কুমিল্লার বুড়িচংয়ে ঐতিহ্যবাহী ময়নামতি স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মোঃ শাহজাহান ভূইয়া কে প্রতিষ্ঠানটির দু'দফা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া ও মোঃ মজিবুর রহমান নামের এক প্রভাষককেও আর্থিক অনিয়ম সহ বিভিন্ন অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের সভাপতি, তদন্ত কমিটি ও বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, জেলার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়ন এর ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ ময়নামতি স্কুল এন্ড কলেজ। এই কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ শাহজাহান ভূইয়া উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে চলছেন। অথচ তার বিরুদ্ধেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ হলে, চলতি বছরের ৫ মার্চ উপজেলা সহকারী কমিশন( ভূমি) সোনিয়া হক কে আহবায়ক করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গত ৩ এপ্রিল ২০২৫ ইং বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাহিদা আক্তার অধ্যক্ষ মোঃ শাহজাহান ভূইয়ার বিগত সময়ের সমস্ত অনিয়ম তদন্ত পূর্বক গত ৩০ এপ্রিল ২৭৬ নং স্মারকে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি কে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতারণা পূর্বক ৩ লাখ ১৯ হাজার ১৪২ টাকা আত্মসাৎ এর বিষয় টি নিশ্চিত করেন। যা দন্ড বিধি ১৮১৬ এর ৪২০ ধারায় শাস্তি যোগ্য অপরাধ।
এছাড়াও অধ্যক্ষ শাহজাহান ভূইয়া প্রভিডেন্ট ফান্ড হতে বিভিন্ন সময়ে নিজ ক্ষমতা বলে প্রতারণা করে (ইসলামী ব্যাংক হিসাব নং ২৩৪৮৩০৫ হতে) বিধি বহির্ভূত ভাবে মে ২০২৩ ইং সন হতে অক্টোবর ২০২৪ ইং পর্যন্ত সময়ে ১ লক্ষ ১ হাজার ৩৮২ টাকা উত্তোলন করেন যা সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত। এ অবস্থায় নিম্ন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটির বিধি মালা ২০২৪ এর ৫৪ নং বিধি মোতাবেক তাকে সাময়িক ভাবে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়াও ২০২৩ইং সালে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাবেক জেলা পরিষদের সদস্য হাজী মোঃ তারিক হায়দার অধ্যক্ষ মোঃ শাহজাহান ভূইয়ার বিরুদ্ধে প্রায় ২৫ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পেলে তিনি তদন্ত পূর্বক সত্যতা পান বলে নিশ্চিত করেন। এ ঘটনায় অধ্যক্ষ মোঃ শাহজাহান ভূইয়া ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর একটি লিখিত অঙ্গিকার নামা সভাপতি বরাবর প্রদান করে ২৫ লক্ষ টাকা ফেরত দেয়া মর্মে।
অধ্যক্ষ শাহজাহান ভূইয়ার বিরুদ্ধে বিগত সময়ে ২৫ লক্ষ টাকা আত্মসাতের আরও একটি অভিযোগ ছিল। এসময় তিনি অভিযোগটি স্বীকার করে ময়নামতি সাহেবের বাজার রূপালী ব্যাংক শাখায় ২০২৩ ইং সালে ২৬ জুলাই ও ২৭ সেপ্টেম্বর ৮০ হাজার টাকা করে মোট ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ফেরত দেন।
এদিকে নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে জ্যৈষ্ঠতা না মেনে ৯ জন সিনিয়র প্রভাষক কে ডিঙ্গিয়ে প্রভাব খাটিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদে বসেন প্রভাষক মোঃ মজিবুর রহমান। তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদে থাকা কালিন সময় ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠে যা তদন্ত কমিটি সত্যতা পান। প্রভাষক মোঃ মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে বিগত সময়ে আরও অনিয়ম দুর্নীতির অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া যায়। ওই পদে বসে তিনি নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে অনুপস্থিত, ক্লাসে পাঠদান থেকে বিরত থাকা, অধ্যক্ষের সাথে বিরোধ, এলাকায় রাজনৈতিক, অনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিয়ম ভঙ্গ সহ পরিবেশ নষ্ট করে। অভিযোগে প্রভাষক মোঃ মজিবুর রহমান কে বরখাস্ত করা হয়। মজিবুর রহমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকা কালিন সময়ে আর্থিক অনিয়মে জড়িত থাকায় বিষয়টি জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেয় তদন্ত কমিটি।
এবিষয়ে বরখাস্ত কৃত প্রভাষক মোঃ মজিবুর রহমান এর নিকট জানাতে চাই তিনি বলেন মিটিংয়ে আছি দুই মিনিট পর রিং দিচ্ছি। এর পর তিনি আর কল ধরেননি বা ফোন ও দেন নি।
এ ব্যপারে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মোঃ শাহজাহান ভূইয়া বলেন, আমি কোন আর্থিক অনিয়ম বা দুর্নীতি করেনি। সভাপতি নিজে আমাকে টাকা দিয়েছে ওনার স্বাক্ষর আছে। আমার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। ২০২৩ সনেও আপনাকে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছে তখন আপনি একটি অঙ্গিকারনামা দিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা ফেরত দিয়েছেন ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। ওই সময় আমাকে জোড় করে স্বাক্ষর নিয়েছেন বাধ্য হয়ে সমঝোতার জন্য টাকা জমা করেছি। অপেক্ষা করেন আমি বিষয়টি নিয়ে আসব।
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com