দেশের প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে লাগা আগুন নেভাতে গিয়ে ঘাতক ট্রাকের চাপায় প্রাণ হারানো ফায়ার সার্ভিসের কর্মী সোয়ানুর জামান নয়নের মা নার্গিস বেগম একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। জ্ঞান ফিরলে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে বলছেন, ‘আমার কেউ নাই, একটাই ছেলে’।
নিহত সোহানুর জামান নয়ন (২৪) রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বড়বালা ইউনিয়নের ছড়ান আটপড়িয়া গ্রামের কৃষক আখতারুজ্জামানের ছেলে। তিনি দুই বছর ধরে ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত ছিলেন। সংযুক্ত ছিলেন তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নয়নের বাবা আখতারুজ্জামান পেশায় কৃষক। তার এক মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে নয়ন ছিল ছোট। আরও দুই বছর আগে ফায়ার সার্ভিসে যোগ দেন টগবগে এই তরুণ। নয়নই ছিল পরিবারের ভরসা। তাকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখতেন তার মা-বাবা ও বোন। কিন্তু হঠাৎ এমন মৃত্যুতে যেন পুরো পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেল। এমন মৃত্যু তারা মেনে নিতে পারছেন না। আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে থাকা ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সড়কে ব্যারিকেড না দেওয়ায় সেই সড়ক দিয়ে ট্রাক ঢুকে পড়ে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু হয়েছে।
সোয়ানুর জামান নয়নের ভাতিজা জানান, নয়ন চাকরির প্রতি দায়িত্বশীল ছিলেন। আগুনের ঘটনায় রাস্তায় পুলিশ ব্যারিকেড দিলে হয়তো এমনটা ঘটতো না। নয়নের পরিবারের পাশে যেন সরকার এগিয়ে আসে তাদের চাওয়া।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ২টার দিকে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুনের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পর্যায়ক্রমে ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে নামে। দায়িত্ব পালনে তেজগাঁও থেকে ছুটি গিয়েছিলেন স্পেশাল ইউনিটের সদস্য নয়নও। যুক্ত হয়েছিলেন আগুন নেভানোর কাজে। পানির পাইপ সংযোগ দিতে সচিবালয়ের রাস্তার উল্টো পাশে যাওয়ার সময় বেপরোয়া গতির একটি ট্রাক তাকে ধাক্কা দিলে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলেও বাঁচানো যায়নি।
তবে রাত পোহাইলেই সকালেই ছুটিতে বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল নয়নের। রাতেই ব্যাগও গুছিয়ে রেখেছিলেন জানিয়ে তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনের ফায়ার ফাইটার রাজিব বলেন, গত রাতে আমরা একসঙ্গে খাবার খেয়েছি। একসঙ্গে ভলিবলও খেলেছি। রাতে সাইরেন বেজে ওঠে। তাৎক্ষণিক ড্রাইভার ১০ জন সদস্য নিয়ে মিনিবাসে করে এখানে আসেন। আমরা ১০ মিনিট পরে আসি। নয়ন পানির পাইপ কাঁধে নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিল। এ সময় একটি দ্রুতগতির ট্রাক পেছন থেকে তাকে ধাক্কা দিলে তিনি রাস্তায় পড়ে যান। পরে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, তারা আগুন লাগার খবর পায় গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে। দিবাগত রাত ১টা ৫৪ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছান ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট কাজ করে। পরে ইউনিটের সংখ্যা বাড়ানো হয়। সবশেষ ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছিল। আজ সকাল ৮টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসা দাবি করা হয়। তবে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দুপুর পৌনে ১২টায় আগুন পুরোপুরি নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম হন।
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com