ছাত্র-জনতা গণহত্যার অভিযোগ মাথায় নিয়ে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারী হাসিনার আশ্রয়দাতা দেশ ভারত থেকে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য নিম্নমানের মাহিন্দ্রা গাড়ি আমদানি করায় সমালোচনার ঝড় বইছে। পুলিশের কাজে গতিশীলতা বাড়ানোর নামে তৃতীয় গ্রেডের এই গাড়িগুলো ক্রয় করা কে কেবলই অর্থের অপচয় হিসেবে দেখছেন নেটিজেনরা। পুলিশের কাজে গতি বাড়া তো দূরের কথা লক্কড়ঝক্কড় এসব গাড়ি আমদানি করা হলে আধুনিক বিশ্বে সেবার মানের দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়বে আমাদের পুলিশ বাহিনী।
সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ডিএমপির ৫০ থানায় যুক্ত হচ্ছে নতুন মাহিন্দ্রা বোলেরোর গাড়ি ও ইসুজু, ডি ম্যাক্স গাড়ি। ইতিমধ্যে হস্তান্তর হয়েছে ১০টি মাহিন্দ্রা বোলেরোর গাড়ি। পুলিশের কাজে আগে বেশিরভাগই জাপানী গাড়ি ব্যবহার করা হতো।
স্বৈরাচার মুক্ত নতুন বাংলাদেশে ভারত থেকে পুলিশের জন্য আবারো নিম্নমানের গাড়ি আনা হচ্ছে এমন সংবাদ ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশপ্রেমী সচেতন জনতা এ নিয়ে চরম ক্ষোভ জানিয়ে দ্রুত গাড়ি ক্রয় চুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। তারা চীন কিংবা জাপানের মত উন্নয়ন সহযোগী দেশ থেকে উন্নতমানের গাড়ি আমদানির পরামর্শ দিয়েছেন।
সমালোচকরা বলছেন, ভারতে মাহিন্দ্রা বোলেরোর গাড়ি ও ইসুজু,ডি ম্যাস্ক গাড়িগুলো নিম্নমানের হওয়ায় খুবই অল্প সময়ের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায়। এই গাড়িগুলো রক্ষণাবেক্ষণের খরচও বেশি।
অন্যদিকে, যে ভারত সীমান্তে বাংলাদেশীদের পাখির মত হত্যা, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেয়া, নগ্ন হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতন্ত্র হত্যা, পানি ছেড়ে বাংলাদেশে বন্যার সৃষ্টিসহ নানাভাবে অনৈতিক হস্তক্ষেপ করে সেই ভারত থেকে গাড়ি আনা বর্তমান সরকারের নীতির পরিপন্থী। অতি শীঘ্রই এই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।
ফেসবুকে মোঃ শফিকুল ইসলাম লিখেছেন, এর চেয়ে ভাল গাড়ি কি নাই? উন্নত দেশে পুলিশ পরিবহনের জন্য যে টাইপের গাড়ি ব্যবহার করে ঐ রকম গাড়ি কেনা প্রয়োজন। রুচিশীলতার মাধ্যমেই রুচিসম্মত মনোভাব তৈরি করা যেতে পারে।
ওয়াসীম আকরাম নিকন লিখেছেন, এত নিম্নমানের পচা কোম্পানির গাড়ি তাও আবার আমাদের প্রতিবেশী দেশের থার্ড ক্লাস গাড়ি। ছয় মাসও ঠিকমতো সার্ভিস দেবে না। এটা অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই না। হাসিনা সব জানার পরেও কেবল ভারতকে খুশি করে নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে দেশের স্বার্থপরিপন্থী এ ধরনের বহু চুক্তি করে গেছেন। অতি শীঘ্রই তা বাতিল করতে হবে।
মিনারুল ইসলাম লিখেছেন, ইন্ডিয়া ছাড়া কি আর কোন দেশ গাড়ি বানায় না। পুলিশকে ভারতীয় কোম্পানির গাড়ি কেনো দেয়া হলো? জাপানি গাড়ি দেয়া হোক।ইন্ডিয়ান মাহিন্দ্রা গাড়ি ছাড়া আর কোন গাড়ি ছিল না? চায়না গাড়িও এখন অনেক দেশে পছন্দের তালিকায় প্রথম দিকে রয়েছে। চীন থেকেও আনা যেতে পারে।
সমালোচনা করে তুষার মাহমুদ লিখেছেন, ভারত প্রতিনিয়ত সীমান্তে বাংলাদেশীদের পাখির মত হত্যা করছে, নগ্ন হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতন্ত্র হত্যা করেছে, সম্প্রতি পানি ছেড়ে বাংলাদেশে বন্যার সৃষ্টি করেছে। সর্বশেষ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যার দায় নিয়ে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশীদের মনে ক্ষোভ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। নানাভাবে অনৈতিক হস্তক্ষেপকারী ভারত থেকে নিম্নমানের গাড়ি আমদানি করা হলে ছাত্র-জনতার ত্যাগের প্রতি অবজ্ঞা করা হবে।
এইচ এম দেলোয়ার লিখেছেন, অনতিবিলম্বে ভারতীয় গাড়ি বাদ দিয়ে জাপানি গাড়ি ক্রয় করতে হবে এবং ভবিষ্যতে যাতে সরকারি যেকোন কাজে ভারতীয় গাড়ি ক্রয় করা না হয় সেদিকে যথেষ্ট নজর রাখতে হবে।
পুলিশের কেনাকাটা সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পুলিশের কেনাকাটা স্থগিত রাখার পর জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে অন্তত ২০০ ডাবল কেবিন পিকআপ কেনার সম্মতি পাওয়া গেছে। জনবলের তুলনায় এখনো ৪ হাজার ৫২৯টি যানবাহনের ঘাটতি আছে বলে পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গণমাধ্যম বিভাগের উপকমিশনার তালেবুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, ইতিমধ্যে ১০টি থানায় যে ১০টি গাড়ি হস্তান্তর করা হয়েছে সেগুলো ভারতের মাহিন্দ্রা গাড়ি। বাকি যে ৪০টি গাড়ি আসার কথা রয়েছে তা কোন দেশের এ মুহুর্ত্যইে তিনি তা বলতে পারছেন না।
সূত্রঃ ইনকিলাব
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com