কুবি প্রতিনিধিঃ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ভাড়া করা 'বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্রোপরেশন" (বিআরটিসি) বাসের চাপায় গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার সকালে কুমিল্লার কোটবাড়ি এলাকার গন্ধামতি মোড়ে এ দূর্ঘটনা ঘটে। আহত শিক্ষার্থীকে কুমিল্লার একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করার পরামর্শ দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ক্যাম্পাসে আসার জন্য কোটবাড়ি এলাকার গন্ধামতি মোড়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন আইন বিভাগের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শিহাব উদ্দিন। বিআরটিসির ভাড়া করা বাস (ঢাকা মেট্রো ব:১১-৪৯৭৬) নিয়ে চালক মতিউর রহমান কোটবাড়ি এলাকার গন্ধামতি মোড়ে আসলে শিহাব হাত নাড়িয়ে বাসটি থামার জন্য বলেন, তবে চালক বিষয়টি ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে যায়। শিহাব দৌড়ে বাসে উঠতে চাইলেও চালক বাস থামায়নি। এ সময় শিহাব বাসের দরজা ধরে উঠতে চাইলে বাসের অতিরিক্ত গতির কারণে বাসের সাথে ধাক্কা লেগে রাস্তায় ছিটকে পড়েন। এরপরও চালক বাসটিকে না থামিয়ে তার উপর দিয়েই চালিয়ে নেয়। এতে তার পা থেতলে যায় এবং ডান হাতের হাড় ভেঙ্গে মাংস থেকে আলাদা হয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে আহত শিহাবকে তার সহপাঠীরা উদ্ধার করে কুমিল্লা নগরীর ‘কুমিল্লা টাওয়ার হাসপিটালে’ নিয়ে যান।
আইন বিভাগের সভাপতি রোকসানা আক্তার জানান, "শিহাবের ডান হাত ও দুই পা থেতলে যাওয়ায় এবং প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ হওয়ায় তার অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাকে বৃহস্পতিবার দুপুরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।"
ঘটনাটি ঘটার পর পরই বাসটির চালক মতিউর রহমান বাসটি নিয়ে সটকে পড়েছেন। এর আগেও বিআরটিসির একটি বাস ২০১৫তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে গুরুতর আহত করে। তখন দোষী চালকের কোন শাস্তি দেয়নি প্রশাসন। তখন ঐ চালকের শাস্তির দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলেও বরাবরের মত নিরবই থেকেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থী পরিবহনের জন্য ভাড়া করা বিআরটিসির বাসের চালকদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় ও বিআরটিসি প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
বেপরোয়াভাবে বাস চালানো ও নির্ধারিত রুটের বাইরে গিয়ে বাস চালানো নিয়ে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছিল। শিক্ষার্থীদের সাথে হরহামেশাই দূর্ব্যবহার করে বসেন বিআরটিসির এ চালকরা। বিআরটিসি যে চালকরা অন্যায় করেন এবং অনিয়মিত কাজ করেন তাদেরকে শাস্তি স্বরূপ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়ায় পাঠায় বলে এক সূত্রে জানা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ২০জন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বললে তারা এ প্রতিবেদককে জানান, শুধূ বিআরটিসি নয়। আমাদের নিজস্ব বাস চালক ও স্টাফরা নিয়মিতই শিক্ষার্থীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করছেন। বেপরোয়াভাবে গাড়িগুলো চালান। এ নিয়ে প্রশাসন কোন পদক্ষেপই নেয় না।
তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বাসের সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। শিক্ষার্থীরা এক বাসেই ঠাসাঠাসি করে ৮০ জনের অধিক চড়ে বসেন। যেখানে প্রতি বাসে ধারণ ক্ষমতা ৫০ জনের বেশি নয়। তবে বৃহস্পতিবার বিকালে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিআরটিসি ঐ চালকের বিরুদ্ধে কোন মামলার পদক্ষেপ নেয়নি বলে জানা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও পরিবহন কমিটির আহবায়ক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে আহত শিক্ষার্থীকে দ্রুত সর্বোচ্চ চিকিৎসা প্রদান করা। সেই সাথে দোষী চালকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com