ফিলিস্তিন ও দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে বিতর্কিত পোস্ট করেছেন মেহেরুন নেছা নামের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের এক শিক্ষিকা। তার এ পোস্টকে কেন্দ্র করে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেছেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে ক্ষমাপ্রার্থনা করে ফের আরেকটি পোস্ট করেন এই শিক্ষিকা।
এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কলেজটির প্রশাসন। মেহেরুন নেছা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
গত রোববার (৬ এপ্রিল) গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা ইস্যুতে ফেসবুকে পোস্ট করেন অধ্যাপক মেহেরুন নেছা। তার পোস্টের পর সর্বত্র প্রতিবাদের ঝড় তোলেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। ওই শিক্ষককে বয়কটের ডাক দেন তারা। বিভাগ থেকে তাকে অপসারণ না করলে ক্লাস বর্জনের ঘোষণাও আসে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। ঘটনায় আলোড়ন সৃষ্টি হলে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কলেজ প্রশাসন।
বিতর্কিত ওই পোস্টে অধ্যাপক মেহেরুন নেছা লিখেন, 'গাজা নিয়ে ইসরায়েলকে দায়ী করার বিষয়টা কিন্তু ঘটনার পরের ঘটনা। মূল ঘটনা হলো, গাজার এই পরিণতির জন্য হামাসের কট্টর-প্রতিক্রিয়াশীল-একরোখা রাজনীতিই দায়ী।'
তার পোস্ট মুহূর্তেই স্ক্রিনশট নিয়ে নেন শিক্ষার্থীরা। পরে যার যার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে তার পোস্ট করে প্রতিবাদ জানান তারা। শিক্ষার্থীরা এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে অধ্যাপক মেহেরুন নেছাকে ডিপার্টমেন্ট থেকে বয়কট করার ঘোষণা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন। পরে ওই পোস্ট ডিলিট করে দিয়ে ফেসবুক প্রোফাইল লক করে দেন ওই অধ্যাপক।
সোমবার ( ৭ এপ্রিল) ক্ষমাপ্রার্থনা করে ফের আরেকটি পোস্ট করেন অধ্যাপক মেহেরুন নেছা।
ওই পোস্টে মেহেরুন নেছা লিখেন, “গতকাল ফিলিস্তিন নিয়ে আমার টাইমলাইনে একটি স্ট্যাটাস শেয়ার করেছিলাম। সে স্ট্যাটাসটি হয়তো আমি যা বলতে চেয়েছি, তা আমার অক্ষমতার কারণে অন্যভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। সেজন্য আমি বিনীতভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষের এই রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতি আমি নিতে পারিনি । আমি একজন মুসলিম নারী এবং এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা অটুট। ব্যক্তিগতভাবে, আমি নারীর পোশাক পরিধানের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল । বোরকা বা হিজাবের প্রতি কোনো বিদ্বেষ পোষণ করি না। অতীতে, কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে পর্দা সংক্রান্ত কিছু স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, যা ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত করতে পারে- সেজন্য আমি গভীরভাবে অনুতপ্ত। আমার শিক্ষার্থীরা আমার সন্তানতুল্য। সবসময় আমি তাদের মঙ্গল কামনা করেছি এবং আমৃত্যু তা করে যাবো। আমার অতীতের অসচেতন কোনো কাজে যদি কেউ দুঃখ পেয়েছেন, আমি তার জন্যও ক্ষমাপ্রার্থী। আমি চাই না আমাদের আর কোনো ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ থাকুক।”
এ বিষয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ম্যাডামের বক্তব্যগুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এর আগেও তিনি হিজাব নিয়ে কটাক্ষ করে মন্তব্য করেছেন । আমরা এসবের তীব্র নিন্দা জানাই। অতি দ্রুত ম্যাডামকে বিভাগ থেকে বাদ দিতে হবে। আমরা তাকে বয়কট করলাম। তাকে অপসারণ না করলে আমরা ক্লাসে ফিরব না।
এ বিষয়ে জানতে অধ্যাপক মেহেরুন নেছার মোবাইলে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তার মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
কলেজের অধ্যক্ষ আবুল বাশার ভূইয়া বলেন, বিষয়টি অবগত আছি। ঘটনাটি তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com