১৯৭৫ সালের ২৫ জুন, ভারতের ইতিহাসে এক ভয়াবহ মোড় নেয়। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ঘোষণা করেন "জরুরি অবস্থা", যা প্রায় দু’বছর স্থায়ী ছিল। এই সময় বন্ধ হয়ে যায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, স্থগিত হয় নাগরিক অধিকার। কিন্তু সবচেয়ে ভয়ানক যে দিকটি সেই সময় সামনে আসে, তা হলো—জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ অভিযান, যেখানে লক্ষ লক্ষ পুরুষের ওপর বলপ্রয়োগ করে স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি (vasectomy) প্রয়োগ করা হয়।
আল জাজিরার বিশেষ প্রতিনিধি মেওয়াত থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সেই একাত্তরের এক গ্রাম ‘উত্তাওয়ার’-এর গল্প। হরিয়ানার মুসলিম-প্রধান এই গ্রামে আজও মানুষ কাঁদে সেই রাতে, যখন পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্মীরা হঠাৎ হানা দিয়েছিল। বৃদ্ধ দিনু খাঁন বলেন,
“আমরা কোনো অপরাধ করিনি, তবু শাস্তি পেলাম শুধু দরিদ্র আর মুসলমান হওয়ায়।”
সেই রাতে ৪০ জনের বেশি পুরুষকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় একটি অস্থায়ী স্বাস্থ্য ক্যাম্পে। অপারেশন করা হয় তাদের অনুমতি ছাড়াই। পরের দিন তারা ফিরে আসে ক্ষত-বিক্ষত শরীরে, আজীবন বন্ধ্যাত্ব নিয়ে। অনেকের স্ত্রীরা তাদের ছেড়ে গিয়েছেন, অনেকের ঘর আর গড়া হয়নি।
এই ঘটনাগুলো ঘটে এমন এক সময়, যখন স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট কোটা পূরণ করতে বাধ্য ছিলেন। রেশন, চাকরি, এমনকি ঘরের বৈধ কাগজের শর্ত হিসেবে দেওয়া হতো বন্ধ্যাকরণ। বিশ্বব্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহায়তায় এই কর্মসূচি আরও সক্রিয় হয়।
১৯৭৬ সালে এক বছরে ৬০ লক্ষের বেশি পুরুষকে এই অপারেশনের শিকার হতে হয়। বিষাক্ত পরিবেশ, তাড়াহুড়ো আর নিম্নমানের চিকিৎসার ফলে মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ২০০০ জনের।
১৯৭৭ সালের নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধী চরমভাবে পরাজিত হন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, উত্তর ভারতের মুসলিম ও নিম্নবিত্ত জনগোষ্ঠী এই ঘটনার জন্য কংগ্রেসের প্রতি তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল।
পঞ্চাশ বছর পর, উত্তাওয়ার গ্রামে আজও সেই ভয়াল রাতের কথা ভুলতে পারেন না কেউ। অনেকেই বলেন,
“আমাদের শরীর কেটে নিয়েছিল, স্বপ্নও কেটে নিয়েছিল।”
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com