কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্তে চোরাচালানের অভিযোগে উদ্ধার করা ভারতীয় গরু আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে বিজিবির বিরুদ্ধে। বাহিনীটির কতিপয় সদস্যদের এমন কর্মকাণ্ডে এলাকায় সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) উপজেলার দাঁতভাঙা বিজিবি ক্যাম্পে এ ঘটনা ঘটে। ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার কায়ছার আমির গরু আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা। অভিযানকালে উদ্ধার করা ৯টি ভারতীয় গরু ক্যাম্পে নেওয়ার একটি ভিডিও ফুটেজ এই প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে।
তবে এ নিয়ে প্রশ্ন করলে এই প্রতিবেদককে গরুর পলাতক মালিক দেখিয়ে মামলার আসামি করার হুমকি দিয়েছেন বিজিবি ৩৫ ব্যাটালিয়নের (জামালপুর) সহকারী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত অ্যাডজুটেন্ট) মো. শামছুল হক।
সীমান্ত সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের চর গয়টাপাড়া গ্রামের জহির রহমানের বসতবাড়িতে সীমান্তপথে চোরাচালানের মাধ্যমে আসা ভারতীয় গরু থাকার অভিযোগে শনিবার সকালে অভিযান চালায় বিজিবি। অভিযানের খবরে পালিয়ে যান জহির। দাঁতভাঙ্গা বিজিবি ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা জহিরের বাড়ি থেকে ৯টি ভারতীয় গরু উদ্ধার করে ক্যাম্পে নিয়ে যান। পরে সিজার তালিকায় ৮টি গরু উদ্ধার দেখিয়ে রৌমারী কাস্টমসে জমা দেয় বিজিবি। আটক ওই আটটি গরুর আনুমানিক সিজার মূল্য দেখানো হয় ১০ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিজিবি ওই দিন জহিরের বাড়ি থেকে চোরাচালানে আসা ভারতীয় ৯টি গরু আটক করে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। অভিযানকালে আমি নিজেও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। পরে শুনেছি তারা একটি গরু ক্যাম্পে রেখে আটটি গরু কাস্টমসে জমা দিয়েছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রৌমারীর স্থানীয় এক সাংবাদিক বলেন, ‘উদ্ধার ভারতীয় গরু যখন ক্যাম্পে নেওয়া হয় তখন আমি উপস্থিত ছিলাম। আমি নিজেও দেখেছি ৯টি গরু। কিন্তু পরে বিজিবি একটি গরু কম দেখিয়ে সিজার লিস্ট করে কাস্টমসে দেয়। এখানে রক্ষকই ভক্ষক!’
তবে বিজিবি’র কোম্পানি কমান্ডার দাবি করেন, ১০ পার্সেন্ট রাখার নিয়ম আছে। যদিও এর কোনও আইনি ভিত্তি দেখাতে পারেনি বিজিবি।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দাঁতভাঙ্গা বিজিবি ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার কায়ছার আমির বলেন, ‘আপনি সাক্ষাতে কথা বলেন। উদ্ধার গরুর ১০ পার্সেন্ট রাখার নিয়ম আছে। আপনি সাক্ষাতে কথা বলেন।’ পার্সেন্টেজ এর আইনি ভিত্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে তার কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি এই ক্যাম্প কমান্ডার।
জামালপুর ৩৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালকের নম্বরে ফোন দিলে তিনি কেটে দেন। পরে ব্যাটালিয়নে সহকারী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত অ্যাডজুটেন্ট) মো. শামছুল হকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আটটি গরু আটক করা হয়েছে। সেটাই সিজার লিস্ট করে জমা দেওয়া হয়েছে। ৯টি গরু উদ্ধারের তথ্য সঠিক নয়।’
৯টি গরু উদ্ধার করে একটি আত্মসাতের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিজিবির এই কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনার গরু? আপনি মালিক? আমরা মালিককে খুঁজছি। তাহলে আপনাকে পলাতক আসামি করে মামলা দেবো। মালিক খুঁজতেছি আমরা।’
৯টি গরু ক্যাম্পে নেওয়ার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে, এমন তথ্য জানালে শামসুল হক বলেন, ‘ আচ্ছা রাখেন আপনি’। এই বলে ফোনের সংযোগ কেটে দেন তিনি।
রৌমারী কাস্টমস এর শুল্ক গুদাম কর্মকর্তা মোহাম্মদ গোলাম হোসেন বলেন, ‘দাঁতভাঙ্গা বিজিবি ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ ৮টি ভারতীয় গরু কাস্টমসে জমা দিয়েছেন। ওই গরুগুলো বিজিবি সিজার মূল্য দেখিয়েছে ১০ লাখ ৪০ হাজার টাকা।’ ১০ শতাংশ রেখে দেওয়ার নিয়ম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিজিবির আইনে এমন নিয়ম রয়েছে কিনা, তা জানি না।’
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com