কুমিল্লায় গোমতীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে নদীর তীরবর্তী এলাকার ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এতে মুরাদনগর উপজেলা সদরের চৌধুরীকান্দি ও দিলালপুর এলাকায় অন্তত ২০টি পরিবারের বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে অর্ধশতাধিক পরিবার। নদীগর্ভে চলে যাওয়ার শঙ্কায় গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এখনই ভাঙন ঠেকাতে না পারলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে কয়েকটি গ্রামসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা সদরের চৌধুরীকান্দি ও দিলালপুর এলাকায় নদীর তীরবর্তী ঘরবাড়ি ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এতে ভিটাবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে আনোয়ার হোসেন, রিপন মিয়া, শহিদ মিয়া, রাজু মিয়া, সাজু মিয়া, আনিছ মিয়া, শরিফ মিয়া, শাহিনুর বেগম, সকিনা বেগম, হাছান মিয়া, নুরুল ইসলাম, নয়ন মিয়া, হক মিয়াসহ অন্তত ২০টি পরিবার। এছাড়াও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে কবরস্থান, বৈদ্যুতিক খুঁটি, হাঁস-মুরগির খামার ও মাছের পুকুরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। বর্তমানে নদী তীরবর্তী আরও বেশ কয়েকটি পরিবার নদীভাঙন আতঙ্কে খোলা আকাশের নিচে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। অনেকেই বসতভিটাসহ একমাত্র আশ্রয়স্থলটুকু ভেঙে যাওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। সর্বক্ষণ ভাঙন আতঙ্কে, অনিদ্রায়, অনাহারে প্রহর গুনছেন সহায় সম্বলহীন এই মানুষগুলো।
স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, গত ১০ বছরে আমাদের বসতবাড়িসহ আশপাশের প্রায় দেড় শতাধিক বাড়িঘর গোমতী নদীর ভাঙনের ফলে বিলীন হয়েছে। বাপ-দাদার ভিটেমাটির কোনো চিহ্নই এখন নেই। বর্তমানে যেখানে আছি সেটিও বিলীন হওয়ার পথে। পরিবার-পরিজন নিয়ে খুব আতঙ্কে রয়েছি। সব সরকারের আমলেই আমরা এ বিষয়টি জানিয়েছি। জনপ্রতিনিধিরা এসে দেখে নদীভাঙন রোধের আশ্বাসও দিয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
ঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া সিএনজিচালক রিপন মিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার সব শেষ হইয়া গেছে। বাচ্চা-কাচ্চা নিয়া এখন কই থাকমু। আমার থাকনের কোনো জায়গা নাই। সরকার যদি আমাগোরে থাকনের ব্যবস্থা করে না দেয় তাহলে মরণ ছাড়া উপায় নাই।
এ বিষয়ে মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সিফাত উদ্দিন বলেন, ইতোমধ্যে নদী পাড়ের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করে কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছে একটি তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে। তাদের সহযোগিতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে নদীভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে।
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, গোমতীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে যে ভাঙন দেখা দিয়েছে ইতোমধ্যেই আমরা সেগুলোর একটা তালিকা করে উপর মহলে পাঠিয়েছি। নদীভাঙন রোধে আমাদের কোনো নিজস্ব বাজেট নেই, তাই আমরা নিজে থেকে কিছু করতে পারছি না।
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com