দেশকে ভারতীয় আগ্রাসন থেকে মুক্ত করতে বাঘের মতো লড়াই করব: মাসুদ সাঈদী

আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী বলেছেন, বাংলাদেশকে নিয়ে প্রতিবেশি কোনো দেশ যদি কোনো ষড়যন্ত্র করে, তাহলে এ দেশের মানুষ সেই ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে। শত শত মায়ের বুক খালি করা খুনি হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে। ভারত নিজেকে বন্ধু রাষ্ট্র বলে দাবি করলেও কখনোই তারা বন্ধুত্বের প্রশ্নে উত্তীর্ণ কোনো রাষ্ট্র নয়। তবুও প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত বাংলাদেশের পাশে থাকবে এটাই প্রত্যাশা করে বাংলাদেশের জনগণ।

বন্দিবিনিময় চুক্তির মাধ্যমে ভারতে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে মাসুদ সাঈদী বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করায় উগ্রবাদীরা উৎসাহ পাচ্ছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার সাহস পাচ্ছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের জনগণের সঙ্গে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। কিন্তু সে দেশের সরকারের উসকানিতে এসব হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ ব্রিটিশকে ভয় পায়নি। পশ্চিম পাকিস্তানের কামান ও ট্যাংক ভয় পায়নি। তাই বাংলার মানুষের আর ভারতকে ভয় পাওয়ার প্রশ্নই আসে না।

জিয়ানগর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পিরোজপুর শাখার নাজিরপুরের ৩নং দেউলবাড়ী দোবরা ইউনিয়ন কর্তৃক গাওখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

ভারতের সরকারের সমালোচনা করে মাসুদ সাঈদী বলেন, ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই বাঁধ ছেড়ে দিয়ে আমাদের দেশকে পানির নিচে তলিয়ে দেয়, আবার শুষ্ক মৌসুমে পানি বন্ধ করে রাখে, সীমান্তে পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যা করবে- এটা হতে পারে না।

তিনি বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দোসররা এখনো অন্তবর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছে। তারা সরকারকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত করছে। এসব দোসরদের সহযোগিতায় আওয়ামী দালালেরা রাজপথে কখনো আনসার লীগ, কখনো সুবিধাবঞ্চিত লীগ, কখনো চাকরী প্রত্যাশী লীগ, কখনো কিস্তি লীগের নামে ২/৫ জনের চোরাগোপ্তা মিছিল করার সাহস পাচ্ছে। অবিলম্বে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী দালালদেরকে বহিষ্কার করতে হবে।

জুলাই বিপ্লবে নিহত শহিদের রক্তের ঋণ শোধ করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়ে মাসুদ সাঈদী বলেন, এ দেশে আর কোন স্বৈরাচারের ঠাঁই হবে না। দেশের প্রশ্নে, স্বাধীনতার প্রশ্নে আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। যে বা যারা বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করবেন তাদেরকে দেশের জনগন ঘৃণাভরে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবে।

দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো আপস নয় উল্লেখ করে মাসুদ সাঈদী বলেন, আল্লামা সাঈদী বলেছিলেন- বিড়ালের মতো পাঁচশো বছর বাঁচতে চাইনা, বাঘের মতো এক ঘন্টা বাঁচতে চাই। আমরাও দেশকে ভারতীয় আগ্রাসন থেকে মুক্ত করতে, সন্ত্রাস ও দূর্নীতি মুক্ত করতে বাঘের মতো লড়াই করে যাবো। সোনার বাংলা গড়তে হলে এদেশ থেকে দুর্নীতির ক্যান্সার উপড়ে ফেলতে হবে। এজন্য রাজনৈতিক দল ও নেতাদের রাজনৈতিক চরিত্র আগে ঠিক করতে হবে। নেতারা দুর্নীতিমুক্ত না হলে দেশ দুর্নীতিমুক্ত হবে না।

মাসুদ সাঈদী বলেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, ইসলাম সুরক্ষা ও দেশ গঠনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান সুষ্পস্ট। জামায়াতের ১১জন নেতা-কর্মীকে ফাঁসি দিয়ে, কারাগারে রেখে ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনা হত্যা করা করেছে। সারাদেশে জামায়াতের অফিস বন্ধ করে দিয়েছিল। গুম, খুন, জুলুম করা হয়েছে৷ তাও জামায়াতের লক্ষ-কোটি নেতা-কর্মী দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব কিংবা ইসলামের প্রশ্নে একচুলও পিছপা হয়নি এবং জালিমের সাথে এক সেকেন্ডের জন্যও আপোষ করেনি।

নাজিরপুর উপজেলার ৩নং দেউলবাড়ী দোবরা ইউনিয়ন সভাপতি মোঃ এনামুল হকের সভাপতিত্বে ও ইউনিয়ন সেক্রেটারী মাওলানা আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম, সহ-সভাপতি মাওলানা মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় বিশাল গণসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, পিরোজপুর জেলার নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুর রব। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা সেক্রেটারী অধ্যক্ষ জহিরুল হক। গণসমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন নাজিরপুর উপজেলা আমীর মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, উপজেলা সেক্রেটারী কাজী মোসলেহ উদ্দিন, নাজিরপুর ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এড. আবু সাইদ মোল্লা, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির নাজিরপুর উপজেলা শাখা সভাপতি শেখ আবু হানিফসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

আরো পড়ুন