কুমিল্লায় ভুয়া ভাউচারে শোক দিবসের বিল উত্তোলনের অভিযোগ ইউএনওর বিরুদ্ধে

কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বিভিন্ন দোকানের ভুয়া বিলের অর্থ মেমো দিয়ে টাকা উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন কিছু প্রতিষ্ঠানের বিলের ভাউচার ব্যবহার করা হয়েছে, যারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কয়েক বছর আগেই বন্ধ করে দিয়েছেন। কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যাদের কাছ থেকে কোনো মালপত্র ক্রয় না করলেও সেই প্রতিষ্ঠানের ক্যাশ মেমো ব্যবহার করে টাকা উত্তোলন করা হয়। এ বিষয়টি জানাজানি হলে সুশীল সমাজের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেঘনা উপজেলায় ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসব অনুষ্ঠানে জন্য ৮০ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়। এসব বিলের মধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথিদের আপ্যায়ন, ডেকোরেটর ভাড়া, সাউন্ড সিস্টেম, উপহারসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় দেখানো হয়। জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে সাউন্ড সিস্টেমের জন্য পাঁচ হাজার, ডেকোরেটরের মালপত্রের ভাড়া বাবদ সাত হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়েছে।

কিন্তু সজীব ভূঁইয়া ডেকোরেটর নামের যে প্রতিষ্ঠানের বিল-ভাউচার দেখানো হয়েছে, এ প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে গেছে গত পাঁচ-ছয় বছর আগে। নাশতা বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে চার হাজার, ১৬ হাজার টাকাসহ মোট ২০ হাজার টাকা হলেও যে হোটেল থেকে খাবার কেনা হয়েছে, মেমোতে উল্লেখ করা হয়েছে এ হোটেল থেকে কোনো খাবার সেদিন সরবরাহ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন হোটেল মালিক।

মেমোতে টাকার পরিমাণ লেখা থাকলেও কত জন ও কী নাশতা সরবরাহ করা হয়েছে, তা উল্লেখ নেই। ১০ জন অসচ্ছল সংস্কৃতিসেবীর নগদ আড়াই হাজার টাকা করে পঁচিশ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়। এ অনুষ্ঠানে তাদের চার হাজার টাকার নাশতা খাওয়ানো হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। অসচ্ছল সংস্কৃতিসেবী অনেকে অভিযোগ করেছেন, তাদের কোনো নাশতা দেওয়া হয়নি।

হোটেল অবিরাম-এর মালিক বাহার আলী জানান, ১৫ আগস্ট তার হোটেল থেকে কোনো খাবার সরবরাহ করা হয়নি উপজেলা পরিষদে। হোটেলের মেমো ব্যবহার করে বিল করে থাকেন, এটা আমার জানা নেই।

সজীব ভূঁইয়া ডেকোরেটরের সজীব ভূঁইয়া জানান, গত চার বছর বিদেশ ছিলাম। এর কয় বছর আগে আমার বাবা এ ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন এ ব্যবসা করি না। তাই আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে মাল ভাড়া দেওয়ার তো কোনো সুযোগ নেই। আমাদের দোকানের বিলের পাতা ব্যবহার করে তারা এ বিল উত্তোলন করেছে, এটা সঠিক হয়নি।

অসচ্ছল সংস্কৃতিসেবী হেলেনা আক্তার জানান, ১৫ আগস্ট আমাদের ১০ অসচ্ছল সংস্কৃতিসেবীকে আড়াই হাজার টাকা করে নগদ টাকা দেওয়া হয়। এখানে আমাদের কোনো খাবার দেওয়া হয়নি।

মেঘনা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম জানান, সরকারি অফিসের যেসব বিল দেওয়া হয়, তার মেমো যাচাই-বাছাই করি। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসের বিল সচরাচর আমরা যাচাই-বাছাই করি না। এ কারণে হয়তো আগের বিল-ভাউচার ব্যবহার করে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

ইউএনও প্রবীর কুমার রায় জানান, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে যে টাকা বরাদ্দ এসেছে, তা খুবই কম। আমরা নিজেরা রান্না করে খাবার পরিবেশন করেছি। যেহেতু মেমো ব্যবহার করতে হয় বিল করার জন্য, তাই এ হোটেলের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। যে ডেকোরেটরের মেমো ব্যবহার করা হয়েছে, তা বন্ধ এটা আমার জানা নেই। প্রয়োজনে মেমো পরিবর্তন করে দেওয়া হবে।

সূত্রঃ সমকাল

আরো পড়ুন