সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে ৭টা ঘোড়া কিনবেন মনু মিয়া!

কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের ‘গোরখোদক’ মনু মিয়া। ৪৯ বছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে কবর খননের কাজ করে চলেছেন তিনি। দীর্ঘ এই সময়ে প্রায় ৩ হাজারের বেশি কবর খনন করেছেন কোনো প্রকার অর্থ বা উপহার না নিয়েই। কোনও গ্রামে মৃত্যুর খবর পেলেই নিজের লাল লাল রঙের ঘোড়া পৌঁছে যেতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, সেই বিশ্বস্ত সঙ্গী আর নেই।

মনু মিয়া বর্তমানে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আর তার অনুপস্থিতিতে দুষ্কৃতকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে ঘোড়াটিকে হত্যা করেছে। যেই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসংখ্য মানুষের হৃদয়ে দাগ কেটেছে।

হৃদয়বিদারক এই ঘটনার পরে মনু মিয়ার পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন অভিনেতা খায়রুল বাসার। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান, “মনু মিয়াকে আমি ঘোড়া কিনে দিতে চাই। আমার কবর খোঁড়ার আগ পর্যন্ত আল্লাহ যেন তাকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখেন।”

সেই সঙ্গে তিনি আহ্বান জানান, যদি কেউ মনু মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারেন, তাহলে চিরকৃতজ্ঞ থাকবেন। এরপরই মনু মিয়ার সঙ্গে ফোনকলে কথা বলেন খায়রুল বাসার। কথোপকথনে তিনি আশ্বস্ত করেন, খুব শিগগিরই হাসপাতালে তাকে দেখতে যাবেন।

এরপর সোমবার রাতেই হাসপাতালে মনু মিয়ার সঙ্গে দেখা করেন খায়রুল বাসার। তার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলাপে একটি ঘোড়া কিনে দেওয়ার প্রস্তাব জানান। কিন্তু মনু মিয়া সেই প্রস্তাবে রাজি হননি। বরং বলেছেন, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে প্রয়োজনে ৭টা ঘোড়া কিনবেন।

মনু মিয়ার সঙ্গে কথোপকথনের পর এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বিষয়টি তুলে ধরেছেন খায়রুল বাসার। যেখানে তিনি লিখেছেন, মনু চাচা দোয়া ছাড়া কিছু চান না আপনাদের কাছে। উনি আপনাদের জন্য দোয়া করেন আপনারা ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন।

এই অভিনেতা আরও লেখেন, মনু চাচা বললেন- ঘোড়ার জন্য তার কষ্ট নাই। কষ্ট নাই, কারা তার ঘোড়াকে হত্যা করেছে তা নিয়েও। মনু চাচা মনে করেন, তার ঘোড়ার সাথে যাত্রা এ পর্যন্তই রেখেছেন আল্লাহ। বললেন, ‘সে মারা গেছে তো চোখে দেখি নাই তাই কষ্ট যেটুক হবার তাও হচ্ছে না।’ আসলে আর কতটা অভিনয় করলে সন্তানের প্রতি মায়া আড়াল করতে পারবেন; মনু চাচা ভেবে পাচ্ছেন না!

‘‘আবার জিজ্ঞেস করলাম, বাড়ি ফিরে ওকে ছাড়া শূন্য শূন্য লাগবে না? বললেন, ১০ মণ খড় আর ১০ মন কুড়া কিনেছিলেন ওর জন্য। অল্প খাইয়ে ঢাকায় এসেছিলেন চিকিৎসার জন্য। এই খড় কুড়া ওর রিজিকে থাকলো না, তার আগেই সে চলে গেলো! বাড়ি ফিরে এই খড় কুড়া দেখে কষ্ট হবে।’ বাড়ি ফিরে যে ঘোড়াটার জন্য কষ্ট হবে; এই ভেবেই মনু চাচার চোখ ভিজে উঠলো! আমি একটু থামলাম। ভাবলাম কত আর শক্ত থাকা যায়! মায়া তো মনু চাচার আছে।’’

খায়রুল বাসার বলেন, ‘মানুষের বাইক-সাইকেলের শখ থাকে। আমি যতটা বুঝলাম উনার শখ ছিলো হাতেম তাঈ হওয়া। মানুষের প্রয়োজনে ঘোড়ার পিঠে চড়ে মানুষের দুয়ারে পৌঁছে যাওয়া। উনি উনার সাধ্যের মধ্যে সবচেয়ে মহৎ কাজটিই করে গেছেন আজীবন। উনি সুস্থ হয়ে আবার উনার শখের কাজে ফিরতে চান দ্রুত। আপনাদের দোয়ায় নিশ্চয়ই আল্লাহ উনাকে দ্রুত সুস্থ করে তুলবেন।’

অভিনেতা লিখেছেন, ‘উনি কারো কাছে ঘোড়া চান না, দোয়া চান। উনার কারো প্রতি অভিযোগ-অনুযোগ নেই। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে প্রয়োজনে ৭টা ঘোড়া কিনতে পারবেন বলেছেন। যা হবার হয়ে গেছে, আল্লাহ যা নির্ধারণ করতে চান তাই হবে। উনি মনে করেন সবই নসিব।’

‘মনু মিয়ার ঘোড়া তার জীবন দিয়ে আমাদের সাথে এক নায়কের পরিচয় করিয়ে দিলো! আমাদের শেখা উচিত, এই সমাজের মানবিক আদর্শ, সম্মান এবং গর্ব আমাদের মনু মিয়া।’

আরো পড়ুন