ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যার দুই বছর পূর্ণ হয়েছে মঙ্গলবার। দীর্ঘ দুই বছরেও তনুর খুনিরা শনাক্ত হয়নি, নেই মামলার উল্লেখযোগ্য কোনও অগ্রগতি। খুনি চিহ্নিত না হওয়ায় ক্ষুব্ধ তনুর পরিবার এবং কুমিল্লার বিশিষ্টজনরা। তনুর পরিবার সন্দেহভাজন আসামিদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানিয়েছেন।
তনুর পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে একটি বাসায় টিউশনি করতে গিয়ে আর বাসায় ফিরেনি তনু। পরে তার স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করে রাতে বাসার অদূরে সেনানিবাসের ভেতর একটি জঙ্গলে তনুর মরদেহ পায়। পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ ও ডিবি’র পর ২০১৬ সালের পয়লা এপ্রিল থেকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি কুমিল্লা। তনুর দুই দফা ময়নাতদন্তে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ফরেনসিক বিভাগ মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করেনি। শেষ ভরসা ছিল ডিএনএ রিপোর্ট। গত বছরের মে মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিনজন পুরুষের শুক্রানু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। পরে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ ম্যাচিং করার কথা থাকলেও তা করা হয়েছে কিনা এ নিয়েও সিআইডি বিস্তারিত কিছু বলছে না। সর্বশেষ সন্দেহভাজন হিসেবে তিন জনকে ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সিআইডির একটি দল ঢাকা সেনানিবাসে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদ করা ব্যক্তিরা তনুর মায়ের সন্দেহ করা আসামি বলেও সিআইডি জানায়। তবে তাদের নাম জানানো হয়নি।
এদিকে সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর ঢাকা সিআইডি কার্যালয়ে বাবা ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম, চাচাতো বোন লাইজু ও চাচাতো ভাই মিনহাজকে দিনভর পুরানো বিষয়গুলো জিজ্ঞেস করেন ঢাকা সিআইডির কর্মকর্তারা।
সুজন কুমিল্লার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মায়মুনা আক্তার রুবী বলেন,‘একটি প্রাণ উচ্ছ্বল মেয়েকে হত্যা করা হলো। দুই বছরেও কোনও আসামি শনাক্ত করা যায়নি। ভাবা যায়, আমরা কোন সমাজে বসবাস করছি!
গণজাগরণ মঞ্চ কুমিল্লার সংগঠক খায়রুল আনাম রায়হান জানান, একটি সুরক্ষিত স্থানে তনুকে হত্যা করা হয়েছে। দুই বছরেও অপরাধীদের শনাক্তে সিআইডি’র ব্যর্থতা প্রমাণ করে সাধারণ মানুষ কত অসহায়। তনু হত্যা মামলাটি দীর্ঘদিন সিআইডিতে পড়ে আছে, কিন্তু মামলার কোনও অগ্রগতি নেই। তনুর মা যাদের সন্দেহ করছেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ না করে, সিআইডি তনুর পরিবারকেই বার বার হয়রানি করছে। মানুষ ধৈর্য্য ধরে আছে, এক সময় মানুষের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যেতে পারে।
তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘সার্জেন্ট জাহিদ ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই হত্যাকারী কে জানা যাবে। কারণ সার্জেন্ট জাহিদের বাসায় টিউশনি করতে যাওয়ার পর জঙ্গলে তনুর মরদেহ পাওয়া যায়। মেয়ের শোকে তনুর বাবা অসুস্থ, হাঁটতে পারছেন না। তিনি বর্তমানে তিন মাসের ছুটিতে আছেন। তনুর জন্য মঙ্গলবার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের দুটি মসজিদে দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ বলেন,‘মামলার স্বার্থে আবারও অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অনেক কর্মকর্তা মিশনে ছিলেন, তারা আসছেন। দুই তিন মাসের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়া শেষ হবে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে খুব অল্প সময়ের মধ্যে রহস্য উদঘাটন করে অপরাধীদের শনাক্ত করা হবে বলে তিনি জানান।’
সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com