গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর জুলাইয়ের আন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আসন্ন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার কয়েকদিন আগে বিবিসিকে দেওয়া ইমেইল সাক্ষাৎকারে তিনি এসব অভিযোগকে “রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সাজানো প্রহসন” বলে দাবি করেন।
আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে বিক্ষোভ দমনে শতাধিক হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী হিসেবে হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে—যা তিনি দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশত্যাগের পর এটিই ছিল বিবিসিকে দেওয়া তার প্রথম সাক্ষাৎকার।
হাসিনা বলেন, তার অনুপস্থিতিতে চলা বিচার একটি “ক্যাঙ্গারু কোর্টের সাজানো নাটক”, যার রায় “পূর্বনির্ধারিত”। রাষ্ট্রপক্ষ সোমবারের রায়ে তার মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে। রায়কে ঘিরে ঢাকার ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
এ রায় যেমন দেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ, তেমনি ছাত্রনেতৃত্বের আন্দোলনে নিহতদের পরিবারগুলোর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার তদন্তকারীরা বলছেন, ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টায় হাসিনা সরকারের সহিংসতায় প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হয়।
অভিযোগ রয়েছে—দেশত্যাগের আগের কয়েক সপ্তাহে তিনি নিজেই নিরাপত্তা বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। তবে হাসিনার বক্তব্য, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলেও “নিরস্ত্র বেসামরিকদের ওপর গুলি ছোড়ার নির্দেশ” তিনি কখনো দেননি।
এ বছরের শুরুতে ফাঁস হওয়া একটি অডিও ক্লিপের সত্যতা যাচাই করে বিবিসি জানায়—২০২৪ সালের জুলাইয়ে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের’ অনুমোদনের ইঙ্গিত সেখানে পাওয়া যায়। আদালতে সেই অডিওও বাজানো হয়েছে।
জুলাইয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন হয়। রাষ্ট্রপক্ষ পলাতক কামালের মৃত্যুদণ্ড চাইছে। অন্যদিকে দোষ স্বীকার করা আবদুল্লাহ আল-মামুনের সাজা এখনো নির্ধারিত হয়নি।
শেখ হাসিনার অভিযোগ, তিনি নিজের আইনজীবী নিয়োগ বা বক্তব্য উপস্থাপনার সুযোগ পাননি এবং বিরোধীরা আওয়ামী লীগকে “নিশ্চিহ্ন করতে” এসব মামলা দিয়েছে। তার আইনজীবীরা ইতোমধ্যে জাতিসংঘে জরুরি আপিল দাখিল করেছেন।
এদিকে আগামী ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণে আগেই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। হাসিনার শাসনামলে আরও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে, যেখানে তিনি মানবতাবিরোধী অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বাংলাদেশে গোপন কারাগারের সন্ধান মিলেছে, যেখানে বহু মানুষ কোনো আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া বন্দি ছিলেন—এমন অভিযোগও উঠেছে। অপহরণ, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়েও নিজের ‘অজ্ঞতা’ দাবি করেন হাসিনা।
তিনি বলেন, “ব্যক্তিগত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করছি। তবে কোনো কর্মকর্তার অপব্যবহারের প্রমাণ থাকলে তা যেন নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা হয়।”
দুর্নীতিসহ আরও বেশ কয়েকটি মামলায় হাসিনা ও তার সাবেক সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা বর্তমানে বিচারের মুখোমুখি, যা তারাও অস্বীকার করছেন।
সুত্র: বিবিসি
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com