বিয়েতে মেয়ের বয়স ১৬, ছেলের ১৮ করার দাবি
বাল্যবিয়ে রোধে বিয়ের ক্ষেত্রে কনের বয়স ১৬ এবং বরের বয়স ১৮ বছর করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুসলিম নিকাহ রেজিস্ট্রার কল্যাণ সমিতি। এছাড়া নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে ও তালাকের হলফনামা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়াসহ ১৬ দফা দাবি জানিয়েছে সংগঠরটি।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ মুসলিম নিকাহ রেজিস্ট্রার কল্যাণ সমিতি। ‘বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রারদের যৌক্তিক দাবি সংক্রান্ত’ এ সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ মুসলিম নিকাহ রেজিস্ট্রার কল্যাণ সমিতির নির্বাহী সভাপতি অধ্যক্ষ ড. মো. গোলাম কিবরিয়া। লিখিত বক্তব্যে তিনি বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রারদের দাবি, নারী অধিকার সংস্কার কমিটিকে ‘ইসলাম বিরোধী’ প্রস্তাবনা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে ‘বিবাহ কর’ বাতিল করায় আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকে ধন্যবাদ জানান।
বিবাহ ও তালাক বিষয়ে বাংলাদেশ মুসলিম নিকাহ রেজিস্ট্রার কল্যাণ সমিতির দাবিগুলো হলো-
নিকাহ রেজিস্ট্রারদের সুরক্ষা আইন প্রনয়ন করতে হবে, নিকাহ রেজিস্ট্রার অস্থায়ী নিয়োগ বন্ধ রাখতে হবে। নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগের জন্য একটি নতুন কমিটি গঠন করে প্যানেলের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করতে হবে। নিকাহ রেজিস্ট্রারের সংশ্লিষ্ট যোগ্যতা সম্পন্ন সন্তানকে শূন্য পদে পিতার স্থলে সরাসরি নিয়োগের বিধান রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। বাল্যবিয়ে রোধে বিয়ের ক্ষেত্রে কনের বয়স ১৬ এবং বরের বয়স ১৮ বছর করা।
নিকাহ রেজিস্ট্রারদের শিক্ষাগত যোগ্যতা আলিম পাশের পরিবর্তে কামিল করতে হবে। নিকাহ রেজিস্ট্রারদের ছুটিজনিত সময়ে নিকাহ রেজিস্ট্রার হওয়ার যোগ্যতা রাখে এমন ব্যক্তিকে দায়িত্ব প্রদানের বিধান রাখা। প্রবাসীদের বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি নির্ধারণ করা। একাধিক স্বামী গ্রহণ ইসলামি শরিয়তে শাস্তিযোগ্য অপরাধ, তাই যেসব নারী আগের স্বামীকে তালাক কার্যকর না করে বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে একাধিক বিয়ে করবেন তাদের বিষয়ে শাস্তির বিধান চালু করা।
এছাড়াও নিকাহনামায় প্রদত্ত তথ্য ভুল হলে প্রয়োজনীয় সংশোধনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। সব বিয়ে ও তালাক অফিসে এসে রেজিস্ট্রি করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে। কনে যে এলাকার স্থায়ী বা অস্থায়ী বাসিন্দা সে এলাকার নিকাহ রেজিস্ট্রার ওই বিয়ে নিবন্ধন করবেন মর্মে বিধান করতে হবে। নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে ও তালাকের হলফনামা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। নিকাহ রেজিস্ট্রারদের দাপ্তরিক কাজের জন্য অফিস সহায়ক রাখার বিধান রাখতে হবে। বিয়ে ও তালাকের বালামে কিছু সংযোজন, বিয়োজন ও সংশোধন করতে হবে। বিয়ে রেজিস্টার ভলিয়মে বর-কনের ছবি সংযুক্ত করা ও ফিঙ্গারপ্রিন্টের ব্যবস্থা করতে হবে।
এসময় নারী অধিকার সংস্কার কমিটিকে ‘ইসলাম বিরোধী’ প্রস্তাবনা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে ৪ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন মো. গোলাম কিবরিয়া। সুপারিশগুলো হলো-
উত্তরাধিকার আইনে নারী-পুরুষের সমান অধিকার সুস্পষ্ট কোরআনের আইনের লঙ্ঘন, যা প্রস্তাব বা বাস্তবায়ন থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিয়ে, বিয়ে বিচ্ছেদ, সন্তানের অভিভাবকত্ব, উত্তরাধিকারে সব ধর্মের নারী-পুরুষের জন্য অভিন্ন আইন থাকার প্রস্তাব করা হয়েছে- এ প্রস্তাব ইসলাম ধর্মের অবমাননা। এ প্রস্তাবের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদের পারিবারিক আইন অবিলম্বে অভিন্ন ও সর্বজনীন পারিবারিক আইন প্রণয়নে বিরত থাকা। নারী অধিকার সংস্কার কমিটিতে কয়েকজন অভিজ্ঞ আলেমকে সংযুক্ত করে সংস্কার প্রস্তাব পেশ করা। এরপর তা অভিজ্ঞ আলেম সমাজের মাধ্যমে যাচাই-বাচাই করে তা আইনে পরিণত করা।
সংবাদ সম্মেলনে ‘বিবাহ কর’ বাতিল করায় আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকে বাংলাদেশ মুসলিম নিকাহ রেজিস্ট্রার কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানানো হয়।