এবার জাতীয় পার্টির নিবন্ধন বাতিল দাবি

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। একইসঙ্গে জাতীয় পার্টিরও নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানিয়েছে দলটি। এজন্য আগামীকাল (সোমবার) নির্বাচন কমিশনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নিবন্ধন বাতিলে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে।
রোববার (১১ মে) গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়। পরে গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে লিখত বক্তব্য দেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন। এসময় আরও বক্তব্য দেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।
লিখিত বক্তব্যে রাশেদ খাঁন বলেন, গতকাল (শনিবার) ১০ মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আন্দোলনকারী বিপ্লবী ছাত্র-জনতাকেও শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। তবে চূড়ান্ত নিষিদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, গণঅধিকার পরিষদ শুরু থেকে গণহত্যার বিচার ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে তৎপর ভূমিকা পালন করে আসছে। এ লক্ষ্যে গত ৫ ফেব্রুয়ারি জেলায় জেলায় ডিসির মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ, গত ২২ মার্চে ঢাকায় গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালনসহ দেশব্যাপী নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করেছে গণঅধিকার পরিষদ। সর্বশেষ শুক্রবার (৯ মে) দুপুর ২টায় গণমিছিল এবং পল্টন মোড় অবরোধ করে কর্মসূচি পালন করেছে গণঅধিকার পরিষদ। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে গতকাল প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। গণঅধিকার পরিষদ মনে করে, গণহত্যার বিচার ও সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার না হলে এই গণঅভ্যুত্থান অপূর্ণ থেকে যাবে। তবে সরকারের এ সিদ্ধান্ত জাতীয় সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত হলে দেশবিদেশে আরও বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেত।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, যেহেতু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণঅভ্যুত্থানের সরকার। আন্দোলনের মাধ্যমে যেকোনো দাবি আদায় কিংবা রাস্তা অবরোধ, যমুনা বা সচিবালয় ঘেরাও ইত্যাদি সরকারের জন্য যেমন বিব্রতকর, ঠিক একইভাবে জনগণের ওপর সরকারের অনাস্থা প্রকাশ পায়। সুতরাং জনগণের সেন্টিমেন্ট বিবেচনায় আন্দোলন ছাড়াই সরকারকে যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান করছি।
রাশেদ খাঁন বলেন, ভুলে গেলে চলবে না, আবারও কেন ছাত্র-জনতা রাজপথে নামলো? গত ৮ মে রাত ৩টা ৫ মিনিটে সরকারের গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে ডামি রাষ্ট্রপতি, হত্যা মামলার আসামি আবদুল হামিদ দেশ ছেড়েছেন। এ ঘটনায় রাঘববোয়ালদের বাঁচাতে চারজন পুলিশের নিরপরাধ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। অনতিবিলম্বে তাদের বদলি আদেশ প্রত্যাহার করতে হবে। উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চরিত্র থেকে সরকারকে বের হয়ে আসতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতোমধ্যে বেশকিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম এসেছে। এক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ভূমিকা আমরা জানতে চাই। তার গাফলতি নাকি সহায়তা ছিল? যেটাই হোক না কেন তিনি এর দায় এড়াতে পারেন না। ডামি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশ ছাড়ার ঘটনায় আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করছি। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন ও দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
তিনি বলেন, শুধু আবদুল হামিদই নয়, ওবায়দুল কাদেরসহ ডামি এমপিরা কীভাবে পালালো? কেন এসব ঘটনায় সরকারের কোনো সুষ্ঠু তদন্ত নেই? এক্ষেত্রে সন্দেহ থেকে যায় আবদুল হামিদের মতো আওয়ামী লীগের ডামি এমপি-মন্ত্রীদের সেফ এক্সিট দিয়েছে কি না সরকার।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা তথ্য পেয়েছি উপদেষ্টাদের কেউ কেউ রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ ও ডামি এমপিদের পুনর্বাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। উপদেষ্টা পরিষদেই ঘাপটি মেরে আছে আওয়ামী দোসররা। সরকার এখন পর্যন্ত আওয়ামী সুবিধাভোগী, ডামি নির্বাচনে সহযোগিতাকারী ডিসি, এসপি, নির্বাচন কমিশনার ও সচিবদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বরং সরকার তাদের পুনর্বাসন করেছে। এমনকি ছাত্র-জনতার বুকে সরাসরি গুলি চালিয়ে হত্যা করা পুলিশ, র্যাব, বিজিবির সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। শুধু সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে হাসিনার ফ্যাসিবাদ তন্ত্র ধ্বংস করা যাবে না। হাসিনা পালিয়ে গেলেও পুরো ফ্যাসিবাদী কাঠামো বিদ্যমান রেখে দেশ চালাচ্ছে সরকার। এভাবে চলতে থাকলে এই বিপ্লব যেকোনো সময় নস্যাৎ হয়ে যেতে পারে।