ফারুক মেহেদীঃ দিন তারিখ ঠিক মনে নেই। ছেলেবেলার কথা। সম্ভবত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ি। একটি পারিবারিক কোন্দল মিটমাটে এগিয়ে এসেছেন এক সুদর্শন এডভোকেট। দেখায় এবং শারিরীক উচ্চতায় অনেককে ছাড়িয়ে। তখন সিনেমায় আমরা যাদেরকে নায়ক হিসেবে চিনতাম-জানতাম; ভাবতাম তারা সব পারেন! কী মারপিট, কী মানবিকতা, পড়ালেখা সব কিছুতেই ওরা সেরা। তাই তারা নায়ক।
তখন ওই তরুন এডভোকেটকে দেখে নায়কের মতই মনে হত। সবাই বলতো তিনি কুমিল্লার সেরা আইনজীবী। সুন্দর বক্তৃতা দেন, গরীবের পক্ষে কাজ করেন। আবার রাজনীতিও করেন। তখন রাজনীতি খুব একটা বুঝিনা। এরপর বেশ খানিকটা সময় কেটে যায়। একদিন বাড়ির দেয়ালে দেয়ালে তার সুন্দর ছবিওয়ালা পোস্টার চোখে পড়ে। নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। মার্কা নৌকা। নায়কের নাম এডভোকেট আবদুল মতিন খসরু। আমরা স্কুলে পড়া ছেলেরা দলবেধে তার মার্কা নিয়ে অকারণেই মিছিল করতে থাকি! স্কুল ফেলে বড়দের সাথে তার ক্যাম্পেইন করতে এ গ্রাম ও গ্রামে ঘুরতে থাকি। আমাদের ছেলেবেলার কিশোর মনে তিনিই তখন আমাদের স্বপ্নের নায়ক!
ওই এডভোকেট আবদুল মতিন খসরু এরপর শুধুই এগিয়ে গেছেন। অন্যরা যখন হাঁটছে, তিনি তখন দৌড়াচ্ছেন। কী পেশাগত জীবন, কী রাজনৈতিক জীবন…সব কিছুতেই তার পথচলা কেবলই সাফল্যের। তার অদম্য রাজনৈতিক আকাংখা তাকে পৌছে দিয়েছে স্বপ্নের কাছাকাছি। একে একে চারবারের সংসদ সদস্য, সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী, আইন মন্ত্রনালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সংসদের স্পিকার প্যানেলের সদস্য, আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক, সরকারি-বেসরকারি বহু কমিটির সদস্যসহ দেশে ও দেশের বাইরে বহু রাষ্ট্রীয় সভা, সেমিনার, কনফারেন্সের রিসোর্স পার্সন হিসেবে ক্যারিয়ারকে সমৃদ্ধ করেছেন মতিন খসরু। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন নতুন উচ্চতায়। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হিসেবে দলটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য হওয়ার অনন্য কৃতিত্ব অর্জন করেছেন তিনি।
মাত্র কদিন আগে দেশসেরা এই নেতার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় ষোলনল ইউনিয়নের সফল চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগ নেতা বিল্লাল হোসেনসহ আমরা কয়েকজন লাশের বহরের সাথে। গন্তব্য এমপি সাহেবের গ্রামের বাড়ি ব্রাক্ষণপাড়ার মিরপুরে। দিনভর ছিলাম সেখানে। সদ্য মা হারা মতিন খসরু যেন অসহায়! বাড়ির সামনে আমগাছ তলায় মুখোমুখি আমরা। নিরব-নিস্তব্দ তিনি। চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। গ্রামের সাধারণ মানুষ তাকে সমবেদনা জানাচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানালেন…খুব সাধারণ পরিবারে জন্ম এডভোকেট মতিন খসরুর। বাবা-মার সৎ, সাধারণ জীবনযাপনই মতিন খসরুর মত একজন অসাধারন মানুষের জন্ম দিয়েছে। জানলাম, তার মা অত্যন্ত পরহেজগার মহিয়সী নারী ছিলেন। যার প্রভাব আছে তার সন্তান মতিন খসরুর জীবনের প্রতিটি কর্মকান্ডে। মায়ের সহজ-সরল জীবনবোধই তাকে অসাধারন মানুষ, অতিমানবিক রাজনৈতিক নেতা হওয়ায় সহায়ক হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
গণমাধ্যমে কাজ করি। দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী, এমপিসহ ভিআইপিদের খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। তবে এডভোকেট মতিন খসরু অন্য নেতাদের থেকে আলাদা। মেধা, যোগ্যতা, সততা, মানবিকতা, সরলতায় তিনি অনেকের চেয়ে এগিয়ে। আর এ কারণেই তিনি নেতৃত্বেও এগিয়ে। তাকে যে আওয়ামী লীগের মত একটি বড় দলের অন্যতম শীর্ষ পদে পদোন্নতি দিলেন প্রধানমন্ত্রী, এর পেছনের কারণ তার অসাধারন নেতৃত্বগুণ, সৎ জীবনযাপন ও অনন্য সাধারন ব্যক্তিত্ব। এর মধ্য দিয়ে বুড়িচং-ব্রাক্ষণপাড়াবাসী তথা পুরো কুমিল্লা নতুন উচ্চতায় স্থান করে নিলো। সম্ভবত জাতীয় কোন রাজনৈতিক দলের অন্যতম শীর্ষ পদে এবারই প্রথম যেখানে বুড়িচং-ব্রাক্ষণপাড়ার মত অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া জনপদের কেউ নেতৃত্বে এলেন।
অনেকে বলছেন, বুড়িচং-ব্রাক্ষণপাড়ার জীবন্ত কিংবদন্তী এডভোকেট আবদুল মতিন খসরু। যিনি বলা যায়, প্রত্যন্ত জনপদ থেকে, সাধারন একজন এডভোকেট থেকে সততা, কর্মদক্ষতা, পরিশ্রম দিয়ে ধীরে ধীরে শীর্ষে উঠে এসেছেন। এখানে কোন শর্টকাট রাস্তা ছিল না। তিনি কোনো কৌশলও নেননি। তার কৌশল মানুষের কাছাকাছি থাকা। তাদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা। আমরা দেখি, শত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি প্রতিসপ্তাহে নিজ নির্বাচনী এলাকা বুড়িচং-ব্রাক্ষণপাড়ায় অবস্থান করেন। শুক্র ও শনিবার তিনি এলাকার সাধারণ মানুষের সাথে কাটান। এটা রীতিতে পরিনত করেছেন তিনি। এর কোন ব্যত্যয় ঘটেনা।
কুমিল্লা গেলে প্রায়ই বুড়িচং উপজেলার যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ষোলনল ইউপির জনপ্রিয় চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেনের সাথে গল্প করার সুযোগ হয়। তখন এলাকার রাজনীতি ও অন্যান্য বিষয় জানার চেষ্টা করি। তিনি জানান, তার নেতা আবদুল মতিন খসরুর এক ধরনের সম্মোহনী ক্ষমতা আছে! অর্থাৎ নেতা যদি তাদের কিছু করতে বলেন, জানপ্রাণ দিয়ে তা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, খসরু ভাই এমন নেতা, যিনি কারও গালি খেয়েও চুপ করে থাকেন। উল্টো তার মঙ্গল কামনা করেন! এমনকি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের কেউ তার বদনাম করলে বা মিথ্যা অপবাদ দিলেও তা ফিরিয়ে তিনি মন্দ কিছু বলেন না। রাজনীতির সুযোগ নিয়ে কারও ক্ষতি করার কথা অন্তত মতিন খসরুর কাছ থেকে কেউ শুনেননি। বলেন, এমন নেতা পাওয়া গর্বের বিষয়! বুড়িচং-ব্রাক্ষণপাড়ার নাগরিক হিসেবে ধন্য যে সেখানকার নেতা আবদুল মতিন খসরু। একবার তিনি দেশের আইনমন্ত্রী হয়ে, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করতে ইন্ডেমনিটি বিল সংসদে উত্থাপন করে ইতিহাসের অংশ হয়ে আমাদের এলাকাকে সম্মানীত করেছেন, আর এবার আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়ে আমাদের সবাইকে ইতিহাসের অংশ করলেন। দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, এমন নেতার জন্য যেকোন সময় জীবন দিতেও কার্পণ্য করবো না! সত্যি স্থানীয় নেতারা এভাবেই তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন মতিন খসরু সম্পর্কে।
এখন আমরা আসলে কী রাজনীতি দেখি? মোটাদাগে এখন রাজনীতি মানে সরকারি সম্পদ লুটপাট, ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করা, পদপদবি পাওয়া, আত্মীয়-স্বজনদের ক্ষমতার সুবিধা পাইয়ে দেয়া ইত্যাদি। সাধারন মানুষের জীবনমান উন্নয়নের রাজনীতি, তাদের স্বার্থ দেখা, তাদের পক্ষে কথা বলার রাজনীতি এখন অনেকটাই দুর্লভ। সেদিক থেকে মতিন খসরু ব্যতিক্রম। তাকেই দেখছি, রিলিফের চাল, কাবিখার টাকা, রাস্তাঘাট-সড়ক মেরামতের টাকা মারার ব্যপারে একেবারেই নির্লিপ্ত! দেশের সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের একজন সিনিয়র ও সফল আইনজীবী হিসেবে তিনি সৎ ভাবেই ভালো আয় করেন। তাই সরকারি সম্পদ মারার কোনো প্রয়োজন বা আগ্রহ কখনও চোখে পড়েনি। এর উল্টোচিত্রও আছে বুড়িচং-ব্রাক্ষণপাড়ায়। সেখানে এখন আমরা অনেককেই স্বার্থের রাজনীতি করতে দেখি। এর মধ্যে আবার মৌসুমী রাজনীতিবিদও আছেন। স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাদের কেউ আবার পেশি ও অর্থবিত্ত বাড়াচ্ছেন। তার ছায়ায় থেকে, তার ক্ষমতা ব্যবহার করে কেউ কেউ জায়গা দখলের চেষ্টা করছেন! যে যেভাবে পারছেন করছেন। অনেককে দেখা যায়, ভুলিয়ে ভালিয়ে, কাছে ঘেষে কথার যাদুতে মতিন খসরুর আনুকল্য পাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সামনে তার প্রশংসা আর পেছনে তাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা, অপবাদ দেয়া, যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার মত লোকও আছেন তার কাছাকাছি। এমন তথাকথিত শিক্ষিত নেতাও আছেন যাদের মুখোশের আড়ালে অন্য মানুষের রুপ! তাদের কেউ কেউ আছেন সুযোগ পেলে যারা হয়ত তাকে ছুরি চালিয়ে দিতেও কার্পন্য করবেন না! তারা ভুলে যাচ্ছেন, মতিন খসরু হীনস্বার্থে রাজনীতি করেন না বলেই আজ সবাইকে ছাড়িয়ে তিনি! স্থুলচিন্তার কীটেরা যতোই ভাবেন যে, মতিন খসরুর মত নেতা হয়ে উঠছেন তারা; আসলে তা হাস্যকর ছাড়া কিছুই নয়।
এডভোকেট মতিন খসরু এখন আর নির্দিষ্ট সীমারেখার নেতা নন। তিনি শুধু বুড়িচং-ব্রাক্ষণপাড়ার নেতা নন, এমনকি তাকে শুধু কুমিল্লার আঞ্চলিকতার বৃত্তেও বেধে রাখা যাবে না। সব কিছু, সবাইকে ছাড়িয়ে তিনি অনেক উচুতে চলে গেছেন। যেখানে দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রী তাকে আস্থায় নিয়েছেন। যিনি তাকে সম্মানীত করেছেন ভালোবেসে, মেধা ও যোগ্যতার বিচার করে। যিনি এখন সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির সত্যিকার নায়ক। যাকে অনুসরণ করার, অনুকরণ করার সময় এসেছে! এখন নতুন করে বুড়িচং-ব্রাক্ষণপাড়ার রাজনৈতিক ইতিহাস লেখার সময় এসেছে; যেখানে মতিন খসরুর মত বিরল এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জন্ম হয়েছে। তবে, নেতা হিসেবে এখন যে স্বর্ণচূড়ায় উঠেছেন তিনি; সেখানে দায়িত্ব বেড়েছে কয়েকগুণ। সমাজ থেকে দারিদ্র্য, সন্ত্রাস, মাদক, অপসংস্কৃতি, অন্যায়-অনাচারসহ যাবতীয় অপরাধ নির্মূল করতে হবে। শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। সব শিশুকে শিক্ষার সুযোগ দিতে হবে। মানুষ আশা করে, তিনি হবেন সব অসহায় মানুষের আশ্রয়স্থল। নিজের মহানুভবতা ও সততাকে এমন জায়গায় নিয়ে যাবেন, যেখানে নতুন প্রজন্ম তাকে আদর্শ মেনে শত শত মতিন খসরু হওয়ার মিছিলে শামিল হবে। প্রিয় মতিন খসরু, আপনার নেতৃত্বের নতুন অভিযাত্রায় শত সহস্র অভিনন্দন ও শুভ কামনা।
ফারুক মেহেদী
লেখক-সাংবাদিক
বিজনেস এডিটর
চ্যানেল টোয়েন্টিফোর
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com