৪ শ’ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

কুমিল্লায় ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের সময় কোটবাড়ি বিশ্বরোডের নন্দনপুরে মাসুম মিয়া নামে একজন নিহতের ঘটনায় কুমিল্লা সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল খায়ের মোহাম্মদ (আ ক ম) বাহাউদ্দিন বাহার ও তার মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের পলাতক মেয়র তাহসীন বাহার সূচিসহ ৬২ জনের নাম উল্লেখ করে অন্তত ৪ শ’ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

রবিবার রাতে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় এ হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। কুমিল্লার দিশাবন্দ এলাকার মৃত তাজুল ইসলামের ছেলে আবদুল হান্নান বাদি হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। ৪ আগস্ট ভিকটিম কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২২ নং ওয়ার্ডের উত্তর রামপুরের শাহিন মিয়ার ছেলে মাসুম মিয়া কুমিল্লার সদর দক্ষিণ থানার কোটবাড়ি বিশ্বরোডস্থ নন্দনপুরে শিক্ষার্থী ও আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগের সাথে সংঘর্ষে নিহত হন। প্রথমে তার পরিচয় না পাওয়ায় তাকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছিল। মামলায় আসামিদের সবাই সাবেক এমপি বাহারের ঘনিষ্ঠ এবং তার নিয়ন্ত্রিত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা ও চিহ্নিত ক্যাডার ও অস্ত্রবাজ। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসি মোঃ আলমগীর ভূইয়া।

মামলায় একনম্বর আসামি করা হয় কুমিল্লা সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল খায়ের মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন বাহারকে। দ্বিতীয় আসামি করা হয় তার মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের পলাতক মেয়র তাহসিন বাহার সূচনাকে। এছাড়া কুমিল্লা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম টুটুল, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী যুবলীগের আহবায়ক ও জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাবলু, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন, কুমিল্লা সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আহম্মেদ নিয়াজ পাভেল, কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম রিন্টু, সাধারন সম্পাদক সাদেকুর রহমান পিয়াস, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর হাবিবুর আল আমিন সাদী, ক্রিকেট বোর্ডের কাউন্সিলর সাইফুল আলম রনি (জামাই রনি), কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর সরকার মাহমুদ জাবেদ, কুমিল্লার বাগিচাগাওয়ের কাউসার জামান কায়েস, তালপুকুর পাড়ের সুজন দত্ত, কালিয়াজুড়ির মুরাদ মিয়া, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আজাদ হোসেন, কাউন্সিলার আনোয়ার হোসেন, কাউন্সিলর ইকরামুল হক, রেইসকোর্সের আবদুল কাইয়ূম, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আবুল হাসান , কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর মাসুদুর রহমান মাসুদ, কুমিল্লা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আজিজুল হক শিহানু, কুমিল্লার মধ্যম আশ্রাফপুরের নাজমুল ইসলাম শাওন, ছাত্রলীগ নেতা সালেহ আহম্মেদ রাসেল, কুমিল্লার অশোকতলার শাহ আলম খান, শাসনগাছার আবু হেনা, সাক্কু, ধর্মপুরের শহীদুল ইসলাম চপল, ফখরুল ইসলাম রুবেল, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর গাজী গোলাম সরওয়ার শিপন, কুমিল্লার সদর দক্ষিনের শ্রীমন্তপুরের দুলাল হোসেন অপু, নেউয়ারার জাকির হোসেন, পাথুরিয়াপাড়ার প্রিতুল, শাকতলা মীর পুকুর পাড়ের রবিন, কালা মোস্তফা, অশোকতলার সাইফুল ইসলাম খোকন, শ্রীভল্লভপুরের মো: মেহেদী, পাঁচথুবির চেয়ারম্যান হাসান রাফি রাজু, শিমপুরের মনিরুজ্জামান মনির, ব্রাহ্মণপাড়ার ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান শরীফ, শিমপুরের নিতান্ত, শ্রীভল্লবপুরের আবদুল মালেক ভূঞা, মো: খাইরুল হাসান, মো: হানিফ দুলাল, ঢুলিপাড়ার রাশেদুজ্জামান রাশেদ, শাসনগাছার জালাল, দক্ষিণ বিজয়পুরের মো: জাফর আহাম্মদ শিপন ,মোস্তফাপুরের মুন্সীবাড়ির মো: হাসান, মনোহরপুরের মোখলেছুর রহমান, বাগিচাগাওয়ের শফিকুর রহমানের ছেলে বাপ্পি, দৌলতপুরের ছায়া বিতানের জালাল (পিচ্চি জালাল), কুমিল্লা মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি নুর মোহাম্মদ সোহেল, দক্ষিন চর্থার কাউসার আহমেদ খন্দকার ও আকাশ, মুন্সেফবাড়ির ফরহাদ উল্লাহ, লক্ষীনগরের কবির হোসেন, দিশাবন্দের গোলাম মোস্তফা, দুলাল মিয়া, জিয়াউর রহমান, লক্ষীনগরের জালাল, সুজানগর চৌমুহনীর জালাল ও হানিফসহ অজ্ঞাত ৪ শ’ জনকে আসামী করা হয়।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, আসামীরা দীঘদিন যাবৎ ক্ষমতার অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে কুমিল্লার স্থানীয় জনগনসহ ছাত্রজনতার উপর অন্যায় অত্যাচার করে আসছে। বিবাদীরা উশৃঙ্খল, পরধন লোভী, লুটপাটকারী। গত ০৪ আগস্ট দুপুর ২টার দিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা সদর দক্ষিন মডেল থানাধীন নন্দনপুর সাকিনস্থ কোটবাড়ি বিশ্বরোড পাকা রাস্তার উপর শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছিল। বিকাল চারটার ২০ মিনিটের দিকে ১নং আসামী বাহাউদ্দিন বাহারের হুকুমে বর্ণিত আসামীগন সহ অজ্ঞাতনামা ৩০০/৪০০জন আসামীগন বে-আইনী জনতাবদ্ধ হয়ে প্রাণঘাতী মারাত্মক অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দাঙ্গা সংগঠন করে ২নং আসামী তাহসীন বাহার সূচনার হুকুমে হত্যার উদ্দেশ্যে ছাত্রজনতার উপর অর্তকিতভাবে হামলা করলে ভিকটিম কুমিল্লার ২২ নং ওয়ার্ডের উত্তর রামপুরের শাহিন মিয়ার ছেলে মাসুম মিয়া (২০) সহ আরো অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে জখম প্রাপ্ত হয়, বিবাদীদের এলোপাথাড়ি ছোড়া গুলিতে ভিকটিম মো: মোখলেছ এর ডান পায়ে, ভিকটিম মো: ফাহাদ এর বাম হাতের বাহুতে, ভিকটিম মো: রিমন এবং মো: মুহিন শরীরে ছিটাগুলিতে গুরুতর জখম প্রাপ্ত হয়। এছাড়াও আসামীদের লাঠি সোঠার আঘাতে অনেক ছাত্রজনতা নীলাফুলা জখম প্রাপ্ত হয়। ছাত্রজনতা ছোটাছুটি করে ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হলেও ভিকটিম মাসুম মিয়া(২০) গুরুতর আহত হয়ে ঘটনাস্থলে পড়ে থাকতে দেখে একজন অজ্ঞাতনামা অটোরিকশা ড্রাইভার ভিকটিমকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার ভিকটিমকে মৃত ঘোষণা করে।

তাৎক্ষণিকভাবে তার কোন পরিচয় না পাওয়ায় তার লাশ অজ্ঞাত হিসেবে কোতয়ালী মডেল থানার এসআই(নিঃ) মো: মনির হোসেন সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত শেষে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হলে লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। মামলার বাদি ও ভিকটিমের আত্মীয় স্বজন সামাজিক মাধ্যমে লাশের ছবি দেখে সনাক্ত করে। পরবর্তীতে ভিকটিমের আত্মীয় স্বজনসহ আহত অন্যান্য জখমী সাক্ষীদের সাথে আলোচনা করে আসামীদের নাম ও ঠিকানা সংগ্রহ করে এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হল।

আরো পড়ুন