মনোনয় দ্বন্দ্বে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন কুমিল্লা মহানগর এবং সদর আসনে বিএনপির নেতাকর্মীরা। গত বৃহস্পতিবার নগরীর কান্দিরপাড়ে দুটি সমাবেশেই এ বিভক্তির চিত্র ফুটে ওঠে। কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা, সদর দক্ষিণ উপজেলা, সিটি করপোরেশনের ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-৬ আসন। এ আসনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরীকে প্রার্থী করেছে। এখানে তিনি ছাড়াও মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন আমিনুর রশিদ ইয়াছিন, যিনিও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং দলটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে কুমিল্লা-১০ আসন (নাঙ্গলকোট, লালমাই ও সদর দক্ষিণ) থেকে নির্বাচন করেছিলেন মনিরুল হক চৌধুরী। আর কুমিল্লা-৬ থেকে ২০০৮ ও ২০১৮ সালে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন ইয়াছিন। তিনি গত ১৬ বছর দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করেন। যদিও সদর দক্ষিণ উপজেলাকে কুমিল্লা-৬ আসনে যুক্ত করায় এ আসন থেকে বিএনপি প্রার্থী করেছে মনিরুল হককে, যিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে কারাবরণ করেন। মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার পর থেকে ইয়াছিনের সমর্থকরা বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন।
বিজ্ঞাপন

দলীয় সূত্রে আরো জানা যায়, ইতোমধ্যে মনিরুল হককে সমর্থন জানিয়েছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম, মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারী আবু, সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক ফয়সাল রহমান পাভেল ও মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফাইয়াজ রশিদ প্রিমো ।

অন্যদিকে ইয়াসিনকে সমর্থন জানিয়ে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ করছেন কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু, আদর্শ সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল কাইয়ুম, সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম রায়হান, দক্ষিণ জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আনোয়ারুল হক, সদস্য সচিব ফরিদ উদ্দিন শিবলু, মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব রোমান হাসান, দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি কাজী জুবায়ের আলম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক ধীমান ও মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি নাহিদুজ্জামান রানা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লায় মূলত মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারী আবু এবং সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপুর নেতাকর্মীর সংখ্যা বেশি। এ দুজন ছাত্রদল, যুবদল করে মহানগরে বর্তমানে বিএনপির হাল ধরেছেন । গত ২০ নভেম্বর কুমিল্লার টাউন হলে দুপক্ষের সমাবেশ ঘিরে নগরীতে উত্তেজনা এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে । প্রশাসন নিরাপত্তার স্বার্থে টাউন হল ময়দানে কোনো পক্ষকেই সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। ফলে টাউন হলের বাইরে পূবালী চত্বরে সমাবেশ করেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মনিরুল হক। অন্যদিকে ৫০ গজ দূরত্বে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে দোয়ার আয়োজন করেন মনোনয়নবঞ্চিত ইয়াছিন । এতেই দলের মধ্যে বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ওই সমাবেশকে কেন্দ্র করে আগের দিনই কুমিল্লা নগরীর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। স্থানীয়রা আতঙ্কে দিন পার করেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দাবি, এই আসনে বিএনপি দুভাগে বিভক্ত হওয়ার কারণে সুবিধা পাবে জামায়াতে ইসলামী।

বিএনপির বিভক্তি নিয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম বলেন, চূড়ান্ত মনোনয়ন নিশ্চিত হলে সবাই একসঙ্গে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করবে । কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার ছয়টি আসনে ধানের শীষের প্রার্থী জয়ী হবে ।

মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু আমার দেশকে বলেন, দলীয় বিভক্তি নিয়ে এখনই কিছু বলতে চাইছি না। সময় আসুক তখন বলব । দলের প্রার্থী ঘোষণার পর মহানগর বিএনপি দুভাগ হয়ে গেছে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারী আবু এক নির্বাচনি সভায় বলেন, আমরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের লোক । আমরা কোনো ব্যক্তির লোক নই । তারেক রহমান কুমিল্লা-৬ আসনে যে প্রার্থী দিয়েছেন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে তাকে বিজয়ী করব । ধানের শীষ যার হাতে আমরা সবাই তার সাথে ।

বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত নেতা ইয়াছিন বলেন, আমি বিএনপি করি । এই দলটি গণতন্ত্রের পক্ষের দল । গত ২০ বছর রাজনীতি করেছি এই জনপদে ‌। এর মধ্যে গত ১৬ বছর জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াই করেছি । নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম, সুখে-দুঃখে ছিলাম। এ মুহূর্তে নেতাকর্মীরা বিশ্বাস করে আমি মনোনয়ন পাব । ২০০৮ এবং ২০১৮ সালে আমি এই আসনে নির্বাচন করেছি। এই সিটটা আমার ।

তিনি আরো বলেন, এখানে বাইরে থেকে লোক এনে দল মনোনয়ন দিয়েছে। আমার বিশ্বাস এখানে কিছু মিস কমিউনিকেশন হয়েছে । দল এখন এই আসন নিয়ে স্টাডি করতেছে। মেজরিটি লোক আমার কথা বলবে। আমি বিশ্বাস করি আমাকে প্রার্থী করা হবে।

দলীয় প্রচারে ইয়াছিনকে যুক্ত করা হবে কি না—এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির প্রার্থী মনিরুল হক বলেন, আমি চেষ্টা করতেছি সবাইকে একসাথে আনার । সবাইকে একসাথে আনার কাজটি করবে দল । দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাকারিয়া তাহের সুমন, বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া এবং কেন্দ্রের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে । আশা করি ফয়সালা হয়ে যাবে । মনোনয়নকে ঘিরে শহরে দুপক্ষের উত্তেজনা চলছে এ বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।