ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ আওয়ামী দোসরদের অনেকেই দেশ ছাড়তে মরিয়া। দালাল সিন্ডিকেটের সহায়তায় কেউ কেউ ভারতে ঢুকতে কোটি টাকাও দিয়েছেন। তবে ২০ লাখের নিচে কেউ ঢুকতে পারেননি। কেউ আবার খুইয়েছেন মোটা অঙ্কের নগদ টাকা ও ডলার। কাউকে দিতে হয়েছে জীবনও। তবু ভারতে পালানোর মিছিল থামছে না। এ সুবাদে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে থাকা চিহ্নিত দালালদের পোয়াবারো।
অভিযোগ আছে, ভিআইপিদের অনেকে পার হওয়ার সময় দুদেশের প্রশাসনের লোকজনের সহায়তা নিয়েছেন। যদিও এ বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে নারাজ। আওয়ামী দোসরদের সাজানো প্রশাসন হওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে অনেকে তাদের নির্বিঘ্নে দেশ ছাড়তে সব ধরনের সহায়তা দিয়েছেন এবং এখনো দিচ্ছেন।
এদিকে যারা ইতোমধ্যে ভারতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন তাদের থাকা-খাওয়ার খরচ নিয়ে তেমন কোনো টেনশন নেই। দেশ থেকেই হুন্ডিতে দেদার যাচ্ছে টাকা। আবার কারও কারও মোটা অঙ্কের অর্থ তৃতীয় পক্ষ পুরোটাই গায়েব করে দিয়েছেন। এ রকম কিছু খবরও যুগান্তরের হাতে এসেছে। অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী ভিআইপিদের অনেকে ভারত থেকে দালালের মাধ্যমে নেপাল হয়ে পাড়ি জমিয়েছেন কাঙ্ক্ষিত দেশে। কেউ কেউ ভারত থেকে সরাসরি চলে গেছেন ইউরোপের কোনো দেশে। যেখানে আগে থেকেই তাদের বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। কারও কারও স্ত্রী-সন্তানও নাগরিকত্ব নিয়ে আছেন বহাল তবিয়তে।
কুমিল্লার আলোচিত এমপি আ ক ম বাহার উদ্দিন বাহার ও তার মেয়ে সাবেক সিটি মেয়র তাহসিন বাহার সূচনা এখন ভারতে অবস্থান করছেন। তবে তারা কখন কীভাবে ভারত গেলেন এ নিয়ে কুমিল্লায় নানা আলোচনা চলছে। কেউ কেউ বলছেন, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল এলাকার ইউপি সদস্য এবং চিহ্নিত চোরাকারবারি সুমনের সহায়তায় তারা ভারতে পৌঁছাতে সক্ষম হন। ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে পরিবারসহ বাহারকে ভারতে পৌছে দেওয়া হয়।
অবশ্য বাহার ও তার পরিবার ছাড়াও দালালদের সহায়তায় কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে আরও বেশ কয়েকজন ভিআইপি ভারতে পৌঁছান। তাদের মধ্যে আছেন কুমিল্লা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবু জাহের, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদের অপসারিত চেয়ারম্যান আবু তৈয়ব ওরফে অপি, সদর উপজেলার অপসারিত চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম টুটুল, ভাইস চেয়ারম্যান পাভেল, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ওরফে শহীদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি রিন্টু, সাধারণ সম্পাদক পিয়াস, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) প্যানেল মেয়র হাবিবুর আল শাদী, সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের ব্যক্তিগত সহকারী কামাল হোসেন।
সূত্র জানায়, কুমিল্লা সীমান্তের বিস্তীর্ণ এলাকা অরক্ষিত। বিশেষ করে শশীদল, তেতাভূমি, চরানল, খারেরা, সংকুচাইল, মাধবপুর, বড়জালা, নিশ্চিন্তপুর ও গোলাবাড়ী সীমান্ত এলাকা দিয়ে সহজেই দেশ ছাড়ছেন অনেকে। বর্তমানে এসব এলাকায় দালালচক্রের শতাধিক সদস্য সক্রিয়। এদের মধ্যে বুড়িচং উপজেলার খারেরা সীমান্তের হানু মিয়া, রমিজ মেম্বার, মাদক ব্যবসায়ী শাহীন, জহির, মতিনগরের ওয়াসিম, বিষ্ণপুরের কামাল, কেরানীনগরের সাইফুল, গোলাবাড়ীর সবুজ, নিশ্চিন্তপুরের আমির হামজা, রাসেল ও মাইনুদ্দিন অন্যতম।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দালালদের সহায়তায় একের পর এক আওয়ামী লীগ নেতারা ভারতে পালাতে সক্ষম হওয়ায় স্থানীয়দের অনেকে ক্ষুব্ধ। এ কারণে এলাকায় অপরিচিত কাউকে দেখে সন্দেহ হলে তাদের ধরে বিজিবির হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে খারেরা সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে পালানোর সময় মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএম শাহাবুদ্দিনকে আটকের পর বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে কুমিল্লা এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত ৬০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল জাবের বিন জাব্বার বলেন, মানব পাচার, ভারতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ রোধ এবং চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে বিজিবি সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে। চলমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অপরাধীদের অনেকেই সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ কারণে সীমান্তের বিশেষ এলাকাগুলোতে বিজিবি সদস্যদের টহল আরও জোরদার করা হয়েছে।
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com