বাংলাদেশ আমাদের হারিয়ে যাওয়া ভাই: পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী

পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার বলেছেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের হারিয়ে যাওয়া ভাই। বাংলাদেশকে সম্ভাব্য সব উপায়ে সহযোগিতা করবে পাকিস্তান।’ বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেছেন বলে জানিয়েছে পাকিস্তানি গণমাধ্যম মিনিট মিরর।

সংবাদ সম্মেলনে গাজায় চলমান গণহত্যার বিষয়ে পাকিস্তানের দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর প্রকাশ্য নিন্দা জানান। তিনি বলেন, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কার্যকরভাবে তার দায়িত্ব পালন করছে। তিনি সকল আন্তর্জাতিক ফোরামে কাশ্মীর ইস্যু উত্থাপনের জন্য পাকিস্তানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক সবসময়ই একটা সংবেদনশীল বিষয় ছিল। ১৯৭১ সালের ইতিহাস বিবেচনায় এ নিয়ে আলোচনা, রাজনীতি কম হয়নি। তবে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে আওয়ামী লীগ আমলে, বিশেষত যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রেক্ষাপটে।

তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নানা পরিবর্তনের মতো এখানেও কিছুটা ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। আভাস পাওয়া যাচ্ছে সম্পর্কের নতুন রসায়নের। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে অনেক দেশের মতো শুভেচ্ছা জানিয়েছে পাকিস্তানও। বাংলাদেশে পাকিস্তানের দূতাবাসেরও বেশ তৎপরতা দেখা গেছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার দেখা করেছেন বর্তমান সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে। দেখা করেছেন বিএনপির নেতাদের সাথেও।

একই সাথে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা ফি বাদ দিয়েছে পাকিস্তান। সরাসরি ফ্লাইট চালু করার আগ্রহ দেখিয়েছে। পাকিস্তান-বাংলাদেশ সরাসরি পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের ঠিক প্রতিবেশী রাষ্ট্র না হলেও বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাণিজ্যিক সম্পর্ক একটা বড় দিক। অবশ্য আওয়ামী লীগ আমলেও বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বন্ধ ছিল না।

বাংলাদেশে চামড়া, টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস খাতে পাকিস্তানিদের বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে পাকিস্তান বাণিজ্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের আমদানি তালিকায় রয়েছে তুলা, কাপড়, বিভিন্ন রাসায়নিক, খনিজ ও ধাতব উপাদান, বৈদ্যুতিক সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি ইত্যাদি। বাংলাদেশ থেকে পাট ও পাটজাত পণ্য, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, সিনথেটিক ফাইবার, টেক্সটাইল সামগ্রী, কিছু চিকিৎসায় ব্যবহার্য সামগ্রী, এমন বেশ কিছু জিনিস রপ্তানি হয় পাকিস্তানে।

পাকিস্তানের সরকারি তথ্যমতে ২০২৩ সালেও বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে রপ্তানি হয়েছে ৬ কোটি ৩৩ লক্ষ ডলারের বেশি পণ্য, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয়েছে ৬৫ কোটি ৫ লক্ষ ডলারের উপরে পণ্য। ২০১৯ এও ৮৩ কোটি ডলারের উপরে আমদানি হয়েছে পাকিস্তান থেকে।

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানের অনুরোধে গত ২৯ সেপ্টেম্বর লাল তালিকা থেকে মুক্ত হয়েছে দেশটির সব ধরনের পণ্য। তবে শুধু এক্ষেত্রে নয়, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক উন্নয়নে আরও অনেক তৎপরতা দেখা যাচ্ছে।

আরো পড়ুন