শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতাটি পাঠ্যবই থেকে বাদ দিয়েছিলেন কামাল চৌধুরী
শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মানে বহুল উচ্চারিত ও পঠিত ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতাটি পাঠ্যবই থেকে বাদ দিয়েছিলেন সাবেক শিক্ষাসচিব ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। কবি ও শিক্ষক কাজী কাদের নেওয়াজের এ কবিতাটি যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন শ্রেণির বাংলা বইয়ে রাখা হলেও ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে তা বাদ দেন কামাল নাসের চৌধুরী।
২৫ জন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয় ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতাটির অবস্থান সম্পর্কে। তাঁরা সবাই নিশ্চিত করেন যে, কবিতাটি এখন কোনো ক্লাসেরই পাঠ্য বইয়ে নেই। সাক্ষাৎকার নেয়া শিক্ষকদের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদরাসার বাংলা শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ রয়েছেন। তাঁরা সবাই বলেছেন, তাঁরা নিজ নিজ ছাত্র জীবনে পাঠ্যবইয়ে এই কবিতাটি দেখেছেন ও পড়েছেন। তারা বলেছেন, শিক্ষকতা পেশার প্রতি আলাদা মূল্যবোধ তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে এই কবিতাটি।
কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছিলেন, এই কবিতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা শিক্ষকতা পেশায় এসেছেন।
ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের শেষদিকে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে বদলি হয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব নিযুক্ত হন। শিক্ষা সচিব হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠ্য বই করার উদ্যোগ নেয় সরকার। পদাধিকার বলে তিনি জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির প্রধান। ১ম থেকে একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষাক্রম, পাঠ্যবই ও পাঠ্যসূচিতে যে কোনো কিছু পরিবর্তন বা পরিমার্জন বা বাদ দিতে এই কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
যদিও হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি রাজনৈতিক ও ধর্মভিত্তিক দলের দাবির মুখে বাদ দেওয়া কয়েকটি গল্প ও কবিতা ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে পুণরায় ফিরে আসে পাঠ্যবইয়ে। ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতাটিও ফিরে আসে। তবে, তখনও বিরোধিতা করেন কামাল চৌধুরী ও নুরুল ইসলাম নাহিদসহ অনেকেই।
এছাড়াও কামাল চৌধুরীর ‘সাহসী জননী বাংলা’ নামে একটি কবিতাকে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা পাঠ্যবইয়ে স্থান করে দেয়া হয়। একই সঙ্গে আবদুল হাকিমের ‘বঙ্গবাণী’ ও আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর ‘কোনো এক মাকে’ কবিতা দুটি বাদ দেয়া হয়।
২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে কামাল চৌধুরী জন প্রশাসন সচিব হন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর মূখ্যসচিব হিসেবে অবসরে যান। পরে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে ভাষা ও সাহিত্যে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে আওয়ামী লীগ সরকার। ছাত্র-জনতার রোষ থেকে বাঁচতে গত ৫ আগস্ট থেকে পলাতক কামাল চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দলীয় সংগীত রচয়িতাও।